কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাঁদের দ্রুত সাজা দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে বিচারব্যবস্থা অর্থহীন হয়ে পড়বে। নিয়োগ মামলার শুনানিতে এমনটাই মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া (ট্রায়াল) শুরুর বন্দোবস্ত করার জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে হবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে।
হাই কোর্টে নিয়োগ মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষ এবং নীলাদ্রি সাহার জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল সোমবার। তাঁদের জামিনের আর্জি এখনই মঞ্জুর করা হয়নি। ওই সংক্রান্ত রিপোর্ট সিবিআইয়ের কাছ থেকে চেয়েছে আদালত। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, তিন সপ্তাহ পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। তার মধ্যে সিবিআইকে ওই দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্তের রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে।
নিয়োগ মামলায় ট্রায়াল এখনও শুরু করা যায়নি বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। বিচারপতি বাগচীর মন্তব্য, ‘‘ট্রায়াল শুরু করে অভিযুক্তদের সাজা না দিলে পুরো বিষয়টি হাস্যকর হয়ে যাবে। মানুষের মন থেকে ওই দুর্নীতি আবছা হয়ে যাবে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টা কোনও কাজে লাগবে না।’’
সিবিআই নিয়োগ মামলার চার্জশিট পেশ করেছে। তবে আরও কিছু তদন্ত বাকি আছে বলে জানিয়েছেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। এতেই বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারপতি। সিবিআইয়ের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কেন আপনারা দ্রুত ট্রায়াল শুরু করছেন না? সাজা ঘোষণা না হলে একটি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। জাপান, সিঙ্গাপুর অনেক উন্নত দেশ। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত সাজা ঘোষণা করে। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিষ্ঠিত হলে কেন ট্রায়ালই শুরু করা যাচ্ছে না?’’
বিচারপতির প্রশ্নের মুখে সিবিআইয়ের আইনজীবী অমাজিৎ দে জানান, চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। অতিরিক্ত চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে। তদন্তের সামান্য কিছু অংশ বাকি রয়েছে। সেটি দ্রুত সম্পূর্ণ করা হবে।
আদালতে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন কুন্তল। তাঁর আইনজীবী বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ছ’জনের চাকরির বিনিময়ে চার কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কোনও টাকা উদ্ধার হয়নি।’’ অন্য দিকে, নীলাদ্রির আইনজীবী বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে দু’লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ ছিল। সেই টাকা ইতিমধ্যে ফেরত দেওয়া হয়েছে।’’ এ প্রসঙ্গে বিচারপতি বাগচীর পর্যবেক্ষণ, কে কত টাকা নিয়েছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অপরাধ হয়েছে কি না, আদালত তা দেখতে চায়। আর্থিক অপরাধের তদন্ত করছে ইডি। টাকার বিষয়টি তারাই জানাবে।