Budhni Mejhan

‘নেহরুর বউ’ তকমা দিয়ে বহিষ্কার করেছিল আদিবাসী সমাজ, পাঞ্চেতের সেই বুধনি মেঝান প্রয়াত

১৯৫৯ সালে ৬ ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পাশে দাঁড়িয়ে ৬৪ বছর আগে বুধনিই সুইচ দামোদর নদীর উপর পা়ঞ্চেত বাঁধের উদ্বোধন করেছিলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৪৯
বুধনি মেঝান (বাঁ দিকে) এবং জওহরলাল নেহরু।

বুধনি মেঝান (বাঁ দিকে) এবং জওহরলাল নেহরু। — ফাইল চিত্র।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পাশে দাঁড়িয়ে ৬৪ বছর আগে তিনিই সুইচ অন করে দামোদর নদীর উপর পাঞ্চেত বাঁধের উদ্বোধন করেছিলেন। শুক্রবার গভীর রাতে সেই পাঞ্চেতেরই হাসপাতালে অনাদরে মৃত্যু হল ‘নেহেরুর বউ’ বলে পরিচিত বুধনি মেঝানের। শনিবার তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফে সম্মান জানানো হয় প্রয়াত বুধনিকে।

Advertisement

১৯৫৯ সালে ৬ ডিসেম্বর ডিভিসির পাঞ্চেত জলাধারের উদ্বোধনে এসেছিলেন দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু। বাঁধ নির্মাণের কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন আশপাশের গ্রামগুলির বেশ কিছু আদিবাসী নারী-পুরুষ। উদ্বোধনের দিন নেহরুকে দেখার জন্য তাঁরাও হাজির ছিলেন সে দিন। সেই দলে ছিলেন ১৫ বছরের বুধনিও। নেহরুর গলায় মালা পরিয়ে স্বাগত জানাবে কে? ডিভিসি কর্তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দায়িত্ব পড়েছিল ১৫ বছরের সাঁওতাল মেয়ে বুধনির উপর। নেহরুর গলায় মালা পরিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন বুধনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, নেহরু সেই মালা পরিয়ে দিয়েছিলেন বুধনিকে।

শুধু তাই নয়, নেহরু সে দিন বাঁধের উদ্বোধনও করিয়েছিলেন বুধনিকে দিয়ে। উদ্বোধনী বক্তৃতায় নেহরু সে দিন বলেছিলেন, এই বাঁধই হল ‘টেম্পল অব ডেভলপিং ইন্ডিয়া’। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক দিনেই চিরতরে পালটে গিয়েছিল বুধনির জীবন। পরপুরুষের সঙ্গে মালাবদলের ‘অপরাধে’ তাঁকে আদিবাসী সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ছাড়তে হয়েছিল গ্রাম। আদিবাসী সমাজের নিয়মে পরপুরুষের গলায় মালা দেওয়া মানেই বিয়ে। কিন্তু নেহরু তো আদিবাসী নন। তাই সমাজ থেকে বহিষ্কার।

১৯৬২ সালে ডিভিসির চাকরিটিও চলে গিয়েছিল বুধনির। ১৯৮৫ সালে আসানসোলের তৎকালীন কংগ্রেসের সাংসদ আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন বুধনি। আবার তাঁর চাকরি ফিরিয়ে দিয়েছিল ডিভিসি। পরবর্তী কালে অবসর নিয়েছিলেন বুধনি। ডিভিসির আবাসনেই থাকতেন তিনি। কিন্তু নিজের সমাজে তিনি সঠিক সম্মান পাননি বলে অনুযোগ এলাকাবাসীর একাংশের। গ্রামেও ফিরে যেতে পারেননি কোনও দিন।

আরও পড়ুন
Advertisement