কলকাতা মেট্রো। —ফাইল চিত্র।
ব্যবধান একটি রাস্তার। কিন্তু, তাতেই একই গন্তব্যে যাওয়ার জন্য দু’টি মেট্রোপথের নামে তফাত হয়ে গিয়েছে সল্টলেকে। গন্তব্য বলতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুক। সেখানে যেতে গেলে উইপ্রো মোড় সংলগ্ন বিশ্ব বাংলা সরণির পূর্ব প্রান্তে নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোপথের নির্মীয়মাণ স্টেশনের নাম আইটি সেন্টার। আর একই জায়গায় রাস্তার পশ্চিম প্রান্তে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোপথের স্টেশনের নাম সেক্টর ফাইভ। মেট্রোকর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, উড়ালপথের মাধ্যমে ওই দুই স্টেশনে ট্রেন বদলের সুযোগ থাকলেও নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোর পরিষেবা চালু হলে যাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়তে পারে।
বিভ্রান্তি ঠিক কোথায়? মেট্রোর ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী, নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোপথে নিউ টাউন, ভিআইপি বাজার, রুবির দিক থেকে আসা যাত্রীরা আইটি সেন্টার স্টেশনে নেমে ট্রেন পাল্টে শিয়ালদহ, এসপ্লানেড এবং হাওড়ার দিকে যেতে পারবেন। আবার, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রীরা সেক্টর ফাইভ স্টেশনে নেমে নতুন মেট্রোয় যেতে পারবেন কবি সুভাষ অথবা নিউ টাউনের দিকে।
উদাহরণস্বরূপ আধিকারিকেরা বলছেন, ধরা যাক, কোনও যাত্রী কলেজ মোড় থেকে হাওড়ার দিকে সফর করবেন। তাঁকে আইটি সেন্টার স্টেশনে প্রবেশ করে উঠতে হবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয়। একই ভাবে করুণাময়ী থেকে নিউ টাউন বা কবি সুভাষের দিকে সফর করতে চাওয়া যাত্রীরা ইস্ট-ওয়েস্টের সেক্টর ফাইভ স্টেশন দিয়ে প্রবেশ করে যাবেন নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোপথে। অর্থাৎ, একই জায়গায় দু’টি স্টেশন দিয়ে ঢুকে দু’টি আলাদা মেট্রো রুটে যাত্রীদের সফরের সম্ভাবনা থাকছে। আবার তাঁরা রাস্তা পেরিয়ে মেট্রো ধরতে গেলেও হতে পারে অহেতুক যানজট।
সাধারণ রেলপথে এমন স্টেশনের নামের ফারাক অহরহ ঘটে। তবে মেট্রোর ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ সমস্যার আশঙ্কা করছেন আধিকারিকেরা। এর কারণ মূলত দুটো। প্রথমত, মেট্রোয় স্মার্ট কার্ড বা টোকেন ছুঁইয়ে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছতে হয়। ফলে একটি মেট্রো থেকে নেমে অন্য রুটের মেট্রোয় উঠতে গেলে দুই মেট্রোপথের সমন্বয় জরুরি। দ্বিতীয়ত, দু’টি মেট্রোপথের সংযুক্ত দূরত্বের ভাড়া নির্ধারণ ছাড়াও আরও একাধিক বিষয় রয়েছে। এই সব কারণে নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোর পরিষেবা চালু হলে রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রিত টোকেন, স্মার্ট কার্ড বা কিউআর কোডের টিকিটে জটিলতা এড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মেট্রোর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, প্রকল্প শুরুর সময়ে স্টেশনগুলির এই ধরনের নামের কারণে নির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে বার করতে হচ্ছে।
একই ধরনের সমস্যা রয়েছে নোয়াপাড়া-বারাসত মেট্রোর বিমানবন্দর এবং নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোর জয় হিন্দ স্টেশন নিয়েও। একই গন্তব্যে (বিমানবন্দর) দু’টি মেট্রোর স্টেশন আলাদা হচ্ছে সেখানেও। ওই ক্ষেত্রে একই ভাড়ায় যাঁরা ট্রেন বদল করবেন, সেই যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য সাধারণ পথের (কমন প্যাসেজ) ব্যবস্থা করা ছাড়াও মেট্রো স্টেশনের প্রবেশপথগুলির ব্যবস্থাপনাতেও বদল আনতে হবে।
নিউ গড়িয়া-রুবি মেট্রোর কবি সুভাষ স্টেশনের মাধ্যমে কলকাতায় প্রথম দু’টি মেট্রোর সংযুক্ত পথের পরিষেবা শুরু হবে। কবি সুভাষে ওই ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে কর্তাদের অনেক ভাবনাচিন্তা করতে হয়েছে। একই ভাড়ায় দুই মেট্রোর যাত্রীদের জন্য সংযোগকারী পথ পৃথক করতে হয়েছে। যদিও তার পরিকাঠামো নিয়ে সংশয়ী রেলওয়ে সেফটি কমিশনার। বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। একই রকম সংশয় বিশ্ব বাংলা সরণিতে তৈরি উড়ালপথের পরিকাঠামো ও দুই মেট্রোপথের সংযুক্তি নিয়েও।
মেট্রোকর্তাদের অবশ্য দাবি, যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে তবেই পরিষেবা শুরু করা হবে।