মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি— ফেসবুক।
রাজ্যে রেফার ‘রোগ’ রয়েই গিয়েছে। খেসারত হিসাবে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে প্রসূতিদের মৃত্যুও ঘটছে। জেলা স্তরের বিভিন্ন হাসপাতালে নানা রকম নতুন পরিকাঠামো গড়ে তোলা সত্ত্বেও কেন রেফারের প্রবণতা কমানো যাচ্ছে না, এই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভপ্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বও তাঁর হাতে। রেফারে রাশ টানার কড়া বার্তা দিয়ে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, চিকিৎসায় গাফিলতি অপরাধ হিসাবেই বিবেচিত হবে। যিনি রেফার করবেন, রোগীর কিছু হলে দায় তাঁকেই নিতে হবে।
সোমবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হলেই রেফার করে দেওয়া হচ্ছে। তার পর পাঁচ-ছ’ঘণ্টা ধরে ধকল সহ্য করে প্রসূতি যখন কলকাতায় এসে পৌঁছচ্ছেন, অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হচ্ছে। এটা কি আপনাদের পক্ষে ভাল?’’
সাম্প্রতিক কালে রেফার সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগে দেখা গিয়েছে, যে ধরনের রোগীকে রেফার করা হয়েছে, সেই রোগের চিকিৎসা-পরিকাঠামো এবং চিকিৎসক রয়েছেন জেলা স্তরের সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে। স্বাস্থ্য দফতরের তদন্তেও দেখা যায়, এক শ্রেণির চিকিৎসকেরা ঠিক মতো কর্তব্য পালন করছেন না। তা নজরে রেখে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোন কোন কেসে রেফার হয়েছে এবং গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হয়েছে, তা দেখে নিতে হবে। কেন এই ভাবে প্রেগন্যান্ট মাদারকে অন্য হাসপাতালে পাঠাব? যখন সরকারে আসি, তখন ইনস্টিটিউশন ডেলিভারি (হাসপাতালে সন্তান প্রসব) ৬৫ শতাংশ ছিল। এখন তা বেড়ে ৯৯ শতাংশ হয়েছে। তার পরেও কেন এটা হবে? আমার তো মাথায় ঢুকছে না। যিনি রেফার করবেন, তাঁকে দায় নিতে হবে।’’
রেফার আটকাতে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকেও আরও ‘কঠোর’ হওয়ার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘নারায়ণ, তুমি ভাল কাজ করো। কিন্তু তুমি একটু নরম মনের। তোমার আশপাশের লোকেরা তোমায় আটকায়। তোমাকে আরও শক্ত হতে হবে।’’ স্বাস্থ্য আধিকারিকদের আচমকা স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করতেও বলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আপনার কি সারপ্রাইজ় ভিজিট করেন? আগে এক জন স্বাস্থ্যসচিব ছিলেন। জনগণের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়তেন। আপনারাও তো সেটা করতে পারেন। খবর দিয়ে গেলে কিছুই জানতে পারবেন না। এতে তো সাধারণ মানুষও অনুপ্রাণিত হন।’’
ব্লকস্তরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফারের পরিস্থিতি তৈরি হলে বিকল্প কী উপায় রয়েছে, তা-ও বাতলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যসচিবের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাঁরা বসেন, তাঁদের কিছু তো জ্ঞান রয়েছে। দরকার হলে গাইডলাইন ধরিয়ে দাও। কাউন্সেলিং করে দাও। রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হলে জেলা হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করুক। সুপারই বলে দেবেন, কী করতে হবে। দরকারে ভিডিয়োর মাধ্যমে গাইড করবে।’’
সকলের উদ্দেশেই মমতার কড়া বার্তা, ‘‘চিকিৎসায় গাফিলতি করা যাবে না। গাফিলতি একটা ক্রাইম। এটা করা যাবে না। কেন গর্ভবতী মাকে চার-পাঁচ ঘণ্টা জার্নি করতে হবে? ৯৯ শতাংশ ইনস্টিটিউশন ডেলিভারি তো রয়েছেই। কোথায় খামতি আছে, সেটা শীঘ্রই দেখে নিতে হবে। কারা কারা রেফার করেছেন, সেটাও দেখতে হবে।’’