West Bengal Recruitment Case

প্রাথমিক দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হল শিক্ষকদের

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি যোগ্যতামান নির্ধারণের পরীক্ষা (টেট) থেকে শুরু হয়েছিল বলে অভিযোগ। সূত্রের দাবি, এই তালিকাভুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের টেট পাশ করা নিয়েই সন্দেহ আছে। তাই তাঁদের চাকরির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন আছে।

Advertisement
কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ০৭:১০
এ বার কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সিবিআই।

এ বার কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সিবিআই। —ফাইল চিত্র।

প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে নেতা, মন্ত্রী এবং আধিকারিকদের ধরপাকড় আগেই হয়েছে। এ বার সেই মামলায় কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সিবিআই। সূত্রের খবর, চলতি মাসের গোড়াতেই মামলার তদন্তকারী অফিসার ১০৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার একটি তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হওয়ার জন্য বলেছিলেন। সূত্রের দাবি, ওই তালিকায় থাকা প্রায় ৪০ জনকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আগামিকাল, সোমবার থেকে বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব শুরু হবে। ২৪ মার্চের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব শেষ করার লক্ষ্য স্থির করেছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি যোগ্যতামান নির্ধারণের পরীক্ষা (টেট) থেকে শুরু হয়েছিল বলে অভিযোগ। সূত্রের দাবি, এই তালিকাভুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের টেট পাশ করা নিয়েই সন্দেহ আছে। তাই তাঁদের চাকরির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। প্রসঙ্গত, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছিল। পরে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও একই রায় বহাল রাখে। সুপ্রিম কোর্ট চাকরি বাতিলের উপরে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিলেও তদন্তের নির্দেশ বহাল আছে। ওই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের ফলেই আপাতত চাকরি করছেন ওই ৩২ হাজার শিক্ষক।

এই মামলার অন্যতম আবেদনকারী রমেশ মালিকের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘যাঁরা দুর্নীতির সুযোগে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অপরাধের উৎসে পৌঁছতে হবে, এ কথা কোর্টে আমরা বলেছিলাম। এত দিনে সেই তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ উল্লেখ্য, এই মামলায় হাই কোর্টে সিবিআই যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল তাতে তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, টেট-এর ভুল প্রশ্ন নিয়ে মামলা হওয়ার পরে ২০১৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ একটি বৈঠক করে ভুল প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপরেই কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল-সহ কয়েকজন একটি চক্র তৈরি করে পাশ করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি-কোটি টাকা তোলেন। পরীক্ষার্থীরা যে পাশ করেছেন তা দেখানোর জন্য টেট-এর ফলাফল সংক্রান্ত একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিল এবং ভুয়ো ই-মেলও পাঠানো হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জুন মাসে এই মামলার তদন্ত শুরু হয়েছিল। প্রায় তিন বছর পরে কর্মরত শিক্ষকদের তলব করা হয়েছে। সূত্রের খবর, তদন্তকারী অফিসার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে যে চিঠি পাঠিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে যে
তালিকায় নাম থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ২০১৪ সালের টেট-এর অ্যাডমিট কার্ড ও নিয়োগপত্র নিয়ে সিবিআই দফতরে হাজির হতে হবে। একটি সূত্রের খবর, ওই তালিকায় দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, কোচবিহার, কলকাতা, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা আছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের শিক্ষকের সংখ্যাই সর্বাধিক। ওই জেলার প্রায় ৫০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার নাম ওই তালিকায় আছে বলেও খবর।

প্রাথমিক দুর্নীতিতে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র-সহ বহু অভিযুক্ত ছাড় পেয়েছেন। নিম্ন আদালতে এখনও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের এ-ও প্রশ্ন, জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতে এত দিন লাগল কেন? এই জিজ্ঞাসাবাদের ফলে যে তথ্য পাওয়া যাবে তা ব্যবহার করে দুর্নীতির উৎসে পৌঁছতে সিবিআইয়ের আর কত দিন লাগবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement
আরও পড়ুন