(বাঁ দিকে) সিভি আনন্দ বোস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
শনিবার রাত ১১টা ৪২ মিনিটে জানা গিয়েছিল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস জোড়া চিঠি পাঠিয়েছেন নবান্ন এবং দিল্লিতে। কিন্তু সেই চিঠির কী বিষয়বস্তু, তা জানা জানানো হয়নি রাজভবনের তরফে। রবিবার ছুটির দিন পার করে সোমবার তা জানা যাবে বলে আশা করা গিয়েছিল। সকালে বোস চিঠির বিষয় ‘গোপনীয়’ বলে জানানোর পরে বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ‘লুকিয়ে’ই রাখলেন ‘গোপনীয়’ চিঠির বিষয়। একই সঙ্গে জানালেন, মঙ্গলবার তিনি বিদেশে যাচ্ছেন বলে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ্যপাল বোস। সেই শুভেচ্ছা ওই ‘গোপনীয়’ চিঠিতে না কি আলাদা, তা অবশ্য প্রকাশ করেননি মমতা।
রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই রাজভবনের সঙ্গে বিকাশভবনের সংঘাত চলছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সরাসরি রাজ্যপালকে একাধিক বার আক্রমণ করেছেন। আক্রমণ করেছেন মমতাও। তবে সোমবার বিকেলে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গে কোনও কথাই বলতে চাননি তিনি। সব মিলিয়ে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী রাজভবন প্রসঙ্গ নিয়ে একেবারেই আক্রমণাত্মক ছিলেন না।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার সকালে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আজ মধ্যরাতের জন্য অপেক্ষা করুন। অ্যাকশন কাকে বলে দেখতে পাবেন।’’ এর পরে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে রাজ্যপালের এমন মন্তব্যকে কটাক্ষ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শিক্ষামন্ত্রী লেখেন, ‘‘সাবধান! সাবধান! সাবধান! শহরে নতুন রক্তচোষা (ভ্যাম্পায়ার) এসেছে। নাগরিকেরা দয়া করে সতর্ক থাকুন। ভারতীয় পুরাণ অনুযায়ী, ‘রাক্ষস প্রহারের’ জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি।’’ তাঁর এমন কটাক্ষের পর চুপই ছিলেন বোস। সেই রাতেই চিঠি পাঠিয়েছিলেন নবান্ন ও দিল্লিকে।
রবিবার রাজ্যপাল কিংবা শিক্ষামন্ত্রী দুই বোসই চুপ ছিলেন। সোমবার নাম না-করে শিক্ষামন্ত্রীকে বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার যদি কিছু বলার থাকে বা কোনও কিছুর প্রয়োজন হয়, তা হলে আমার সংবিধানিক সহকর্মী মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, তাঁর অধস্তন সহকর্মীকে বলব না।’’ কী রয়েছে মুখবন্ধ খামের জোড়া চিঠিতে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘যেটা গোপনীয়, সেটা গোপনীয়ই।’’ কেনই বা সেই চিঠি পাঠানোর প্রয়োজন হল? এমন প্রশ্নের জবাবে আনন্দ বোস বলেছেন, ‘‘আমি কিছু জানাতে চেয়েছিলাম।’’ এর পরেই বোস বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিদেশে যাচ্ছেন, আমি চাই না এমন সময় তাঁর উপর কোনও চাপ দেওয়া হোক। যখন তিনি বিদেশ সফরে থাকবেন, সেই সময় তাঁর উপর কোনও অতিরিক্ত ভার যেন না দেওয়া হয়। তিনি ফিরে এলেই আমরা বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করব।’’
এর পরে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকে গোপনীয় চিঠির বিষয় নিয়ে কিছুটা আলো পাওয়া যাবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু মমতা সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি। তাঁকে প্রশ্ন করা হলে মমতা বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত চিঠি নিয়ে আমি প্রকাশ্যে বলতে পারি না। এটা গোপনীয় এবং ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ একই সঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আমি বাইরে যাচ্ছি, তাই উনি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।’’ প্রসঙ্গত, নবান্নের পাশাপাশি দিল্লিতেও রাজ্যপাল বোস যে চিঠি পাঠিয়েছেন তার বিষয়েও এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।