CPM Kolkata

‘ক্লাস স্ট্রাগল’ থেকে কি ‘গ্লাস স্ট্রাগলে’ সিপিএম? যুব নেতৃত্ব নির্বাচন ঘিরে তোপের মুখে ক্যাল ডিসি, আঁচ আলিমুদ্দিনেও

কয়েক বছর আগে সংশ্লিষ্ট তরুণ নেতারই একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। যা নিয়ে তদন্ত কমিশনও গঠন হয়েছিল দলে। সিপিএম সূত্রে খবর, সেই কমিশনের রিপোর্ট দিনের আলোর মুখ দেখেনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ২০:০২
Controversy over selection of youth organization’s leadership within Kolkata district CPM

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কার্ল মার্ক্স বর্ণিত ‘ক্লাস স্ট্রাগল’-এর (শ্রেণিসংগ্রাম) কথা এখনও সিপিএম তাদের দস্তাবেজে লেখে। অনেকে মন থেকে বিশ্বাসও করেন সেই তত্ত্ব। অনেকে আবার বোঝার ভান করেন। সেই সিপিএম কি ‘ক্লাস স্ট্রাগল’ থেকে ‘গ্লাস স্ট্রাগল’-এ ঢুকে পড়ছে? যুব সংগঠনের কলকাতা জেলার (ক্যাল ডিসি) নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে ভিতরে-বাইরে এখন প্রশ্নের মুখে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবন (সিপিএমের কলকাতা জেলা দফতর)। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমাজমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তার আঁচ পৌঁছেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেও।

Advertisement

শনিবার থেকে শুরু হয় ডিওয়াইএফআইয়ের কলকাতা জেলা সম্মেলন। রাজ্য সম্পাদক হিসাবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। রবিবার সম্মেলন শেষে নতুন কমিটি এবং নেতৃত্ব নির্বাচন হয়েছে। জেলা সংগঠনের সর্বোচ্চ স্তরের দু’টি পদের একটিতে এমন এক নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাঁকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বলা ভাল, পুরনো বিতর্ক নতুন করে উস্কে গিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট নেতার বিরুদ্ধে বিতর্ক এবং অভিযোগ যে ছিল, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কল্লোল মজুমদারের কথাতেও। কল্লোল বলেন, ‘‘বছর চারেক আগে একটা অভিযোগ এসেছিল। তার পর পার্টিগত ভাবে ত্রুটি সংশোধন প্রক্রিয়া নেওয়া হয়।’’ কিন্তু একাধিক তরুণী এবং মহিলা তো সংশ্লিষ্ট নেতার বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে সরাসরি ‘হেনস্থা’ এবং ‘নির্যাতনের’ অভিযোগ করছেন! কল্লোলের জবাব, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ আনুষ্ঠানিক ভাবে আমাদের কাছে আসেনি। এলে নিশ্চয়ই দেখব।’’

ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা সমাজমাধ্যমে লিখেছেন একাধিক তরুণ-তরুণী। গত পুরসভা নির্বাচনে মধ্য কলকাতার একটি ওয়ার্ডে সিপিএমের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এক তরুণী একের পর এক পোস্ট করছেন ফেসবুকে। তাতে খোলাখুলি সমর্থন জানাচ্ছেন দলের ভিতরে থাকা অনেকে। যা কলকাতা জেলা সিপিএমের অস্বস্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

যে যুব নেতাকে নিয়ে বামমহলে এত শোরগোল, তাঁর বিরুদ্ধে মত্ত অবস্থায় বিভিন্ন কাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে। দলের অনেকের বক্তব্য, কয়েক মাস আগেই এক কমরেডের সঙ্গে মারামারি করে তিনি বেশ কিছু দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। যে ঘটনা ঘটেছিল আর এক সতীর্থের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের পারলৌকিক কাজের সময়ে। কয়েক বছর আগে ওই তরুণ নেতারই একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। য়েখানে তাঁকে সামনে একাধিক পানীয়ের গ্লাস নিয়ে খানিক জাঁক করে বলতে শোনা গিয়েছিল যে, তিনি মূত্র বিসর্জন করলে পার্টি ভেসে যাবে! যা নিয়ে তদন্ত কমিশনও গঠন হয়েছিল দলে। কিন্তু সিপিএম সূত্রেরই খবর, সেই কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট দিনের আলোর মুখ দেখেনি। সূত্রের আরও খবর, পূর্বসূরি আরও এক নেতার বিরুদ্ধেও কমিশন হয়েছিল। কিন্তু সেই কমিশনও ‘বিকশিত’ হয়নি। কলকাতা জেলারই প্রবীণ এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘দলে তরুণ প্রজন্মের একটা অংশ বোতল-গ্লাসের নিরিখে বন্ধুত্ব এবং শত্রুতায় অবতীর্ণ হয়ে পড়ছে। রাজনীতি বলে আর কিছু থাকছে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আগেও পার্টি, যুব সংগঠন, ছাত্র সংগঠনে ভাগাভাগি ছিল। কিন্তু তার ভিত্তি ছিল রাজনীতি, লাইন। এখন সে সবের বালাই নেই।’’ যদিও ওই যুবনেতার ঘনিষ্ঠেরা পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ত্রুটি হলে তার সংশোধনের প্রক্রিয়া দলে রয়েছে। পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটা হচ্ছে বেইজ্জত করার লক্ষ্যে।’’

সিপিএমের গণসংগঠনগুলিতে বিভিন্ন স্তরের সম্পাদক, সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ কে হবেন, তা সেই স্তরের দলীয় কমিটিই ঠিক করে। এ ক্ষেত্রে পুরোটাই ঠিক হয়েছে সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে। দলীয় সমীকরণে ‘বিতর্কিত’ নেতার পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন সম্পাদকমণ্ডলীর অধিকাংশ সদস্য। সূত্রের খবর, একাংশ আপত্তি তুললেও তা ধোপে টেকেনি। দলের মহিলা নেতৃত্বেরও আপত্তি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। সমাজমাধ্যমে অভিযোগ, বিতর্কের যখন ঝড় বইছে, তখন নিরুত্তাপ থাকার চেষ্টায় কলকাতা জেলা সিপিএম।

Advertisement
আরও পড়ুন