babul supriya

Ballyganj and Asansol By-Elections: সুব্রতের থেকে ব্যবধানে পিছিয়ে, ‘বহিরাগত’ শত্রুঘ্নও ছাপিয়ে গেলেন বাবুলকে

শাসকদলের অন্দরে অন্যের ব্যবধানের ওঠা-পড়ায় বালিগঞ্জ ও আসানসোলে বাবুল ছিলেন ‘প্রতিপক্ষ’। শেষমেশ দুই কেন্দ্রের ফলাফল কী বলছে দেখুন।

Advertisement
সৌরভ নন্দী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ১৭:২৯
বালিগঞ্জ ও আসানসোল দুই কেন্দ্রেই বাবুল সুপ্রিয়কে হারিয়ে দিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও শত্রুঘ্ন সিন্হা

বালিগঞ্জ ও আসানসোল দুই কেন্দ্রেই বাবুল সুপ্রিয়কে হারিয়ে দিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও শত্রুঘ্ন সিন্হা

গত বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে বালিগঞ্জে জয়ের ব্যবধান ধরে রাখতে পারল না শাসক তৃণমূল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বালিগঞ্জ থেকে রাজ্যের প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জিতেছিলেন ৭৫ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে। সেখানে উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়ের জয়ের ব্যবধান কমে দাঁড়াল ২০ হাজার ২২৮। অন্য দিকে, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আসানসোলে বিজেপি-র টিকিটে দাঁড়িয়ে জেতা সেই বাবুলকে টপকে গেলেন উপনির্বাচনে ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হাও। বাবুল জিতেছিলেন দু’লক্ষের কিছু কম ভোটে। সেখানে শত্রুঘ্নের জয় এল তিন লক্ষের বেশি ভোটের ব্যবধানে।

দু’টি আসনেই তৃণমূলের জয় নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। কৌতূহল ছিল ব্যবধান নিয়ে। ঘটনাচক্রে, শাসকদলের অন্দরে অন্যের ব্যবধানের ওঠা-পড়ায় দুই কেন্দ্রেই বাবুল ছিলেন ‘প্রতিপক্ষ’।

উপনির্বাচনে সাধারণ মানুষের উৎসাহ কম থাকে। তার উপর প্রবল গরমে ভোট হওয়ায় অনেকেই ভোট দিতে যান না। বেশি কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকলেও এটাই মোটামুটি সারা দেশের দস্তুর। ভোটের পরেও একই সরকার থাকবে, একই প্রশাসন থাকবে, ক্ষমতার ভারসাম্য একই থাকবে ভেবেই কম মানুষ ভোট দিতে যান বলে মনে করেন রাজনীতির কারবারিরা। সেই কারণেই গত বারের তুলনায় বালিগঞ্জে ভোট শতাংশের হার কম হওয়া তৃণমূলের ভোট-ব্যবধান কমার মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনে বালিগঞ্জে ভোট পড়েছিল ৬০.৯৯ শতাংশ (তথ্য: জাতীয় নির্বাচন কমিশন)। এই উপনির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৪১.২৩ শতাংশ।

Advertisement

তবে উপনির্বাচনে ভোট শতাংশের হার কম হলেও যে ব্যবধান বাড়ানো যায়, তা গত বছর অক্টোবরে ভবানীপুর বিধানসভায় করে দেখিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুরে ভোটদানের হার ছিল যেখানে ৬১.৭২ শতাংশ, সেখানে উপনির্বাচনে তা কমে ৫৭.০৯ শতাংশ হয়েছিল। কিন্তু ওই কেন্দ্রে জয়ের ব্যবধান প্রায় ৩০ হাজার বাড়িয়েছিলেন মমতা। তবে শাসকদলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘বালিগঞ্জের সঙ্গে ভবানীপুরের তুলনা টানা যুক্তিযুক্ত নয়। ভবানীপুর উপনির্বাচনে ভোটদানের হার গত বিধানসভার তুলনায় মাত্র ৫ শতাংশ কমেছিল। কিন্তু বালিগঞ্জে তা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। আর ভবানীপুর উপনির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।’’ ওই নেতার বক্তব্য, মমতা স্বয়ং প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়তি উদ্দীপনা কাজ করে থাকতে পারে। তাই মমতার সঙ্গে বিজেপি ছেড়ে সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ-দেওয়া বাবুলের তুলনা টানা অনুচিত।

বালিগঞ্জে জয় হলেও ব্যবধান কমা নিয়ে বাবুল বলেন, ‘‘কয়েকটা জায়গায় ফল খারাপ হয়েছে। ঘরে ঘরে আমার নামে কুৎসা করেছে সিপিএম। কুৎসা করে কিছু হয় না। তবে কিছু লোক তো প্রভাবিত হতেই পারেন।’’ দক্ষিণ কলকাতায় তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস কুমারও বলেন, ‘‘ব্যবধান কমার কারণ খতিয়ে দেখবে দল।’’ তবে ঘনিষ্ঠ মহলে বাবুল মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ছ’বছর আগে (২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে) বালিগঞ্জে সুব্রত মুখোপাধ্যায় জিতেছিলেন ১৬ হাজারের মতো ভোটে। তার থেকে এ বার তিনি বেশি ব্যবধানেই জিতেছেন।

