দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় তৃণমূল সরকারকে বেলাগাম আক্রমণ করলেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি রাজ্য সরকারকে ‘নপুংসক’ বলে আক্রমণ করেছেন। পাশাপাশি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবেকানন্দের মূর্তি তৈরি করে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তোলা হবে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। অন্য দিকে, তৃণমূলের কটাক্ষ, দিলীপ এ সব শুধু প্রচারে আসার জন্য বলছেন।
গত ৯ অগস্ট যাদবপুরে এক প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুতে এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে যেমন বর্তমান পড়ুয়া আছেন, তেমনই রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরাও। কেন হস্টেলে প্রাক্তনীরা থাকবেন এবং কেন র্যাগিংয়ের মতো অভিযোগ উঠবে, তা-ই নিয়ে প্রশ্ন করে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তোলেন দিলীপ। রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ায় একটি দলীয় সভা থেকে মেদিনীপুরের সাংসদের মন্তব্য, ‘‘কাশ্মীর ঠান্ডা করে দেওয়া হয়েছে,আর যাদবপুর ইউনিভার্সিটি তো কোন ছার! বুটের লাথি মেরে জেএনইউ ঠান্ডা করে দেওয়া হয়েছে।’’
তৃণমূল-সহ বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশানা করে দিলীপ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনে মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই করবে সবাই। কিন্তু অন্যায়-অবিচার, খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ লড়বে না। সেই বাংলা তৈরি করা হচ্ছে। তাই তৃণমূল চুপ করে আছে।’’ এর পর যাদবপুরকাণ্ডে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা টেনে দিলীপ বলেন, ‘‘ওখানে যেই খুন করুক, বিজেপি তো ছিল না। সিপিএম, নকশাল, কংগ্রেসের সংগঠন আছে। তৃণমূলেরও আছে। এবার কিন্তু এবার বিজেপির দিকে আঙুল তুলতে পারবেন না।’’ বিজেপি সাংসদের সংযোজন, ‘‘এই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, এই জেএনইউ, এই ওসমানিয়া ইউনিভার্সিটি হায়দরাবাদ —এরা একই তারে জোড়া আছে। এখানে বার বার বিদেশি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভারতকে টুকরো করার স্লোগান ওঠে। এরা টুকরে টুকরে গ্যাং।’’
এখানেই থামেননি দিলীপ। তাঁর অভিযোগ, যে সব রাজনৈতিক সংগঠন অন্যত্র নির্বাচনে জয়ীই হয় না, কোথাও যাদের রাজনৈতিক শক্তি নেই, তারা যাদবপুর, জেএনইউ-তে ‘দাপিয়ে বেড়ায়।’ তাঁর কথায়, ‘‘আমার-আপনার বাড়ির ছেলে যে কখনও কমিউনিজ়ম কী জানে না, নকশাল রাজনীতি বোঝে না, সে ওখানে গিয়ে কী করে অতি বাম হয়ে যায়! আসলে ওই পরিবেশ তৈরি করা রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মদ-গাঁজার আসর বসাচ্ছে। ছেলে-মেয়ের কোনও ভেদ নেই। টিভিতে আবার বলছে, আমরা মাওবাদী। আমাদের মদ-গাঁজা খাওয়ার অধিকার আছে।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বছর তিনেক আগে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের উপর হেনস্থার প্রসঙ্গ টেনে দিলীপ বলেন, ‘‘ওই সময়ে বাবুল সুপ্রিয়, অগ্নিমিত্রা পালের উপর আক্রমণ হয়েছিল। বাবুলকে থাপ্পড় মারা হয়েছিল। গভর্নর (রাজ্যপাল) গিয়েছিলেন উদ্ধার করতে। তাঁকেও কালো পতাকা দেখানো হয়েছিল। গাড়ি আটকানো হয়েছিল। কিন্তু আমি বলেছিলাম, এর জবাব দেব। তার পর আমাদের লোকেরা গিয়ে অফিস উড়িয়ে দিয়েছিল, যেখানে ওরা মদ খেত।’’ দিলীপের মতে, এটা ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক।’ এর পর রাজ্য সরকারকে নিশানা করে দিলীপ বলেন, ‘‘এই হিজড়া সরকারের দম নাই। এরা মা-বোনের ইজ্জত, ছেলেমেয়ের প্রাণ নিয়ে টানাটানি করে।’’
যাদবপুরকাণ্ড নিয়ে দিলীপ রাজ্য সরকারকে ‘নপুংসুক’ বলেও আক্রমণ করেছেন। কেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা যাদবপুরে না গিয়ে দিল্লি যান, এ নিয়ে প্রশ্ন করেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ কী জন্য আছে? শুধু ঘুষ নেওয়ার জন্য? কেন পুলিশ লেজ গুটিয়ে বসে আছে? বাবা-মা স্বপ্ন নিয়ে ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছেন। সেখানে এমন ঘটনা। এই বিশ্ববিদ্যালয় চলা উচিত কি?’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘যেখানে যেখানে সন্ত্রাসবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়েছে, আমরা বুট দিয়ে তার মাথা ভেঙে দিয়েছি। যান, জেএনইউ-তে যান। ওখানেও প্রকাশ্যে মদ-গাঁজা খাওয়া হত। ‘আজাদি’ স্লোগান তোলা হত। ওদের সবাইকে ‘আজাদ’ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ওখানে লেনিন নেই। স্ট্যালিন নেই। বিবেকানন্দের মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। যেদিন এখানকার এই নপুংসুক সরকার যাবে, সেদিন যাদবপুরে (বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে) আমরা বিবেকানন্দের স্ট্যাচু তৈরি করব। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান উঠবে।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবীদেরও যাদবপুরকাণ্ডে আক্রমণ করেন বিজেপি সাংসদ। দিলীপ বলেন, ‘‘এর পরিবর্তন চাই। এ রকম বহু ছিল। কাশ্মীর ঠান্ডা করে দিয়েছি আর কোথায় এই যাদবপুর! এখানে শুধু সরকার আছে। কিন্তু কী ভাবে সেই সরকার চলছে, কেন চলছে, কেউ জানে না।’’
দিলীপের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এই সব অশালীন কথা শুধু নজর কাড়ার জন্য। উনি (দিলীপ) দলে দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছেন। তাই এ-সব বলে নজরে আসতে চাইছেন। গোটা দেশের মধ্যে র্যাগিংয়ে উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ সামনে রয়েছে। সেগুলো বিজেপি শাসিত। দিলীপবাবু এ সব খবর রাখেন না। শুধু খারাপ কথা বলে খবরে থাকতে চান।’’