Sandeshkhali Incident

বিকেল সওয়া ৪টের মধ্যে সিবিআইয়ের হাতে দিতে হবে শাহজাহানকে, জানিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্ট

মঙ্গলবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ ছিল ধৃত শাহজাহানকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার। সময় বেঁধে দেওয়া হয় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৪ ১৫:০১
Shahjahan Sheikh

শাহজাহান শেখ। —ফাইল চিত্র।

বিকেল সওয়া ৪টের মধ্যে সন্দেশখালিকাণ্ডে ধৃত শাহজাহান শেখকে সিবিআইয়ের হাতে হস্তান্তর করতে হবে সিআইডিকে। ইডির মামলার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নির্দেশ বহাল রেখে এই নির্দেশ দিল বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ।

Advertisement

মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতে মামলা করা পর্যন্ত সময় চেয়েছিল রাজ্য। সেই আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে বুধবার। আদালত জানায় যেখানে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেখানে ওই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশের কোনও কারণ নেই। দ্রুত প্রধান বিচারপতি বেঞ্চের নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়। এবং সেই সময় বেঁধে দেওয়া হয় বুধবার সকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে। অন্য দিকে, ওই নির্দেশের অব্যবহিত পরেই শাহজাহানকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য ভবানী ভবনে পৌঁছে যায় সিবিআই।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সাড়ে ৪টের মধ্যে শাহজাহানকে সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার শাহজাহানকে নিজেদের হাতে পায়নি সিবিআই। বুধবার সওয়া ৪টের মধ্যে সেই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে বলে জানিয়ে দিল হাই কোর্ট। আদালত প্রথমে সাড়ে ৪টের মধ্যে হস্তান্তরের কথা জানিয়েছিল। কিন্তু সিবিআই আদালতের কাছে আবেদন করে যে, সময়সীমা আরও ১৫ মিনিট এগিয়ে নিয়ে আসা হোক। বুধবারও যদি শাহজাহানকে নিজেদের হেফাজতে না পায় সিবিআই, সে ক্ষেত্রে সাড়ে ৪টের মধ্যে তারা আবার আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে। সিবিআইয়ের সেই আবেদন মেনে নিয়ে শাহজাহানকে হস্তান্তরের সময়সীমা ১৫ মিনিট এগিয়ে এনে বিকেল সওয়া ৪টে করে দেয়। আদালত মন্তব্য করে, ‘‘সিবিআইয়ের হাতে শেখ শাহজাহানকে হস্তান্তর না করে রাজ্যের লুকোচুরির আচরণ আদতে অভিযুক্তকে আড়াল করার চেষ্টা। যেখানে গোটা তদন্ত সিবিআই করবে, সেখানে শাহজাহানকে হস্তান্তর না করা রাজ্যের সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। শীর্ষ আদালতে আর্জি জানিয়ে দিলে হাই কোর্টের নির্দেশেও স্থগিতাদেশ হয়ে যায় না।’’ পাশাপাশি, কেন আদালত অবমাননার ‘প্রয়োজন হল’, এ নিয়ে রাজ্যকে প্রশ্ন করেন বিচারপতি ট্যান্ডন।

আদালতের নির্দেশ মেনে সন্দেশখালিকাণ্ডে ধৃত শাহজাহান শেখকে নিজেদের হেফাজতে নিতে গিয়েও পায়নি সিবিআই। তাই আদালত অবমাননার অভিযোগ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় ইডি। ইডির তরফে আইনজীবী বিরাজ ত্রিবেদী বুধবার আদালতে বলেন, ‘‘আপনারা বলেছিলেন মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টের মধ্যে শাহজাহান শেখকে সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু রাজ্য পুলিশ সেই নির্দেশ মানেনি।’’

বস্তুত, সন্দেশখালি নিয়ে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য। মঙ্গলবার জরুরি ভিত্তিতে ওই মামলার শুনানির আর্জি জানানো হলেও শীর্ষ আদালত তাতে সাড়া দেয়নি। বুধবার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, সংশ্লিষ্ট আবেদন শুনতে পারে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। তাই প্রয়োজনে রাজ্য সেখানে আবেদন করুক। আপাতত হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত। হাই কোর্টের বিচারপতি ট্যান্ডন জানান, সুপ্রিম কোর্ট জরুরি ভিত্তিতে শুনানি করতে রাজি হয়নি। কেন্দ্র এবং রাজ্যের আইনজীবীদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী।

হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ ছিল ধৃত শাহজাহানকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার। সময় বেঁধে দেওয়া হয় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। একই সঙ্গে গত ৫ জানুয়ারি ইডির আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের জন্য একক বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা-ও খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। বিকেলেই শাহজাহানকে হেফাজতে নিতে ভবানী ভবনে পৌঁছে যান সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা। তদন্তের কাগজপত্রও তাঁদের হাতে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শাহজাহানকে না-নিয়েই ভবানী ভবন ছাড়তে হয় তাঁদের। সিআইডি যুক্তি দেয় যে হেতু রাজ্য সরকার হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছে, তাই মামলাটি বিচারাধীন।

বুধবার এই মামলায় রাজ্যের তরফে এজি কিশোর দত্ত জানান, সবটাই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে ‘ফাইল’ হয়ে আছে মামলা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ইডির এত তাড়া কিসের? তাদের মামলায় তো গ্রেফতার হয়নি অভিযুক্ত।’’

গত ৫ জানুয়ারি রেশন মামলার তদন্তে সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় শাহজাহানের বাড়িতে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়তে হয় ইডি আধিকারিকদের। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় তিন ইডি আধিকারিককে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের কাছ থেকে ফোন, ল্যাপটপ এবং নগদ টাকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পর ন্যাজাট থানার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করে। পরে ইডিও একটি অভিযোগ জানায় ওই থানায়। অন্য দিকে, শাহজাহানের বাড়ির কেয়ারটেকার ইডির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করে। এর মধ্যে ইডির দায়ের করা মামলা এবং পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে দায়ের করা মামলার মধ্যে পরস্পরবিরোধিতা পায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ। নির্দেশ দেওয়া হয় সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশ যৌথ ভাবে সিট গঠন করে এই মামলার তদন্ত করবে। কিন্তু সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় ইডি। রাজ্যও ওই নির্দেশের বিরোধিতা করে মামলা করে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সিট গঠন এবং তদন্তের উপর স্থগিতাদেশ দেয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ঘটনাক্রমে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মিনাখা থেকে শাহজাহানকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। তার অব্যবহিত পর শাহজাহানকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল। এখন শাহজাহানের ঠিকানা ভবানী ভবন।

আরও পড়ুন
Advertisement