— প্রতীকী চিত্র।
একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো গ্রামোন্নয়নের একাধিক খাতে কেন্দ্রের বরাদ্দ আটকে থাকায় রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সংসদে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মঙ্গলবার সংসদে এই নিয়ে হইচইও হয়। তবে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় (পিএমজিএসওয়াই) বরাদ্দ জটমুক্ত হওয়ার বার্তা পেয়েছে রাজ্য। তাই ওই প্রকল্পের আওতায় আরও নতুন রাস্তার পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনগুলিকে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আটকে থাকা বরাদ্দও অনেক দিন বাদে ছাড়া শুরু করেছে কেন্দ্র। এই অবস্থায় রাজ্যের তৎপরতাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
জেলা-কর্তারা যে নির্দেশ আপাতত পেয়েছেন, তাতে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির গ্রামীণ এলাকায় নতুন রাস্তার পরিকল্পনা করতে হবে তাঁদের। তা পঞ্চায়েত দফতরে জমা পড়লে সেটা পাঠানো হবে কেন্দ্রের পিএমজিএসওয়াই অনুমোদনের জন্য। কেন এই তৎপরতা?
প্রশাসনের অন্দরের বক্তব্য, গত প্রায় দু’বছর ধরে পিএমজিএসওয়াই-তে বহু রাস্তার অনুমোদন ঝুলে ছিল। তার মধ্যে প্রায় ৩৩০০ কিলোমিটার রাস্তার অনুমোদন বেশ কিছু দিন আগেই দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে মনে করা হচ্ছে, অনুমোদন বাবদ অর্থও পাঠাবে কেন্দ্র। এই প্রকল্পে খরচের ৬০% দেয় কেন্দ্র, ৪০% টাকার ভাগ রাজ্যের। প্রশাসনের আশা, এই প্রকল্পে বরাদ্দের জট হয়তো আর আগের মতো থাকবে না। তাই নতুন রাস্তার পরিকল্পনাও সমান্তরালে চালাতে বলা হয়েছে জেলা-কর্তাদের। সে ক্ষেত্রে বরাদ্দ জটমুক্ত হলে বাকি অনুমোদনগুলিও পেতে বাধা থাকবে না। প্রশাসনিক সূত্র দাবি করছে, কেন্দ্র এবং রাজ্যের বরাদ্দ মিলিয়ে ১০-১২ হাজার কোটি টাকার রাস্তা তৈরির কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে পঞ্চায়েত দফতর। আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে শাসক দলের প্রচারে যা বাড়তি রসদ জোগাবে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের বরাদ্দ সম্প্রতি চালু করেছে কেন্দ্র। তা গ্রামোন্নয়ন নিয়েও আধিকারিকদের আশা জাগাচ্ছে। পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “পিএমজিএসওয়াই-তে রাস্তার প্রস্তাব কেন্দ্রকে জানানোর পরে তা নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়। তার পরে সেই পরিকল্পনা অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা যায়। কিছু রাস্তার অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার রাস্তার অনুমোদন এখনও বাকি।”
প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, প্রথমে আটকায় একশো দিনের টাকা, তার পরে আবাস যোজনা। কাছাকাছি সময়ে পিএমজিএসওয়াই-এর টাকা আসাও বন্ধ হয়েছিল। তার পরে নিজেদের অর্থে ‘পথশ্রী’ প্রকল্প চালু করে রাজ্য। তাদের দাবি, পুরোপুরি নিজেদের অর্থে বেশ কয়েক হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা ইতিমধ্যেই তৈরি করা গিয়েছে। এ বার পিএমজিএসওয়াই-এর বরাদ্দ অবাধ হলে এই খাতে রাজ্যের আর্থিক চাপ অনেকটা কমবে বলে আশা আধিকারিকদের একাংশের।
তবে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, তৃতীয় মোদী সরকারে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের ভার এখন রয়েছে শিবরাজ সিংহ চৌহানের হাতে। গ্রামোন্নয়ন খাতে বরাদ্দের জট কাটাতে তাঁর সঙ্গে বৈঠকের সময় পেতে অনেক দিন আগে থেকে চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য। এক বার সেই বৈঠকের সময় রাজ্য পেলেও, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আচমকা ব্যস্ততায় তা পিছিয়ে যায়। বৈঠকের নতুন সময় এখনও পায়নি রাজ্য। বাকি প্রকল্পগুলির বরাদ্দ নিয়ে কথা বলার জন্য তাই সেই বৈঠকেরঅপেক্ষায় তারা।