অন্য দিকে, আসানসোলেও ভোট শতাংশের হার কমেছে। গত লোকসভা নির্বাচনে আসানসোলে ভোট পড়েছিল ৭৬.৬২ শতাংশ। এই উপনির্বাচনে তা কমে হয়েছে ৬৬.৪২ শতাংশ। তার পরেও গণনা পর্ব শেষে শত্রুঘ্ন জিতলেন তিন লক্ষ তিন হাজার ২০৯ ভোটে।

প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, আসানসোলে বাবুলের জয়ের ব্যবধানকে টপকাতে পারবেন না শত্রুঘ্ন। তার কারণ হিসাবে ভোটদানের হার প্রায় ১০ শতাংশ কম হওয়ার পাশাপাশি প্রার্থী নির্বাচনকেও চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে আসানসোল থেকে প্রথম বার বিজেপি-র টিকিটে জিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে এ রাজ্যে পদ্মের ওজনদার নেতা হয়ে উঠেছিলেন বাবুল। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী করেছিল অভিনেত্রী মুনমুন সেনকে। যিনি তার পাঁচ বছর আগে বাঁকুড়ায় সিপিএমের বাসুদেব আচারিয়াকে হারিয়েছিলেন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

মুনমুনকে প্রায় ২ লক্ষ ভোটে হারিয়েছিলেন বাবুল। আর এই উপনির্বাচনে শত্রুঘ্নের বিপরীতে বিজেপি প্রার্থী করেছিল ‘আসানসোলের ঘরের মেয়ে’ অগ্নিমিত্রা পালকে। উপনির্বাচনে প্রচারপর্বের শুরু থেকেই শত্রুঘ্নকে ‘বহিরাগত’ বলে দাগিয়ে দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। যার প্রভাব ভোটবাক্সে পড়তে পারে বলেই অনেকে মনে করেছিলেন। তবে শাসকদলেরও পাল্টা যুক্তি ছিল, ফেব্রুয়ারি মাসেই আসানসোলের পুরভোটে ১০৬ আসনের মধ্যে ৯১ আসনে জয়লাভ করেছে তৃণমূল। ফলে শত্রুঘ্নকে ‘বহিরাগত’ বলে সেই আস্থার জায়গা ভাঙা যাবে না বলেই তাদের দাবি। বরং অবাঙালি-অধ্যুষিত আসানসোলে শত্রুঘ্নকে দাঁড় করানো ‘পরিণত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ বলেই তাদের অভিমত। শেষমেশ বিরোধীদের যুক্তি ধোপে টিকল না। ‘বিহারিবাবু’-র বাবুল-ব্যবধান ছাপিয়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেল তৃণমূল নেতাদের যুক্তিই।

আসানসোলে শত্রুঘ্নের বিরাট জয়ের পর বাবুল বলেন, ‘‘আসানসোলের মানুষের একটা অভিমান ছিল। শত্রুঘ্নের সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়। শত্রুঘ্ন এবং আমি মিলিয়ে এ বার দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)-র নেতৃত্বে আসানসোলের যাবতীয় উন্নতি করব।’’ একই সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, বিজেপি আসলে সব মিলিয়ে এ বার পাঁচ লাখ ভোটে পর্যুদস্ত হয়েছে। কারণ বিজেপি-র হয়ে তাঁর দু’লক্ষ ভোটে জয়ের ব্যবধান মুছে আরও তিন লক্ষ ভোট পেয়ে জিতেছে তৃণমূল। ঘনিষ্ঠদের কাছে তাঁর দাবি, এর থেকে প্রমাণ হয়— আসানসোলের মানুষ বিজেপিকে নয়, ভোট দিয়েছিল তাঁকেই।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

তবে বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, উপনির্বাচনে ভোটদানের হার ‘সন্তোষজনক’। তাদের ব্যাখ্যা, একে প্রবল গরম। তার উপর রমজান মাস। অনেকেই রোজা রেখেছেন। ফলে মহিলাদের ভোটদানের হারও কমেছে। বিরোধীদের অন্য অংশের দাবি, উপনির্বাচনে সাধারণ মানুষের সাড়া না-দেওয়ার প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের মতো ‘ভোট করিয়ে নিয়েছে’ শাসকদল। আসানসোলের বেশ কিছু জায়গায় গন্ডগোল হয়েছে। বারাবনিতে ভাঙচুর, ইটবৃষ্টি, সংবাদমাধ্যমের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

যদিও সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের তরফে ভোটে অশান্তির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন বলেছে, ভোট ‘শান্তিপূর্ণ’ই হয়েছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘রমজানের সময়। তীব্র গরম ও বিজেপি-র সব রকমের প্ররোচনা উপেক্ষা করে মানুষ দু’টি কেন্দ্রেই ভোট দিয়েছেন। বিজেপি-বিরোধী শক্তির মূল স্তম্ভ তৃণমূলের পক্ষে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement