Nabanna Abhijan

অশান্তির ‘চক্রান্ত’ নবান্ন অভিযানে, ভিডিয়োয় বিতর্ক, তৃণমূল-পুলিশ এক সুর

অপরিচিত ‘ছাত্র সমাজে’র এই এই কর্মসূচি নিয়ে গত দু’দিন ধরেই রাজনৈতিক শিবিরে টানাপড়েন চলছে। সংগঠনের তরফে অরাজনৈতিক ভাবে এই কর্মসূচির কথা জানানোর পর তাকে সমর্থন করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৪ ০৮:১২
Representative Image

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আর জি কর-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ‘নবান্ন চলো’ কর্মসূচি ঘিরে ‘লাশের রাজনীতি’ করার চক্রান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ তুলল তৃণমূল কংগ্রেস। ‘পশ্চিমবঙ্গ ‘ছাত্র সমাজে’র ডাকে আজ, মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানের আগে দু’টি ভিডিয়ো (আনন্দবাজার এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি) প্রকাশ করেছে তৃণমূল। সেখানে বিজেপির তিন ব্লক স্তরের নেতার কথোপকথনে হিংসা ছড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। তৃণমূলের পরে একই সুরে এবং ভিডিয়ো দেখিয়ে রাজ্য পুলিশের তরফেও দাবি করা হয়েছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হতে পারে। বিজেপি অবশ্য পাল্টা দাবি করেছে, তৃণমূলের দেওয়া ওই ভিডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত হোক।

Advertisement

অপরিচিত ‘ছাত্র সমাজে’র এই এই কর্মসূচি নিয়ে গত দু’দিন ধরেই রাজনৈতিক শিবিরে টানাপড়েন চলছে। সংগঠনের তরফে অরাজনৈতিক ভাবে এই কর্মসূচির কথা জানানোর পর তাকে সমর্থন করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও জানিয়েছেন, সরাসরি না-বলেও পিছন থেকে তাঁরা ছাত্রদের ওই অভিযান সমর্থন করছেন। এর পরে সোমবার দু’টি ভিডিয়ো ক্লিপ সামনে এনে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সবাই যখন দোষীদের শাস্তির কথা বলছে, তখনই বিজেপি এবং আরএসএস একটা নৈরাজ্যের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। হিংসা ছড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’ নবান্ন অভিযানকে ‘অবৈধ ও বেআইনি’ বলে মন্তব্য করে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের দাবি, ‘‘বিজেপি-আরএসএস মৃতদেহের রাজনীতি করতে চাইছে! সিপিএমের একাংশ এতে সমর্থন করছে। বাইরে থেকে লোক ঢোকানো হচ্ছে। পুলিশের পোশাক ঢোকানো হচ্ছে।’’ পুলিশের পোশাক পরে নবান্ন অভিযানে গুলি চালানো হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন কুণালেরা।

তৃণমূলের প্রকাশিত ওই ভিডিয়ো ক্লিপে বিজেপির চন্দ্রকোনার মণ্ডল সভাপতি বিপ্লব মাল ও ঘাটাল মহকুমার খড়ার পুরসভার বিজেপি পুর-প্রতিনিধি বাবলু গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখে শোনা গিয়েছে, ‘গুলি চলবে’ এবং ‘বডি যদি না পড়ে তা হলে রাজনীতি হবে না’র মতো দু’টি বাক্য। ভিডিয়োর ছবি চিহ্নিত করে বাবলু, বিপ্লব এবং বিজেপির আর এক নেতা সৌমেন চট্টোপাধ্যায়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেছেন, “সমাজমাধ্যমে কয়েকটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। ভিডিয়োগুলি হাতে এসেছে। ছবি শনাক্ত করে ওই ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কী উদ্দেশ্য ছিল, অন্য কোনও পরিকল্পনা ছিল নাকি, সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত অবশ্য বলেছেন, ‘‘এখন তো দেখছি ভিডিয়ো অন ডিমান্ড! যখনই দরকার হচ্ছে, একটা করে ভিডিয়ো চলে আসছে। এই ভিডিয়োর সত্যতা নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন রয়েছে। এটা ভুয়ো কি না, জানতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনি লড়াই চালাব। যদি বিজেপি এমন কোনও পরিকল্পনা করে থাকে বলেও আমি ধরেওনি, সেটা শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন না, আর মণ্ডল সভাপতি জেনে গেলেন?’’ ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটও দাবি করেছেন, “তৃণমূল মিথ্যা ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়াচ্ছে। আসলে স্বতঃফূর্ত আন্দোলনের ঝাঁঝ দেখে ভয় পাচ্ছে ওরা।” বিজেপির অভিযোগের পাল্টা তৃণমূলের কুণাল আবার বলেছেন, ‘‘সন্দেশখালির চক্রান্তের পরেও এ কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই ভিডিয়ো ভুয়ো বলে মামলা করার সাহস হয়েনি বিজেপির!’’

