Kashmir Terrorist Attack

‘বাঁচাল ঢোকার মুখে যানজট’

বর্ধমান থেকে পর্যটকদের একটি দল কাশ্মীরে গিয়েছেন। ৩৫ জনের সেই দলে রয়েছেন গলসির ইড়কোনা গ্রামের দেবরাজ।

কাজল মির্জা
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৪০
পহেলগামে সেনা বাহিনী।

পহেলগামে সেনা বাহিনী।

জঙ্গিদের গুলিতে রক্তস্নান করেছে যে উপত্যকা, সেই পহেলগামের বৈসরনের উপকণ্ঠে একটি হোটেলে কেটেছে বিনিন্দ্র রাত। দু’চোখের পাতা এক হয়নি। পহেলগাম ছাড়ার পড়েও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে গলসির পর্যটক দেবরাজ চন্দ্রকে। বেঁচে ফেরার জন্য বারবার অদৃষ্টকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। বুধবার ফোন করা হলে দেবরাজ বলেন, ‘‘পহেলগামে ঢোকার আগে যানজটে আমাদের গাড়ি আটকে গিয়েছিল। নিরাপত্তারক্ষীরা তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। তাঁরা গাড়ি না আটকালে হয়তো আমাদেরও জঙ্গিদের এ কে ৪৭ এর মুখে পড়তে হত।’’

বর্ধমান থেকে পর্যটকদের একটি দল কাশ্মীরে গিয়েছেন। ৩৫ জনের সেই দলে রয়েছেন গলসির ইড়কোনা গ্রামের দেবরাজ। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরাও যাচ্ছিলেন বৈসরন। বুধবার ফোনে তিনি বলেন, ‘‘জম্মু থেকে যখন পহেলগামে যাচ্ছিলাম, তখন রাস্তায় যানজট ছিল। বৈসরন ভ্যালিতে যাওয়ার কথা ছিল। পহেলগাম ঢোকার আধ ঘন্টা আগে নিরাপত্তারক্ষীরা যখন আমাদের গাড়ি আটকালেন, তখন ভেবেছিলাম তল্লাশি চলছে। কিছু লোক হিন্দিতে বলছিলেন, বৈসরন উপত্যকায় গুলি চলছে। প্রথমে ভেবেছিলাম ছোট বিষয়। একটু পরেই দেখি আতঙ্কে অনেকে ছোটাছুটি করছেন। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তখনই বুঝলাম বড় কিছু হয়েছে। রাতটা বৈসরণের কাছেই একটি হোটেলে কাটিয়েছি। কী ভাবে রাত কেটেছে বোঝাতে পারব না। বারবার আশঙ্কা হচ্ছিল, এই বুঝি জঙ্গিরা হামলা চালাল।’’ বুধবার গাড়িতে শ্রীনগরে ফিরেছেন দেবরাজরা। দেবরাজের বাবা শ্যামল জানান, দুপুর ২টো নাগাদ দেবরাজ ফোন করে তাঁকে বলেন, বৈসরণ উপত্যকার দিকে যাচ্ছেন তাঁরা। শ্যামলের কথায়, ‘‘তার ঘণ্টা খানেক পরে শুনি গুলি করে জঙ্গিরা ২৫ জন পর্যটকে খুন করেছে ওই বৈসরনেই। শুনে হাত-পা কাঁপছিল।’’

দেবরাজ বলেন, ‘‘হোটেলে সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারিনি। কখন ভোর হবে, বেরিয়ে আসব, সে কথা ভেবেছি। আজও গাড়িতে একটা ভয় কাজ করেছে। জানি না কখন কী ভাবে পৌঁছব।’’ তাঁর বাবার প্রার্থনা, ‘‘ছেলে অক্ষত শরীরে ঘরে ফিরে আসুক। ও-ই আমার একমাত্র ছেলে। পুত্রবধূ, নাতিরা ঘরে ওর অপেক্ষায় রয়েছে।’’

বর্ধমান শহরের বেশ কয়েক জন কাশ্মীরে আটকে রয়েছেন। তাঁরা কী ভাবে ফিরবেন বুঝতে পারছেন না। জঙ্গি হামলার কিছুক্ষণ আগে তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বৈসরন থেকে পহেলগামে ফিরেছেন। সেখানে পৌঁছে জঙ্গি-হানার খবর পেয়েছেন। বর্ধমানের পাভেল সাহা বলেন, "পহেলগাম থেকে ফেরার পরেই জঙ্গি-হানার খবর পেয়েছি। এখন আমরা শ্রীনগরে চলে এসেছি। চারদিকে শুনশান। দোকানপাট বন্ধ। ডাল লেকেও লোক নেই!"

বর্ধমানের এক দম্পতি অক্ষয় নন্দী ও পুনম চৌধুরী বলেন, ‘‘সমতলে নামার জন্য এখন ১৫ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া চাইছে চালকেরা। হোটেলেও লোক নেই। কী হবে সত্যিই বুঝতে পারছি না।" বর্ধমানের শুভঙ্কর সিংহ রায় বলেন, "ভূস্বর্গ যেন আতঙ্ক-স্বর্গ হয়ে গিয়েছে।" এ দিন বিকেলে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস কাশ্মীরে আটকে পড়া বেশ কয়েক জনের বাড়ি গিয়েছিলেন। তাঁদের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন। পর্যটকদের সঙ্গে ভিডিয়ো কলেও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘আতঙ্কের কিছু নেই। অসুবিধা হলে যোগাযোগ করতে বলেছি।’’

জেলাশাসকের দফতরের কর্মী অসীমকুমার গুঁই গিয়েছেন কাশ্মীরে। মেমারির দেবীপুর স্টেশনের কাছেই তাঁর বাড়ি। পরিবারের ছ’জন কাশ্মীরে যান। মঙ্গলবার পৌঁছন শ্রীনগরে। তিনি জানান, বুধবার জম্মুতে ‘কালা দিবস’ পালিত হয়েছে। প্রচুর বিএসএফ জওয়ান রয়েছেন রাস্তায়। তল্লাশি চলছে। তাঁরা ভাল রয়েছেন। ২৭ এপ্রিল তাঁদের কাটরা যাওয়ার কথা। বাড়ি ফেরার কথা ৩ মে। রাস্তায় বেরোনোর উপায় নেই। সব কিছু বন্ধ। কার্যত হোটেলে বন্দি থাকতে হবে।

আরও পড়ুন