Joynagar TMC leader dead

জয়নগরের তৃণমূল নেতা খুনে জড়িত বাড়ির লোকও? ‘অপারেশনের’ জন্য পাঁচ লাখ, দাবি পুলিশ সূত্রের

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আনিসুর রহমান লস্করকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধরা পড়েছেন কামালউদ্দিন ঢালি নামে আর এক অভিযুক্তও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জয়নগর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১২:২৫
জয়নগরের নিহত তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ ।

জয়নগরের নিহত তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ ।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আনিসুর রহমান লস্করকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধরা পড়েছেন কামালউদ্দিন ঢালি নামে আর এক অভিযুক্তও। পুলিশ সূত্রে দাবি, তৃণমূল নেতাকে গুলি করার দায়িত্ব গ্রেফতার হওয়া শাহরুল শেখ এবং গণপ্রহারে মৃত সাহাবুদ্দিনের উপর থাকলেও, খুনের গোটা পরিকল্পনা ছিল আনিসুরেরই। তাঁকে এবং শাহরুলকে জেরা করে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে এসেছে। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের এ-ও দাবি, সইফুদ্দিন খুনে তাঁর বাড়ির লোকও জড়িত রয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, খুনের জন্য দেওয়া হয়েছিল লক্ষাধিক টাকার সুপারি। যদিও এ ব্যাপারে পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত আনিসুর ও কামালউদ্দিনকে শুক্রবার বারুইপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ১২০বি, ৩৪ এবং অস্ত্র আইনের ২৫ এবং ২৭ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, আনিসুর ও কামালউদ্দিন ছাড়াও তৃণমূল নেতা খুনে আরও অনেকে জড়িত। অন্তত ১০-১২ জন। তাঁদের মধ্যে মাত্র তিন জন ধরা পড়েছেন। বাকিরা এখনও পলাতক। তাঁদের খোঁজে নানা জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পার্থ ঘোষের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়েছে। মোট ১১ জন পুলিশ অফিসার আছেন এই দলে।

গ্রেফতার হওয়ার পর শাহরুল নাসিরও ‘বড় ভাই’য়ের নাম করেছিলেন প্রকাশ্যে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘বড় ভাই’ হলেন আলাউদ্দিন সাপুই। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের মত, সাহাবুদ্দিন ও শাহারুলকে খুনের বরাত দিয়েছিল নাসির এবং ‘বড় ভাই’। যদিও ‘বড় ভাই’ সম্পর্কে এখন তাঁদের কাছে কোনও তথ্য নেই বলেই প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন পুলিশকর্তারা। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি বৃহস্পতিবার বলেছেন, “শাহারুল এ রকম কারও নাম আমাদের কাছে বলেনি।” তদন্তকারীদের ওই সূত্রই দাবি করছে, পুরো অপারেশনের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়েছিল। অপারেশন পরিকল্পনামাফিকই হয়েছে। যাঁরা গোটা পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের মধ্যে এক জন সইফুদ্দিনের বাড়ির লোক।

সোমবার ভোরে বাড়ির কাছেই মসজিদে নমাজ পড়তে যাওয়ার সময় খুন হন সইফুদ্দিন। পালানোর পথে জনতার হাতে ধরা পড়ে যান দু’জন। এক জনের মৃত্যু হয় গণপ্রহারে। শাহারুল শেখ নামে অন্য জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনার পরে নিকটবর্তী দলুয়াখাকি গ্রামে আনিসুর-সহ সিপিএমের কিছু কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সইফুদ্দিনের পরিবারের তরফে আনিসুরের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি জানান, আনিসুর এবং কামালউদ্দিন খুনে জড়িত ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। কামালউদ্দিনও দলুয়াখাকি গ্রামেরই বাসিন্দা।

পুলিশ সূত্রে খবর, তৃণমূল নেতা খুন হওয়ার পরেই পালিয়েছিলেন আনিসুর। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে গত তিন দিনে একাধিক জায়গায় ঘুরেছেন আনিসুর এবং কামালউদ্দিন। ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, ঘটনার পরে বাসন্তীর দিকে পালিয়েছিলেন তাঁরা। সেখান থেকে যান গোসাবা ও সন্দেশখালি। তদন্তে জানা গিয়েছে, মাঝনদীতে নৌকায় রাত পর্যন্ত কাটিয়েছেন দু’জন। তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল, নদিয়া হয়ে মুর্শিদাবাদ পালানো। বৃহস্পতিবার গাড়ি ভাড়া করে সেই দিকেই যাচ্ছিলেন তাঁরা। রানাঘাট পুলিশের সহায়তায় বারুইপুর পুলিশ জেলার দল দু’জনকে ধরে ফেলে। গাড়ির চালক-সহ আরও কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে কী কারণে খুন, কী ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কী প্রমাণের ভিত্তিতে আনিসুরকে গ্রেফতার করা হল— সে সব নিয়ে মুখ খোলেনি পুলিশ। নেপথ্যে আরও কোনও মস্তিষ্ক কাজ করেছে কি না, সেই সম্পর্কেও কিছু জানাতে চায়নি তারা।

কেন সইফুদ্দিনকে মারার পরিকল্পনা করা হল? তৃণমূলের একাংশের দাবি, রাজনৈতিক ভাবে এঁটে উঠতে না পেরে সিপিএমের লোকজনই আনিসুরকে দিয়ে খুন করিয়েছে। জয়নগরের তৃণমূল বিধায়ক বিভাস সর্দারের দাবি, “এই খুনের পিছনে বড় মাথা রয়েছে।” সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “ধৃত এক জন তৃণমূলের দুই দুষ্কৃতীর নাম বলল। অথচ, পুলিশ তাদের ধরল না। গণপিটুনি এবং ভাঙচুরে তৃণমূলের লোকজন যুক্ত। তারাও পার পেয়ে গেল!’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এক জনকে ধরে সিপিএমের লোক বলে প্রচার করা হচ্ছে। হতে পারে সে আমাদের সমর্থক। কিন্তু পুরোটাই তৃণমূলের চিত্রনাট্য মেনে কাজ করছে পুলিশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement