ছাত্রদের চুলের ছাঁট যেন ‘ছাত্রসুলভ’ হয়, নাপিতদের কাছে আবেদন করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ঠোঁটের উপরে সদ্য গোঁফের রেখা উঠেছে কারও। কেউ এখন থেকেই কোমল দাড়ি ‘ট্রিম’ করা শুরু করে দিয়েছে। হালফ্যাশনের তালে তাল মিলিয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র চুল কাটিয়েছে বিরাট কোহলির মতো। অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া আবার ‘পুষ্পা’র অল্লু অর্জুনের মতো চুলে রং করিয়ে গটগটিয়ে ঢোকে স্কুলে। কিন্তু চুলের ছাঁট নিয়ে এত মাথা ঘামালে পড়াশোনা করবে কখন? চিন্তায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। অধিকাংশ ছাত্রের চুলের ছাঁট ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষকের কাছে ‘কিম্ভূতকিমাকার’। স্কুলের সম্মান বজায় রাখতে এবং পড়ুয়াদের রুচিশীলতার পাঠ দিতে তাই এলাকার নাপিতদের ডেকে বৈঠক করলেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক। তাতে ঠিক হল, নতুন বছরে, নয়া শিক্ষাবর্ষে ‘শোভনীয় চুলের ছাঁটে’ দেখা যাবে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের।
পারুলিয়া কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয় পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী-২ ব্লক এলাকার নামী স্কুল। ২০১৩ সালে এই স্কুলের এক পড়ুয়া মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়। ২০১৭ সালে রাজ্যের সেরা স্কুলের স্বীকৃতি পায় পারুলিয়া কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয়। খেলাধুলো, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও সুনাম রয়েছে স্কুলের। স্কুলের বর্তমান পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। কিন্তু হালে পড়ুয়াদের চুলের ছাঁট দেখে বিড়ম্বনায় পড়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক সুব্রত সামন্ত। তিনি মনে করেন, ছাত্রদের চুল হবে ‘ছাত্রসুলভ’, তারকার মতো নয়। স্কুলের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে ছাত্রদের কেশসজ্জায় লাগাম টানতে এলাকার নাপিতদের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি। বস্তুত, তাঁর উদ্যোগে গত বৃহস্পতিবার সভার আয়োজন করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাতে প্রায় দেড় হাজার অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। এসেছিলেন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। ওই সভায় আমন্ত্রিত ছিলেন এলাকার ক্ষৌরকারেরাও। সেখানে দীর্ঘ আলোচনায় ঠিক হয়েছে, নতুন শিক্ষাবর্ষে ছাত্রদের নতুন চুলের ছাঁট হবে। সবাইকে ছোট ছোট করে চুল কাটাতে হবে। আর চুলে বাদামি, লালচে রং করা নৈব নৈব চ।
বৈঠকে উপস্থিত নাপিতদের কাছে স্কুলের মর্যাদার কথা তুলে ধরেন শিক্ষকেরা। তাঁরা জানান, এখন অধিকাংশ ছাত্রের চুলের ছাঁট ছাত্রসুলভ নয়। স্কুলের ঐতিহ্যেরও পরিপন্থী। ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক বলেন, “স্কুল মানে শুধু ইংরেজি বা অঙ্ক শেখা নয়। দু’-চার পাতা পড়াশোনা করা মানে সকলের কাছে ভাল হওয়া নয়। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিষ্টাচার, শৃঙ্খলাবোধ, রুচিশীলতা তৈরি করতে হয় এবং তাতে স্কুলের দায়িত্ব অনেকটাই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কোনও ছাত্রের মাথার চুলের বিসদৃশ ছাঁট বিদ্যালয়ের পরিবেশের পরিপন্থী হয়ে উঠবে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই সব ছাত্রের চুলের ছাঁটে লাগাম পরাতেই ব্যতিক্রমী সভা ডাকাতে হল।’’ বস্তুত, মাস কয়েক আগেও তিনি এলাকার নাপিতদের এই মর্মে বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘সমস্যা’র সমাধান হয়নি।
বৃহস্পতিবার নাপিতদের উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের জানানো হয়েছে, নতুন বছরে, নয়া শিক্ষাবর্ষে যেন কোনও পড়ুয়ার চুলের ছাঁট ‘অশোভনীয়’ না হয়। বস্তুত, সেলুনে গিয়ে তারা আবদার, অনুরোধ করলেও ‘নাপিতদাদা’রা যেন কোনও ভাবেই বাহারি ছাঁট না দেন, সে জন্য আবেদন করা হয়েছে। নাপিতেরা তাতে মাথা নেড়ে সায় দিয়েছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ এমন পদক্ষেপ করলে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন ‘নাপিতদাদা’রা।