BJP

দিলীপ, লকেট, বিস্তা-সহ দলের ১৬ সাংসদের আসন কতটা পোক্ত! রিপোর্ট তৈরি করছেন বিজেপি বিস্তারকরা

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি বিজেপি ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই শুরু করে দেয়। এ বার ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই সেই কাজের গতি বাড়ছে। তারই অঙ্গ বিস্তারক নিয়োগ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:২০
সব সাংসদের রিপোর্ট কার্ড তৈরি হবে।

সব সাংসদের রিপোর্ট কার্ড তৈরি হবে। — ফাইল চিত্র।

বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। আরও বছরখানেক আগে থেকে গত লোকসভা নির্বাচনে হেরে-যাওয়া আসনগুলিতে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। গোটা দেশের সঙ্গে বাংলারও ২৪টি হেরে-যাওয়া আসনের দায়িত্ব নেন এক এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এর মধ্যে ‘খুব কঠিন’ পাঁচটি আসন বাদ দিয়ে ১৯টিতে প্রায় দেড় বছর ধরে চলছে ‘লোকসভা প্রবাস যোজনা’ কর্মসূচি। এ বার ২০১৯ সালে জেতা আসনগুলির পরিস্থিতি পর্যালোচনার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিছু দিন আগেই প্রতিটি লোকসভা এলাকার জন্য এক জন করে বিস্তারক (সর্ব ক্ষণের কর্মী) নিয়োগ করা হয়েছে।

Advertisement

বাংলার ক্ষেত্রে বিজেপি গত লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসনে জিতলেও এখন তাদের সাংসদ সংখ্যা খাতায়কলমে ১৭। কারণ, বাবুল সুপ্রিয়ের পদত্যাগের পরে আসানসোল আসন তৃণমূলের দখলে। আবার ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁকেও বিজেপি আপাতত বাদ রাখছে। ফলে ১৬ সাংসদের রিপোর্ট কার্ডই আপাতত তৈরি হবে। এর মধ্যে চার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন।

বিজেপি সূত্রে খবর, বাংলায় লোকসভা কেন্দ্র ছাড়াও বিধানসভা ধরে ধরে বিস্তারক নিয়োগও শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই সে কাজ শুরু হয়ে গেলেও তা সম্পূর্ণ হয়নি। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তা চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে।

কলকাতায় অক্টোবরেই হয় বিস্তারক প্রশিক্ষণ শিবির।

কলকাতায় অক্টোবরেই হয় বিস্তারক প্রশিক্ষণ শিবির। — নিজস্ব চিত্র।

তবে লোকসভা ও বিধানসভা অনুযায়ী বিস্তারকদের কাজের ফারাক রয়েছে। দুই ধরনের বিস্তারকরাই সংগঠন বিস্তারের কাজ দেখবেন। এর পাশাপাশি লোকসভা ক্ষেত্রের বিস্তারকরা দলীয় সাংসদদের নিজের এলাকায় ‘পারফরম্যান্স’ কেমন ছিল, সেই রিপোর্ট তৈরির কাজও শুরু করেছেন। যা সরাসরি যাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে ফের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে আরও অনেক কিছুর সঙ্গে এই রিপোর্টও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বলেই বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।

বিজেপিতে নির্বাচনের জন্য বিস্তারক নিয়োগ শুরু করেন অমিত শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন বিজেপির সভাপতিও ছিলেন। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে ওই প্রক্রিয়া সফল হওয়ায় ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও তা প্রয়োগ করেন তিনি। দেশের সব আসনেই ভোটের অনেক আগে থেকেই বিস্তারক নিয়োগ করা হয়েছিল। প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই বিস্তারকদের রিপোর্টের উপরে ভরসা করা হয়েছিল। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে কলকাতায় এসে শাহ রাজ্যের বিস্তারকদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকও করেছিলেন। এ বারেও এমন একটি বৈঠক হয়েছে সম্প্রতি।

