Bardhaman

আবাস যোজনায় পাওয়া বাড়ি দখল করেছেন তৃণমূল নেত্রী! কোলে চেপে মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ অসুস্থ বৃদ্ধা

অসুস্থ বৃদ্ধাকে পাঁজাকোলা করে প্রশাসনিক ভবনে নিয়ে যান পাড়ার ছেলেরা। সঙ্গে ছিলেন বৃদ্ধার সহোদরা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অসহায়। মহকুমা শাসক বলেছেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন। আর আসতে হবে না।’’

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ ২৩:০২
বৃদ্ধাকে পাঁজাকোলা করে প্রশাসনিক দফতরে  নিয়ে আসেন এক যুবক।

বৃদ্ধাকে পাঁজাকোলা করে প্রশাসনিক দফতরে নিয়ে আসেন এক যুবক। —নিজস্ব চিত্র।

বিডিও অফিসের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। তৃণমূল নেত্রী যে ঘর ভাড়ায় নিয়ে দলীয় কার্যালয় করেছিলেন, সেই বাড়ি ফেরত পাননি। পাচ্ছেন না ভাড়ার টাকাও। তাই অসুস্থ শরীরে অন্যের কোলে চেপে বর্ধমান সদর মহকুমা শাসক (উত্তর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাসের দ্বারস্থ হলেন এক বৃদ্ধা। ওই ঘটনা শুনে তৃণমূলের বক্তব্য, দোষী প্রমাণিত হলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আইন আইনের পথে চলবে।

Advertisement

পূর্ব বর্ধমানের বৈকুণ্ঠপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের হ্যাচারি রোডের বাসিন্দা পুষ্পা চক্রবর্তী। তাঁর পরিবারের দাবি, ইন্দিরা আবাস যোজনায় পাওয়া পুষ্পার বাড়িটি ২০১৯ সালে ভাড়া নেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা মিতা দাস। সেখানে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় তৈরি হয়। প্রথম দু’বছর নিয়মিত টাকা পেয়েছেন পুষ্পা দেবী। সেই শেষ। তার পর থেকে আর ভাড়ার টাকা পাননি। তাঁর পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘‘এক কথায় জবরদখল করে রাখা হয়েছে ওঁর বাড়িটি।’’

এখন বয়সজনিত অসুখে ভুগছেন ওই বৃদ্ধা। বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বোন মমতা দেবী মাঝেমাঝে এসে তাঁর দেখাশোনা করেন। মমতার বাড়ি বুদবুদ এলাকায়। তিনি বলেন, ‘‘ভাড়া না পাওয়ায় চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে দিদি। তৃণমূলের মিতা দাসকে একাধিক বার জানানো হয়েছিল। বেশ কয়েক বার তাঁর কাছে বাড়িভাড়া চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’’ উপায়ন্তর না-দেখে পুষ্পা এই গোটা বিষয়টি নিয়ে বর্ধমান-২ ব্লকের বিডিওকে জানিয়েছিলেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু দিন পনেরো কেটে যাওয়ার পরেও কোনও কাজ-না হওয়ায় মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন বৃদ্ধা।

অসুস্থ বৃদ্ধাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পাঁজাকোলা করে প্রশাসনিক ভবনে নিয়ে যান তাঁর পাড়ার ছেলেরা। সঙ্গে ছিলেন সহোদরা মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অসহায়। মহকুমাশাসক বলেছেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন। আর আসতে হবে না।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, গত মাসে বর্ধমানের বড়শুলে বিডিও অফিসে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ‘জবরদখল করা’ ইন্দিরা আবাস যোজনার বাড়িটি ছেড়ে দেবেন তৃণমূল নেত্রী মিতা। অভিযোগ পেয়ে বিডিও দিব্যজ্যোতি দাস পঞ্চায়েতকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য। তদন্তের রিপোর্ট জমা দেবার পর বিডিও অফিসে বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েতপ্রধান মনুশ্রী মণ্ডল, অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যা মিতা এবং বাড়ির মালিক পুষ্পা। বৈঠক শেষে বিডিও জানিয়েছিলেন, পঞ্চায়েতের প্রাথমিক তদন্তের পর ‘ফাস্ট হেয়ারিং’ হয়েছে। পার্টি অফিসের নামে দখল করে রাখা ঘরটি ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই বাড়ি এখনও ফিরে পাননি বৃদ্ধা।

অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যার এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই নির্দেশ দিয়েছেন কোনও রকম বেআইনি দখলদারি চলবে না। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে আইনত দণ্ড পাবেন। দল এ রকম কোনও জিনিস বরদাস্ত বা সমর্থন করে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement