মাঠে জড়ো আলুর বস্তা। বর্ধমানের ইদিলপুরে। ছবি: উদিত সিংহ।
সপ্তাহখানেক ধরে চড়ছিল তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মেঘলা আকাশ ও মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় গরম কমেছে অনেকটাই। ফলে, স্বস্তি মিলেছে। কৃষি দফতর জানায়, শনিবার পর্যন্ত যেটুকু বৃষ্টি হয়েছে, তা চাষের পক্ষে কার্যকরী। শুধু যে সব চাষি এখনও পেঁয়াজ ও আলু জমি থেকে তুলতে পারেননি, তাঁদের কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকেই দফায় দফায় হালকা বৃষ্টি হচ্ছে জেলা জুড়ে। শনিবারও সারা দিন তা চলেছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমানে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে জামালপুরে, প্রায় ১৭.৪ মিলিমিটার। এ ছাড়া, মেমারি ১ ব্লকে ১২.৩, কেতুগ্রাম ২ ব্লকে ১২, গলসি ১ ব্লকে ১০.৪, রায়না ১ ব্লকে ৯.৩, রায়না ২ ব্লকে ৮.৩, আউশগ্রাম ১ ব্লকে ৯.২ ও বর্ধমানে ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে কম বৃষ্টি মন্তেশ্বরে, ২.২ মিলিমিটার। শনিবার সকালে বৃষ্টির জন্য কালনার পাইকারি বাজারগুলিতে জোগান কম ছিল বলে জানা যায়।
কালনার চাষি ফরজ শেখ বলেন, ‘‘আনাজের জমিতে কাদা হয়ে যাওয়ায় ফসল তুলতে সমস্যা হয়েছে।’’ মন্তেশ্বরের লোহার গ্রামের আনাজ চাষি জারু ঘোড়ুই, সঞ্জয় রায়, প্রতাপ বাগেরা বলেন, ‘‘সারা বছর পটল, ঝিঙে, বেগুন, লঙ্কা, উচ্ছে, ঢেঁড়শ-সহ নানা আনাজ চাষ করি। গত দু’দিনে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে আনাজের গাছ ও ফুল-ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’ মন্তেশ্বর ব্লক কৃষি আধিকারিক হর্ষিত মজুমদার যদিও শনিবার বলেন, ‘‘এখনও যা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ক্ষতি খুবই কম।’’
কৃষি বিশেষজ্ঞ পার্থ ঘোষ জানান, হাতে গোনা কিছু চাষি যাঁরা এখনও জমি থেকে আলু, পেঁয়াজ তোলেননি, সেই সমস্ত জমিতে জল জমে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তা বাদ দিলে, এই বৃষ্টির বেশির ভাগ চাষের কাজে আসবে। বোরো ধানের জমিতে জল পেয়ে গাছ সতেজ হবে। তিল ও পাট চাষেও কাজে আসবে এই সময়ের বৃষ্টি। এক উদ্যানপালন বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘সম্প্রতি রোদ-গরমে আনাজের গাছ কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল। তা কমবে। আম, লিচুর ফলনেও সুবিধা হবে। তবে টানা মেঘলা পরিবেশেে জমিতে ছত্রাকের হামলা হলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।’’
গরমের হাত থেকে স্বস্তি মিলেছে বাসিন্দাদের। পূর্বস্থলীর বাসিন্দা গোপাল বসাকের কথায়, ‘‘কয়েক দিন আগেও গরমে খুব সমস্যা হচ্ছিল। এখন ঠান্ডা পরিবেশ।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আচমকা গরম থেকে ঠান্ডা আবহাওয়া তৈরি হওয়ায় জ্বর, গলাব্যথার মতো অসুখ হচ্ছে অনেকের। সতর্ক থাকতে হবে।