গত ৩০ অক্টোবর কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তারকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির হয়। সেখানেই আগামী কয়েক মাস তাঁদের কী কী করতে হবে, সে ব্যাপারে নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ছিলেন বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষেত্রে দেশের প্রধান নেতা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ। দু’দিনের শিবিরে একটি পর্বে বক্তা হিসাবে ডাক পেয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তবে আয়োজনের দায়িত্ব ছাড়া রাজ্য নেতাদের বিশেষ কোনও ভূমিকা ছিল না ওই শিবিরে।

কলকাতা ছাড়াও দেশের অন্য প্রান্তে বিস্তারক বর্গ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তাঁরা কাজও শুরু করে দিয়েছেন। ফলে বাংলায় তো বটেই, গত লোকসভায় বিজেপির জয়ী সাংসদদের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করবে বিস্তারকদের রিপোর্টের উপরে। ওই কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় ভাবেই বিজেপি বিস্তারক নিয়োগ দেখে। সব সাংসদকেই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ফের প্রার্থী হতে হবে। তাঁরা গত পাঁচ বছরে নিজের এলাকায় কেমন কাজ করেছেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু করার ক্ষেত্রে কী কী করেছেন, সংগঠনে কেমন ভূমিকা ছিল, সাংসদ তহবিলের অর্থ কতটা এবং কী ভাবে খরচ করেছেন তার যাবতীয় হিসাব নেওয়া হবে।’’

বিজেপির অনেক সাংসদকে নিয়েই দলের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় সংগঠন এবং মানুষের সঙ্গে সে ভাবে যোগাযোগ নেই, এমন অভিযোগে অভিযুক্ত সাংসদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আবার অনেকেরই স্থানীয় কর্মী থেকে শুরু করে ভোটারদের মধ্যেও বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। সব রকমের রিপোর্টই যাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। তবে ওই নেতা এমনও বলছেন যে, ‘‘শুধু ওই রিপোর্টের উপরেই ভিত্তি করে প্রার্থিতালিকা তৈরি হবে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। কারণ, এর বাইরেও অনেক সমীকরণ থাকে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। সে সব বিবেচনা করেই শীর্ষ নেতৃত্ব দেশের সর্বত্র প্রার্থী বাছাই করে থাকেন।’’

প্রসঙ্গত, যে সব আসনে বিজেপি গত বার জিততে পারেনি, সেখানে যাঁরা প্রার্থী ছিলেন তাঁদের সম্পর্কেও রিপোর্ট পাঠাবেন বিস্তারকরা। ফলে সেখানে প্রার্থী বদল হবে কি না সেটাও অনেকটাই বিস্তারকদের রিপোর্টের উপরে নির্ভরশীল।

তবে বিস্তারক নিয়োগের মূল কারণ রিপোর্ট তৈরি করা নয়। বিস্তারকদের মূল কাজ সংগঠনকে শক্তিশালী করা। তাঁরা সরাসরি রাজ্য সংগঠনের প্রধান সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকেই রিপোর্ট দেবেন। বাংলার যে সব আসনে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করেছে সেগুলিতে তো বটেই, যে সব জায়গায় অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে, সেখানে বিস্তারকদের দায়িত্ব হল ‘খামতি’ পূরণ। আবার যে সব জায়গায় বিজেপি একেবারেই শক্তি দেখাতে পারেনি, সেখানে বুথ স্তরে সংগঠন মজবুত করাই হবে কাজ। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘আমাদের বিস্তারকরা পুরোপুরি দলের অনুগত কর্মী। এমন কর্মীদের বাছাই করা হয়েছে, যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যে সব জায়গায় বুথ কমিটি নেই, সেখানে সেই কাজ শেষ করবেন। সেটা জেলা নেতৃত্ব তো বটেই, রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে।’’ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিস্তারক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিজেপিতে আসা সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যদের অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কোনও বেতন দেওয়া হবে না। তবে ওই সময়কালে তাঁদের থাকা-খাওয়া এবং ঘোরাফেরার যাবতীয় খরচ বহন করবেন রাজ্য নেতৃত্ব।

আরও পড়ুন
Advertisement