Anubrata Mondal

‘কেষ্টদার দুঃসময়ে পাশে ছিল কে?’ হোয়াট্‌সঅ্যাপে যুদ্ধ করে দাদার জন্য দিল্লি পাড়ি দুই তৃণমূল নেতার

দু’বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন বীরভূমের কেষ্ট। ‘দাদা’র পাশে শুরু থেকে কে ছিলেন, তা নিয়ে ঝগড়া তৃণমূলের দুই নেতার। দু’জনেই যাচ্ছেন দিল্লি। দু’জনেই জানাচ্ছেন, ফিরবেন অনুব্রতকে নিয়েই।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৩১

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

গরু পাচার মামলায় জামিন পেয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। দু’বছর পর সোমবারই সকন্যা বাড়ি ফিরতে পারেন তিনি। তাই নিয়ে জেলা তৃণমূলের মধ্যে সাজ সাজ রব। কেষ্টর বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িতে পড়ছে রঙের প্রলেপ। কিন্তু তারই মাঝে কেষ্টকে নিয়ে তাঁর দলের দুই গোষ্ঠীর কোন্দল প্রকাশ্যে। সৌজন্যে হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের যুযুধান দুই তৃণমূল নেতার বাগ‌্‌যুদ্ধ সামাজমাধ্যমে ভাইরাল। কে প্রথম থেকে কেষ্টর পাশে ছিলেন, কে তৃণমূল নেতার দুর্দিনে কটাক্ষ করেছিলেন, তা নিয়ে একে অন্যকে নিশানা করলেন দুই গোষ্ঠীর নেতা এবং অনুগামীরা।

Advertisement

আউশগ্রাম-২ ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল বেশ পুরনো। ‘কেষ্টদা’র জামিনের খবরে সেই দ্বন্দ্ব আবার চাগাড় দিয়েছে। বস্তুত, প্রশাসনিক ভাবে আউশগ্রাম পূর্ব বর্ধমান জেলার হলেও আউশগ্রাম বিধানসভাটি বীরভূমের বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। সেই সূত্রে দীর্ঘ দিন ধরে আউশগ্রামের সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলে এসেছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত। তাঁর জেলযাত্রার পর অবশ্য আউশগ্রামে তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে। আউশগ্রাম-২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে রামকৃষ্ণ ঘোষকে সরিয়ে আনা হয় কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আব্দুল লালনকে। লালন তার আগে ছিলেন ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি। অন্য দিকে, আউশগ্রাম-২ ব্লকের তৃণমূলের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি অরূপ মিদ্যার সঙ্গে লালনের ‘সুসম্পর্ক’ সুবিদিত। গত দু’বছরে ওই দু’জনের সংঘাত বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। অনুব্রতের জামিন মঞ্জুরের পর সেই ‘যুদ্ধ’ আবার প্রকাশ্যে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আউশগ্রাম তৃণমূলের হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপে অরূপ কেষ্টর জামিনের খবর লিখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গেই লালনকে কটাক্ষ করে অরূপ লেখেন, ‘‘মহাগুরুর জামিনের খবর পেয়ে গোটা আউশগ্রাম আনন্দে। শুধু পিতা-পুত্র বাদ।’’ ওই গ্রুপে লালনের তুরন্ত জবাব, ‘‘যখন কেষ্টদা জেলে গেল তখন ভাবল লালনের সব শেষ। কেষ্টদাকে বুড়ো সিংহ বলেছিলে। আজ আবার কেষ্টদা জেল থেকে বেরোচ্ছে বলে লাইন দিচ্ছ?...আমাদের তো একটাই বাবা। তাই এক জনকেই বাবা বলি।’’ তার জবাবে অরূপ লেখেন, ‘‘বেশি ফোঁস করার চেষ্টা করিস না। জনগণ নেউল হয়ে গেলে পালানোর পথ পাবি না।’’ আবার জবাব দেন লালন। লেখেন, ‘‘ঠিক যে ভাবে তুই ভাল্কি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিস।’’ এ ভাবেই চলতে থাকে দুই নেতার ‘হোয়াট্‌সঅ্যাপ তরজা’।

আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার অনুব্রতের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তৃণমূল নেতা জেলে যাওয়ার পরে দলের রাজ্য নেতৃত্ব জানিয়ে দেন সাংগঠনিক ভাবে আউশগ্রাম দেখবেন পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু পরে দেখা যায় আউশগ্রামের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল বীরভূম লবির। জেলযাত্রার পরেও কেষ্টকে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে সরায়নি তাঁর দল। ঘরে ফিরলে আবার কেষ্টই যে আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট এবং কেতুগ্রাম বিধানসভা এলাকায় দলের ব্যাটন হাতে নেবেন, সেটাই দস্তুর মনে করছেন দলীয় কর্মীরা। তার মধ্যে এই ‘অশান্তি’ নিয়ে অরূপের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কারও সঙ্গে কোনও সংঘাতে যাইনি। আমি দিল্লিতে আছি। জামিন হওয়ার পর কেষ্টদাকে নিয়ে যাব। আমি বরাবরই কেষ্টদার সঙ্গে ছিলাম। পরেও থাকব।’’ লালন জানিয়েছেন তিনিও দিল্লির পথে। সেখানে গিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারবেন ‘কেষ্টদা’ সোমবারই বাড়ি ফিরতে পারবেন কি না। অরূপের সঙ্গে হোয়াট্‌সঅ্যাপে দ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কেষ্টদাকে বলে ওকে আমিই তো তৃণমূলে নিয়ে এসেছি। ও আগে ছিল হার্মাদ।’’ লালন জানিয়েছেন তাঁর সঙ্গে ছেলে শেখ সঞ্জু-ও দিল্লি যাচ্ছেন অনুব্রতের জন্য।

আরও পড়ুন
Advertisement