Suvendu Adhikari

‘লাভ জেহাদ’ নিয়ে আইন চান শুভেন্দু, দাবি ওড়াল তৃণমূল

দেশ জুড়ে কাযর্কর হয়ে যাওয়া নতুন দণ্ডবিধি (ন্যায় সংহিতা) নিয়ে প্রস্তাবের উপরে দ্বিতীয় ও শেষ দফার আলোচনা ছিল বৃহস্পতিবার। শাসক ও বিরোধীদের সেই বিতর্কে ‘লাভ জিহাদ’ প্রতিরোধ আইনের দাবি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৪ ০৮:২০
শুভেন্দু অধিকারী।

শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল ছবি।

রাজনৈতিক আবহে বদল আসছিলই। সেই পথেই এ বার ‘লাভ জিহাদ’ প্রতিরোধের কথাও উঠল রাজ্য বিধানসভায়। সেই সঙ্গেই দাবি উঠল জন্ম নিয়ন্ত্রণ আইনেরও। বিরোধী বিজেপির এই জোড়া দাবিই অবশ্য নস্যাৎ করে দিয়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস।

Advertisement

দেশ জুড়ে কাযর্কর হয়ে যাওয়া নতুন দণ্ডবিধি (ন্যায় সংহিতা) নিয়ে প্রস্তাবের উপরে দ্বিতীয় ও শেষ দফার আলোচনা ছিল বৃহস্পতিবার। শাসক ও বিরোধীদের সেই বিতর্কে ‘লাভ জিহাদ’ প্রতিরোধ আইনের দাবি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিতর্কের শেষ পর্বের বক্তা হিসেবে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘যে আইন কার্যকর হয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। রাজ্য সরকারকে বলব রাজ্যে এনআরসি এবং ‘লাভ জিহাদ’ প্রতিরোধে আইন করতে। আমরাও তাকে সমর্থন করব।’’

‘ন্যায় সংহিতা’র বিরোধিতা করে প্রস্তাবের উপরে বিতর্কে শুভেন্দুর এই মন্তব্য বিজেপির রাজনৈতিক অভিমুখ নিয়ে চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। লোকসভা ভোটের পর্যালোচনায় দলের বৈঠকে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘যারা আমাদের সঙ্গে আছেন, আমরা তাদের সঙ্গে আছি।’ রাজনৈতিক মত আরও নির্দিষ্ট করে তিনি বিজেপির সংখ্যালঘু শাখা তুলে দেওয়ার দাবিও করেছিলেন। সেই প্রশ্নে বিস্তর চাপানউতোরের মধ্যে এ দিন বিধানসভার ভিতরে তাঁর এই মন্তব্যে এ রাজ্যে বিজেপির নির্বাচনী ‘প্রস্তুতি’ই দেখছে রাজনৈতিক মহল। শুধু বিরোধী দলনেতাই নন, এ দিনের বিতর্কে ‘ন্যায় সংহিতা’কে সমর্থন করে গেরুয়া রাজনীতির আরও এক পুরনো দাবি ‘জন্মনিয়ন্ত্রণে আইনে’র প্রসঙ্গ ফিরিয়ে এনেছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল।

তৃণমূল অবশ্য পরে এই জোড়া দাবিকেই ‘অর্বাচীনের কথা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘এ সব নিয়ে বিজেপি দেশের অনেক জায়গায় ভোটের রাজনীতি করেছে। কিন্তু ভুলে গিয়েছে ‘লাভ জিহাদ’ প্রেম, মানবতায় বিশ্বাসী বাঙালির শব্দ নয়। এই মাটিতে শ্রীরামকৃষ্ণ, চৈতন্যদেবের। এখানে রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদের ভাষায় কথা না-বললে কী হয়, তা সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে তারা টের পেয়েছে। আবারও বুঝবে।’’

সরকার পক্ষের বিধায়কেরা প্রত্যাশিত ভাবেই ‘ন্যায় সংহিতা’র বিরোধিতা করে বক্তৃতা করেছেন। তৃণমূল বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘দণ্ডবিধি বদল করতে গিয়ে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কেই অগ্রাহ্য করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সন্ত্রাস দমনের যে আইন সুপ্রিম কোর্ট সরিয়ে রাখতে বলেছিল, তাকেই নতুন ধারায় নিয়ে আসা হয়েছে। হাতকড়া ব্যবহারের মতো যে কাজে নিষেধ রয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সেই ব্যবস্থাও রয়েছে নতুন দণ্ডবিধিতে।’’ তৃণমূল বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘এই আইন রুখতে রাজ্য সরকারের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো উচিত। এবং সংসদ বা বিধানসভার মতো রাস্তাতেও আন্দোলন করা প্রয়োজন।’’ তৃণমূলের দেবাশিস কুমারের কটাক্ষ, ‘‘স্বাধীনতার লড়াইয়ের সময়ে বিজেপি ব্রিটিশের দালালি করেছে। নিজেদের সেই ইতিহাস মুছতে আইন বদল করছে!’’

কেন্দ্রীয় দণ্ডবিধির সমর্থন ও তার প্রয়োজন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শুভেন্দু ও অগ্নিমিত্রা বাংলার আইনশৃঙ্খলার কথাই টেনে এনেছেন। শুভেন্দু বলেন, ‘‘পুলিশের হাত থেকে ক্ষমতা চলে যাচ্ছে বলে তৃণমূল আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। মিথ্যা মামলায় বিরোধীদের আর জড়াতে পারবে না। পুলিশকে দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে দল ভাঙাতে পারবে না।’’ অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘‘অনলাইনে অভিযোগ জানানো যাবে। তার জন্য তৃণমূলের সম্মতির জন্য কাউকে বসে থাকতে হবে না। এই ব্যবস্থা চালু হলে এ রাজ্যের সুরক্ষা ব্যবস্থার বেলুন চুপসে যাবে!’’

আলোচনার প্রস্তাবক হিসেবে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক কেন্দ্রের নতুন আইনকে ‘ভয়ঙ্কর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই আইনে অভিযুক্তকে হেফাজতে রাখার সময় অকারণ বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। ভাষা এবং অন্যান্য নানা জটিলতায় তদন্ত ও মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।’’ সেই সঙ্গেই তিনি জানিয়েছেন, ‘ন্যায় সংহিতা’ পর্যালোচনায় রাজ্য সরকারের গঠিত কমিটি উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে।

আরও পড়ুন
Advertisement