—প্রতীকী চিত্র।
শতবর্ষের পথে চলেছে গলসির ‘বাসন্তী অপেরা’। উদ্যোক্তাদের দাবি, আজ থেকে একশো বছর আগে এই যাত্রাদলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তখন গলসি ছিল এক ছোট্ট একটি জনপদ।
সাল ১৩৩০। তখন জনসংখ্যা বলতে সর্বসাকুল্যে হাজার দুই। গ্রামের বেশির ভাগই ছিলেন শ্রমের উপরে নির্ভরশীল। বাড়ি বাড়ি অর্থ সংগ্রহ করে বাসন্তী পুজো উপলক্ষে যাত্রাপালা প্রদর্শনী শুরু হয়েছিল গলসিতে। তৎকালীন সংস্কৃতিপ্রেমী ভূপেন্দ্রনাথ রায়ের উদ্যোগে তৈরি হয় বাসন্তী অপেরার পথচলা।
সেই সর্বজনীন বাসন্তীপুজো কমিটির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অসীমকুমার দত্ত বলেন, “আগে পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। আমাদের গ্রামে প্রধান উৎসব ছিল গাজন আর দুর্গাপুজো। বর্ষাকালে গাজন হত বলে যাত্রাপালা করা যেত না। বাড়ি বাড়ি দুর্গাপুজো হত বলে সময়ের অ ভাবে সেই পুজোতেও যাত্রাপালা করা যায়নি। সে কারণেই যাত্রা পরিবেশনের জন্য শুরু হয়েছিল সর্বজনীন বাসন্তী পুজো।”
গলসির হাটতলার (বর্তমানে গর্গেশ্বরতলা) প্রাঙ্গণে বাসন্তী পুজো উপলক্ষে প্রথম মঞ্চ বেঁধে যাত্রা পরিবেশন করেন সমসাময়িক শিল্পীরা। আধুনিক আলোকসজ্জা, মাইক ছাড়া নিজেরাই মঞ্চ তৈরি করে একের পর এক যাত্রা 'শঙ্ঘকূচুড়', 'ভিখারিশ্বর', 'অচল পয়সা', 'মা মাটির মানুষ' পরিবেশন করে তাক লাগিয়ে দেন তাঁরা। গ্রামের প্রবীণেরা জানান, সারা দিনের কাজ শেষ করে দলে দলে মানুষ হাজির হতেন যাত্রা দেখতে। রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত চলত যাত্রাপালা। কাঠের চৌকি পাতা অস্থায়ী মঞ্চ থাকত। দর্শকদের জন্য খড়ের উপরে ত্রিপল পেতে মোটামুটি আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা করা হত। রাতের অন্ধকারে ‘ডে লাইট’ ঝুলিয়ে চলত পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক নাটক। তখনও নারী চরিত্রেও দাপিয়ে অভিনয় করতেন গ্রামের পুরুষেরাই।
পরে বিপ্লবের সূচনা হয় যাত্রার মঞ্চে। ঝোলানো দৃশ্যপট বাতিল করে কাঠের কাঠামোতে কাপড়ের উপরে আঁকা সেট ব্যবহার শুরু হয়। আলোকসজ্জায় আসে অভিনবত্ব। ‘পেট্রোম্যাক্স’ জ্বালিয়ে আলোর কারসাজিতে দেখানো শুরু হয় বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। পরে গলসির গ্রামের লোকজন ছাড়াও আশপাশের গ্রামের শিল্পীরাও অভিনয় করেছেন। উদ্যোক্তারা জানান, এ বার বাসন্তী পুজোর শতবর্ষ উপলক্ষে ‘নটী বিনোদিনী’ ও ‘কলির দুর্গা ধরেছে ত্রিশূল’ যাত্রপালা পরিবেশিত হবে।
কমিটির সভাপতি, প্রণব দত্ত ও সম্পাদক সোমনাথ মুখ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখন আর সেই জাঁকজমক নেই। তবুও একশো বছর ধরে আজও বাসন্তী অপেরা অপেশাদার যাত্রাশিল্পীদের নিয়ে প্রতি বছর বাসন্তী পুজো উপলক্ষে যাত্রাপালা পরিবেশন করে। বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীরা বহু বাধা উপেক্ষা করে যাত্রার গৌরবময় ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছেন।”