Burdwan University

জমে বহু কাজ, নতুন উপাচার্যে জট কাটার আশা

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, দায়িত্ব পাওয়ার পরে উপাচার্যকে এক সঙ্গে অনেকগুলি জট কাটাতে হবে। না হলে প্রতিষ্ঠান ‘স্তব্ধ’ হয়ে যাবে।

Advertisement
সৌমেন দত্ত
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৭
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

দেড় বছর পরে স্থায়ী উপাচার্য পেতে চলেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। শুক্রবার খড়্গপুর আইআইটির ভূতত্ত্ববিদ্যার (জিয়োলজি) অধ্যাপক শঙ্করকুমার নাথকে ওই পদে বেছে নিয়েছে রাজভবন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ আধিকারিকদের দাবি, কেন্দ্রীয় সংস্থা থেকে ‘লিয়েন’ নেওয়ার পরেই উপাচার্য পদে তিনি যোগ দেবেন। স্থায়ী উপাচার্য দায়িত্ব নিলে গত দেড় বছর ধরে চলা প্রশাসনিক ও শিক্ষা সংক্রান্ত নানা জটিলতা কাটার সম্ভাবনা রয়েছে। এগজ়িকিউটিভ কমিটির (ইসি) বৈঠক হওয়ার ক্ষেত্রেও শিক্ষা দফতর আর ‘বাধা’ হয়ে দাঁড়াবে না। নিয়মিত ইসি বৈঠক হলে দৈনন্দিন ধরে জমে থাকা সমস্যাগুলির স্থায়ী সমাধানের পথও মিলবে।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে শুক্রবারই স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের বার্তা এসেছে। নতুন উপাচার্যের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ হয়নি। আইআইটি থেকে লিয়েন নিতে কয়েক দিন সময় লাগবে। আশা করছি, চলতি সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় নতুন উপাচার্য পাবে।” গত বছর ৩০ জুন উপাচার্য পদে মেয়াদ শেষ হয় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিমাই সাহার। তার পরে টানা তিন সপ্তাহের বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও উপাচার্য ছিলেন না। উচ্চ শিক্ষা দফতর ও রাজভবনের নির্দেশে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপকেরা। শিক্ষা দফতর ও রাজভবনের মধ্যে যা নিয়ে মনোমালিন্য দেখা দেয়। রাজভবনের নির্দেশে নিয়োগ হওয়া অন্তর্বর্তী উপাচার্যের থেকে ‘ইসি’ করার ক্ষমতা রাজ্য সরকার কেড়ে নিয়েছিল। বার বার ‘ইসি’ ডেকেও ছাত্র-কর্মীদের বিক্ষোভে বাতিল করতে হয় অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, দায়িত্ব পাওয়ার পরে উপাচার্যকে এক সঙ্গে অনেকগুলি জট কাটাতে হবে। না হলে প্রতিষ্ঠান ‘স্তব্ধ’ হয়ে যাবে। প্রথমেই জাতীয় শিক্ষা নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চার বছরের সিমেস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ‘ইসি’তে পাশ করাতে হবে। সিলেবাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে ইসিতে। পূর্ব বর্ধমান, হুগলি ও বীরভূম জেলার ৭২টি কলেজে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী স্নাতকস্তরে পরীক্ষা দেন। তাঁদের মার্কশিট ও ‘জীবনপঞ্জি’ আন্তর্জাতিক স্তরের একটি সংস্থা তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তাদের বকেয়া কয়েক কোটি টাকা। এত দিন ইসি হয়নি বলে ওই সংস্থা টাকা পায়নি। সে কারণে পরীক্ষার ফল-সহ অন্য বিষয় নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাতে টালবাহানা করে বলে অভিযোগ। ফলে প্রতি বছর বা সিমেস্টারের ফল প্রকাশ নির্দিষ্ট সময়ে হয় না। এমনকি, ছাত্রছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশনেও চলতি শিক্ষাবর্ষে দেরি হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত দু’টি শিক্ষাবর্ষ ধরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে সাতটি বিভাগ চলছে কোনও স্থায়ী শিক্ষক ছাড়াই। শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু স্থায়ী উপাচার্য না থাকায়, নিয়োগ পদ্ধতি আটকে রয়েছে। নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নিলে সেই জটিলতাও কাটবে বলে মনে করা হচ্ছে। তেমনই, ওই সব বিষয় পড়ানোর জন্য নতুন ভবন নেই। কয়েক কোটি টাকা খরচ করে গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে নতুন ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ বার নতুন ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত বাকি কাজে গতি আসবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সূত্রে জানা যায়, টাকা থাকলেও প্রয়োজনীয় অনুমোদনের জন্য উন্নয়নের কাজ আটকে রয়েছে। আবার কাজ করার পরেও প্রায় চার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ঠিকাদার, ইমারতি সামগ্রীর বিক্রেতাদের। উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পরেই, আট তলা ভবনের বাকি তিন তলা তৈরির কাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা সংক্রান্ত ক্যাম্পাসের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি হস্টেলের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সংস্কারের জন্যে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ইসি-র অনুমোদন না থাকায় সে কাজ আটকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের দাবি, “দায়িত্ব নেওয়ার পরে কাজের পাহাড় চাপবে। দম ফেলার সময় পাবেন না নতুন উপাচার্য। কী ভাবে সে সব সামলান, তা দেখতে হবে।”

Advertisement
আরও পড়ুন