যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত ছাত্র সুমন নস্কর এবং তাঁর বাবা জগদীশ নস্কর (বাঁ দিক থেকে)। —নিজস্ব চিত্র।
পড়াশোনার সূত্রে কলেজজীবন থেকেই বাইরে থাকতেন সুমন নস্কর। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি থানার আট মসিপুরে। হটুগঞ্জ হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ভবিচ্ছেদ কলেজে দর্শনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। তার পর দর্শনশাস্ত্র নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে লেখাপড়া করতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বাড়ি এলেই ভাইবোনদের সঙ্গে আড্ডা মারেন, খুনসুটি করেন। সেই ছেলে কাউকে র্যাগিং করতে পারেন, এবং সে জন্য কারও মৃত্যু হতে পারে, এটা বিশ্বাসই করতে পারেন না যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত সুমন নস্করের বাবা জগদীশ। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের যৌথ পরিবার। বাড়িতে এতগুলো ছেলেমেয়ে। সবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক সুমনের। ভাইবোনকে কী ভালবাসে! সেই ছেলে র্যাগিং করতে পারে, এটা বিশ্বাস করি না।’’
সুমনের বাবা পেশায় গৃহশিক্ষক। দিদি মাধবপুর কলেজে অধ্যাপনা করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ছেলেকে বেশ কয়েক বছর ধরে মন্দিরবাজার থানার মাধবপুর এলাকায় ভাড়াবাড়িতে রেখেছিলেন জগদীশ। স্ত্রীর সঙ্গে জগদীশও সেখানে থাকেন। বুধবার সেই বাড়ি থেকেই কলকাতার পুলিশ সুমনকে গ্রেফতার করে। পরিবারের দাবি, ‘‘সুমনকে ফাঁসানো হয়েছে। এমন কাজে ও যুক্ত থাকতে পারে না।’’
পুলিশ যখন ছেলের খোঁজে বাড়িতে আসে, তখন নিজেই দরজা খুলে দিয়েছেন জগদীশ। তাঁর দাবি, পুলিশ জানিয়েছে সুমনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘পুলিশ এল। বাড়ির দরজা খুলতে বলল। আমি এবং আমার স্ত্রী দরজা খুলে দিলাম। আমাকে নাম জিজ্ঞেস করল পুলিশ। তার পর ছেলের নাম জিজ্ঞেস করে বলল, ‘সে কই?’ আমি দেখিয়ে দিলাম, ‘ও ঘরে আছে।” ঘটনার বিবরণ দিয়ে জগদীশ বলেন, ‘‘আমি ডাক দিলাম, ‘বাবু আয়, পুলিশ এসেছে।’ এর পরে ও এল। পুলিশ আধার কার্ড দেখল। আমি পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘স্যর, কিসের ভিত্তিতে আমার ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছেন?’ পুলিশ বলল, ‘দেখুন, বেশি কিছু নয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি দুর্ঘটনা হয়েছে। তার জন্য কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে যাচ্ছি। অ্যারেস্ট করছি না। সন্ধ্যার দিকে খোঁজ নেবেন। আপনার ফোন নম্বর দিন। আইনি কিছু পদক্ষেপ করলে আপনাকে জানানো হবে।’”
বুধবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে ওই ‘দুর্ঘটনা’র সময় সুমন কোথায় ছিলেন? এ ব্যাপারে কি বাড়িতে কিছু বলেছেন তিনি? এই প্রশ্নের জবাবে জগদীশ বলেন, ‘‘সে দিন হস্টেলে ছিল ছেলে। কিন্তু ঘটনার সময় ও ওখানে ছিল না। ওর একটা কোচিং ক্লাস ছিল।’’
উল্লেখ্য, যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় বুধবার মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে যাদবপুরকাণ্ডে মোট গ্রেফতারির সংখ্যা হয়েছে নয়। পুলিশ সূত্রে খবর, রাতভর অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করেন কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখার আধিকারিকেরা। বুধবারই ধৃতদেরকে আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে পাওয়ার চেষ্টা করবে পুলিশ।