দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা। —ফাইল চিত্র।
অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিএসপি কর্তৃপক্ষের কোয়ার্টার্স লাইসেন্স দেওয়ার খসড়া (ড্রাফট) সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে (আনন্দবাজার সেটির সত্যতা যাচাই করেনি)। আপাতত ক্যাটাগরি ১ (৪০০ বর্গফুট) এবং ক্যাটাগরি ২ (৪৯৮-৬১৮ বর্গফুট) কোয়ার্টার্স লাইসেন্স দেওয়ার পথে সংস্থাটি। দ্রুত এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হবে
বলে শ্রমিক সংগঠনগুলির অনুমান। তবে, খসড়া প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সংগঠন ‘স্টিল এমপ্লয়িজ ফোরাম অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ কোয়ার্টার্সের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনও আন্দোলন করছে। ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোয়ার্টার্সের সংখ্যা প্রায় ১৯,১৪১টি। কোয়ার্টার লিজ় অথবা লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। ১৯৯৯ এবং ২০০৮ সালে মোট ২,৮৯৬টি কোয়ার্টার্স লাইসেন্স বা লিজ়ের মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে ফের ৯১৩টি কোয়ার্টার্স লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর পরে ২০২৩ সালে প্রায় ১,১০০ কোয়ার্টার্স অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের লাইসেন্সের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। ডিএসপির নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, লাইসেন্সের ভিত্তিতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের শুধুমাত্র ক্যাটাগরি ১ এবং ক্যাটাগরি ২ কোয়ার্টার্স ৩৩ মাসের জন্য দেওয়া হবে। ক্যাটাগরি ১ কোয়ার্টার্সের জন্য দেড় লক্ষ এবং ক্যাটাগরি ২ কোয়ার্টার্সের জন্য ৪ লক্ষ টাকা ‘সিকিউরিটি মানি’ জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। ক্যাটাগরি ১ এবং ক্যাটাগরি ২ এর লাইসেন্স ফি যথাক্রমে মাসিক ১,১০০ টাকা ও ১,৫৫০ টাকা। জলের জন্য ৭২ টাকা এবং ৮২ টাকা। সার্ভিস চার্জ ৩২ টাকা ও ৩৮ টাকা দিতে হবে। বিদ্যুতের বিল যথাক্রমে এক হাজার এবং দেড় হাজার টাকা দিতে হবে। তবে কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে বিদ্যুতের দর
অনুযায়ী সামঞ্জস্য করা হবে। এ ছাড়া, আবর্জনা সাফাইয়ের জন্য দুই
শ্রেণির ক্ষেত্রেই মাসে ৭০ টাকা করে দিতে হবে।
খসড়া অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁরা সবাই আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া, এখন কোয়ার্টার্সে বাস করেন এবং জুনের মধ্যে অবসর নেবেন, তাঁরাও কোয়ার্টার্সের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ও তাঁর স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে ছেলে বা মেয়ে যদি ক্যাটাগরি ২ কোয়ার্টার্সে বাস করেন, তাহলে তাঁদের তা ছেড়ে ক্যাটাগরি ১ কোয়ার্টার্সের জন্য আবেদন করতে হবে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত যে সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকে ক্যাটাগরি ২ কোয়ার্টার্সের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের মৃত্যুর পরে সেই কোয়ার্টার্সে থাকা ছেলেমেয়েদেরও তা বদলে ক্যাটাগরি ১ কোয়ার্টার্সে যেতে হবে। যাঁরা ক্যাটাগরি ৩, ৪ বা ৫ কোয়াটার্সে রয়েছেন, তাঁদেরও বদলাতে হবে। অনেকে নিজের অর্থ ব্যয় করে প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কার এবং কিছু ক্ষেত্রে সম্প্রসারণও করেছেন। তাঁরা সমস্যায় পড়বেন।
‘স্টিল এমপ্লয়িজ় ফোরাম অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র তরফে সুরেশ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, সব শ্রেণির কোয়ার্টার্স লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া চালুর আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তা না হওয়ায়, বহু অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকে সমস্যায় পড়তে হবে। নিজেরা যে কোয়াটার্সে রয়েছেন, তা ছেড়ে নতুন কোয়ার্টার্সে যেতে হবে। তা ছাড়া, আগের বার
নির্দিষ্ট টাকা জমা দিয়ে আবেদন করেও অনেকে কোয়ার্টার্স পাননি। দুর্গাপুর ইস্পাত কর্মচারী সঙ্ঘের সম্পাদক হৃষিকেশ সিংহের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ ক্যাটাগরি ২ বা তার থেকে বেশি ক্যাটাগরির কোয়ার্টার্সে বসবাসকারী সবাইকে ক্যাটাগরি ১ কোয়ার্টার্স দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা ঠিক নয়। বছরের পর বছর ধরে যাঁরা যে কোয়ার্টার্সে রয়েছেন, তাঁদের সেখানেই থাকতে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া, আরও কিছু বিষয় রয়েছে। তাঁর কথায়, “আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। আমাদের দাবি, ভবিষ্যতে যাঁরা অবসর নেবেন, তাঁদের সবার জন্য ভাল জায়গায় তিন কামরার কোয়ার্টার্স রেখে দিতে হবে।”
আইএনটিইউসি প্রভাবিত ‘হিন্দুস্থান স্টিল ওয়ার্কার ইউনিয়ন’-এর নেতা রজত দীক্ষিতের অভিযোগ, “ক্যাটাগরি ৩, ৪ বা ৫-এর বহু কোয়াটার্স বহিরাগতেরা দখল করে রেখেছে। বিনা পয়সায় জল, বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এই সব কোয়ার্টার্স লাইসেন্সের ভিত্তিতে অবসরপ্রাপ্তদের দেওয়া উচিত। তাহলে জল, বিদ্যুতের অপব্যবহার যেমন বন্ধ হবে, তেমনই ওই সব কোয়ার্টার্স থেকে ডিএসপির আয় হবে।”
ডিএসপির মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায় শুধু বলেন, “কোয়ার্টার্স লাইসেন্স দেওয়ার নিয়মনীতি চূড়ান্ত করেছেন কর্তৃপক্ষ।"