RG Kar Protest

সংহতির বার্তা বিজেপিরও, ‘দলীয় স্বার্থে’ না জুনিয়রদের

পুজোর শেষে এ বার চিকিৎসকদের ওই আন্দোলনে দলের কর্মীদের সঙ্গে থাকার বার্তা দিল রাজ্য বিজেপি। তাদের মতে, চিকিৎসকদের দাবি ন্যায্য এবং রাজ্য সরকার কথা রাখেনি বলেই তাঁদের এই পথে যেতে হয়েছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৪:৫১
চিকিৎসকদের অনশনমঞ্চের সামনে সমাবেশ। ধর্মতলায়।

চিকিৎসকদের অনশনমঞ্চের সামনে সমাবেশ। ধর্মতলায়। —ফাইল চিত্র।

পুজোর মধ্যে জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন-অবস্থানে পাশে থেকেছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। চিকিৎসকদের ডাকা সমাবেশে তাঁরা শামিল হয়েছেন, অন্যান্য দিনেও অনশন-মঞ্চের চত্বরে থেকেছেন। পুজোর শেষে এ বার চিকিৎসকদের ওই আন্দোলনে দলের কর্মীদের সঙ্গে থাকার বার্তা দিল রাজ্য বিজেপি। তাদের মতে, চিকিৎসকদের দাবি ন্যায্য এবং রাজ্য সরকার কথা রাখেনি বলেই তাঁদের এই পথে যেতে হয়েছে। জুনিয়র চিকিৎসকদের ফ্রন্ট (ডব্লিউবিজেডিএফ) অবশ্য ফের জানিয়েছে, শুধু দলীয় পতাকা নয়, দলীয় স্বার্থ নিয়েও কেউ তাঁদের আন্দোলনে যেন না আসেন। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই তাঁরা চান না। সব মিলিয়ে চিকিৎসকদের আন্দোলন ঘিরে জট আরও পাকছে!

Advertisement

বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার রবিবার লিখিত বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনে রাজ্য বিজেপি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে। আর জি কর হাসপাতালে এক তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনার পরে প্রতিবাদী চিকিৎসকেরা যে সব দাবি তুলেছেন, তা ন্যায্য এবং অবশ্যই পূরণ হওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিবাদী চিকিৎসকদের বৈঠকে দাবি মানার কথা বলা হয়েছিল কিন্তু তার পরে সরকার সেই কাজে এগোয়নি’। এর সঙ্গেই বিজেপির রাজ্য সভাপতির বক্তব্য, ‘চিকিৎসকদের প্রতিবাদে বড় সংখ্যায় যোগ দেওয়ার জন্য দলের কর্মীদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। বাংলার মানুষের কাছেও আমাদের আবেদন, এই আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠুন। আমাদের চিকিৎসকদের রক্ষা করতে হবে এবং সেই সঙ্গে রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় যে অন্ধকারের শক্তি রয়েছে, তার হাত থেকে বাংলাকে বাঁচাতে হবে’।

চিকিৎসকদের আন্দোলনকে এর আগে তীব্র কটাক্ষ করেছেন একাধিক বিজেপি নেতা। কখনও দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করেছেন, ‘লোক খেপিয়ে নাটক হচ্ছে’। কখনও অশোক দিন্দার মতো বিজেপি বিধায়ক চিকিৎসকদের আন্দোলনকে ‘স্বার্থপর’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রতিবাদী চিকিৎসকেরা কেন মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলছেন না, সেই প্রশ্ন বারবার তুলেছেন বিজেপি নেতারা। আবার চিকিৎসকদের ধর্না-অবস্থানের আশেপাশে গিয়ে ‘গো ব্যাক’ শুনতে হয়েছে কয়েক জন বিজেপি নেতা-নেত্রীকে। তা হলে কি চিকিৎসকদের আন্দোলন এগিয়ে চলেছে দেখে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান বদল হচ্ছে? বিজেপির এক রাজ্য নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘অবস্থানে বদল হয়নি। দল হিসেবে বিজেপি চিকিৎসকদের প্রতিবাদের পাশেই ছিল। ব্যক্তিগত ভাবে যে যা-ই বলে থাকুন না কেন। এই লড়াইয়ের সময়ে চিকিৎসকদের আন্দোলনে সব রকম ভাবে সঙ্গে থাকা যে আমাদের কর্তব্য এবং তাতে যেন কোনও বিভ্রান্তি না থাকে, সেটাই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