তৃণমূলের তরফে চন্দ্রিমা ও কুণাল এ দিন দু’টি ভিডিয়ো দেখিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা এবং পুলিশের পোশাকে দুষ্কৃতীরা গুলি চালাবে কি না, সেই আশঙ্কা প্রকাশের কিছু পরেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা এবং এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। সেখানে হাজির ছিলেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী, হাওড়ার (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার স্বাতী ভাঙ্গালিয়া এবং কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ও। সেখানেও কয়েকটি ভিডিয়ো পৌঁছে দেওয়া হয় সাংবাদিকদের কাছে। যেগুলির সঙ্গে তৃণমূলের দেখানো ভিডিয়োর মিল রয়েছে। ঘটনাচক্রে, প্রথমে সাংবাদিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল পৌনে ১২টায়। পরে তার সময় বদলে হয় দুপুর একটা।

নবান্ন অভিযানের জন্য তখনও ‘ছাত্র সমাজ’ কোনও অনুমতি নেয়নি বলে দুপুরে পুলিশ-কর্তারা জানালেও পরে সন্ধ্যায় ফের সুপ্রতিম জানান, অবশেষে তাদের তরফে কর্মসূচির কথা শুধু জানানো হয়েছে। অনুমতি চাওয়া অথবা সবিস্তার তথ্য দেওয়া হয়নি। একই পদক্ষেপ হয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফেও। তাই কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে, তা ‘অবৈধ এবং বেআইনি’ হিসেবেই ধরা হবে। একই সঙ্গে সুপ্রতিমের দাবি, “ছাত্র সমাজের অন্যতম এক আহ্বায়ক ২৫ অগস্ট সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে গিয়েছিলেন একটি অভিজাত হোটেলে। ভিডিয়ো ফুটেজ রয়েছে। কার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তা আমরা জেনেছি। কী কারণে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।” তাঁর সংযোজন, “যে কোনও মানুষের কোথাও যাওয়া এবং যার সঙ্গে খুশি দেখা করতে বাধা নেই। কিন্তু এই আন্দোলনের দু’দিন আগে পাঁচতারা হোটেলে দেখা করতে যাওয়া ধোঁয়াশা এবং প্রশ্ন তৈরি করছে। সবটা বলা সম্ভব নয় তদন্তের স্বার্থে।”

সন্ধ্যায় সোদপুরে আর জি করের নিহত চিকিৎসকের বাড়িতে প্রদীপ জ্বালিয়ে বিচারের দাবি তুলেছেন সুকান্ত। বিজেপির রাজ্য সভাপতি ফের বলেছেন, ‘‘নবান্ন অভিযানের সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে, নির্যাতিতার অত্যাচারীদের ফাঁসি চেয়ে যে আন্দোলন হবে, বিজেপি সেই আন্দোলনকে সমর্থন করবে। কাল ছাত্রদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপরে যদি একটাও পুলিশের লাঠি পড়ে, তা হলে বিজেপি চুপ করে বসে থাকবে না! প্রয়োজনে নিজেদের পতাকা নিয়ে আগামী দিন নবান্ন অভিযান করব।’’ তিনি এবং দলের আইনি শাখার আহ্বায়ক লোকনাথ চট্টোপাধ্যায় আইনজীবীদের নিয়ে আজ মুরলীধর সেন লেনে বিজেপির পুরনো দফতরে থাকবেন বলে জানিয়েছেন সুকান্ত।

আরও পড়ুন
Advertisement