বামেদের পথেই বিজেপির এই পদক্ষেপ প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আরএসএসের প্রধান মোহন ভাগবত বলেছিলেন, এই ক্ষেত্রে সরকারের যে কোনও পদক্ষেপ তাঁরা সমর্থন করবেন। তার পরে বিজেপি নেতারা চিকিৎসকদের আক্রমণ করছিলেন। এখন ভাগবতের একটু অন্য সুর শুনে হয়তো বিজেপি মত বদল করছে। তবে আমরা আমাদের অবস্থানে পরিষ্কার। নাগরিক আন্দোলন দখল করতে যাচ্ছি না, শুরু থেকেই সেই আন্দোলনের সঙ্গে আছি।’’

শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য চিকিৎসকদের অনশন চালিয়ে যাওয়ার কোনও কারণ আছে বলেই মনে করছে না। বিরোধীদের এক হাত নিয়ে তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ এ দিন বলেছেন, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকেরা কাদের প্ররোচনায় অনশন শুরু করলেন? সরকার চিকিৎসকদের সঙ্গে বারবার কথা বলেছে। মুখ্যমন্ত্রী একাধিক পদক্ষেপ করেছেন, স্বাস্থ্যের পরিকাঠামো সম্প্রসারণ হচ্ছে। সরকার বারবার অনুরোধ করেছে, আমরাও অনুরোধ করছি অনশন প্রত্যাহার করার। অনশনের কোনও কারণ এই মুহূর্তে নেই।’’

চিকিৎসকদের আন্দোলনে পতাকা ছাড়া পাশে থাকার জন্য দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে আগেই আবেদন জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীও এ দিন বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে দলীয় রাজনীতি এবং দলীয় পতাকা ছাড়াই বাংলার সমস্ত কংগ্রেস কর্মীকে শামিল হতে আমি আন্তরিক আবেদন এবং অনুরোধ করছি। রাজ্যের তৃণমূল পরিচালিত সরকার এই আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি যে অমানবিক, অসামাজিক এবং নিষ্ঠুর আচরণ করছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়! সমস্ত দলীয় রাজনৈতিক পতাকা বাদ দিয়ে ওই জুনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে এক জন সাধারণ রাজ্যবাসী হিসাবে আমিও আছি। আপনারাও থাকুন এই লড়াইয়ে’। সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে আর্জি জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি ছেড়ে মুখ্যমন্ত্রীই সরাসরি প্রতিবাদী চিকিৎসকদের ডেকে ১০ দফা দাবি নিয়ে আলোচনায় বসুন।

বিরোধী দলের এই সংহতি অবশ্য এখনও ইতিবাচক মনোভাবে দেখছে না জুনিয়র চিকিৎসকদের ফ্রন্ট। তাদের তরফে চিকিৎসক দেবাশিস হালদার এ দিনই রাতে বলেছেন, ‘‘অনেক রাজনৈতিক দলের অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। আমরা পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই, দলীয় পতাকা শুধু নয়, দলীয় স্বার্থ নিয়েও কেউ আসুন, আমরা চাই না। এই আন্দোলন শুধু চিকিৎসকদের নয়, এই আন্দোলন সাধারণ নাগরিকদের। তাঁরা যে ভাবে সমর্থন করছেন, তাকে কুর্নিশ জানাই। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরা আসুন, সেটা চাই না। ‘গো ব্যাক’ বলতে চাই না, হাত জোড় করে অনুরোধ করছি!’’

আরও পড়ুন
Advertisement