প্রতীকী ছবি।
মধ্যমগ্রামে বা নিউটাউনে একটি ফ্ল্যাট পাওয়া গেলে তাঁর সঙ্গী যুবকের চাকরির সুবিধা হতো। তবে এর জন্য যৌথ ব্যাঙ্ক ঋণ তাঁরা কিছুতেই পাবেন না। ‘‘স্বাধীনতার তিন বছর বাদেও তাই সমস্যা লেগেই আছে’’, বলছিলেন কলকাতার এক সমকামী যুগলের অন্যতম অনীশ রায়চৌধুরী।
১৬০ বছর আগের কালা আইন ৩৭৭ ধারা বা অপ্রাকৃতিক যৌনতার তকমা সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করার পরেও সমস্যা দূর হয়নি। তিন বছর আগে ২০১৮-র ৬ সেপ্টেম্বর ৩৭৭ ধারা অপরাধের তকমামুক্ত করার দিনটিকে প্রায় ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে দেখলেও তাই গলার কাঁটার মতো অস্বস্তিও কম নয়।
তবু এ দিনই বহুত্বকে বরণ করার কথা বলে এক রকম ঐতিহাসিক ঘোষণা করেছে একটি বহুজাতিক ব্যাঙ্ক। ‘দিলসেওপেন’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে সমপ্রেমী জুটিদের উদ্দেশে তাদের বার্তা, এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর গ্রাহকেরা আপনাদের সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে একযোগে অ্যাকাউন্ট খুলুন! সেই সঙ্গে নিজের সঙ্গী বা সঙ্গিনীর নাম ‘সেভিংস অ্যাকাউন্টে নমিনি’ হিসেবেও রাখতে পারেন সমপ্রেমীরা। কয়েক দিন আগে এই সেপ্টেম্বরেই মাদ্রাজ হাই কোর্টের একটি রায়ও সমপ্রেমী যুগলদের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিবারের নিখোঁজ ডায়েরির ভিত্তিতে ঘরছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক সমপ্রেমী যুগলদের পুলিশি হেনস্থা বন্ধ করতে বলেছে আদালত। মাদ্রাজ হাই কোর্টের বক্তব্য, পুলিশ বা প্রশাসনের যৌন সংখ্যালঘু বিষয়ে সচেতনতার অভাব পীড়নের অজুহাত হতে পারে না। তবে পশ্চিমবঙ্গেও সমপ্রেমী নারীপুরুষ যুগলদের পুলিশি হেনস্থা বিরল নয়।
কলকাতার আইএসআইয়ের প্রাক্তনী বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা বহুজাতিক সংস্থার কর্মী সুদীপ্ত পাল মনে করছেন, সমপ্রেমীদের সমস্যা থাকলেও অনেক কিছুই ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। ‘‘আমাদের সম্পর্কটা ভিন গ্রহের নয়! আর পাঁচটা যুগলের ভালবাসার মতোই না-পাওয়ার কষ্টে রক্তক্ষরণ, কাছে পাওয়ার আবেশে একই তৃপ্তি থাকে। কিন্তু এটা এখনও সমাজকে বুঝিয়ে বলা দরকার।’’ 'ভালো না-বাসার গল্প’ বলে একটি বাংলা উপন্যাসে এই কথাগুলো বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন তিনি। সমকামী এক যুগলের জীবনের নানা মোড় মেলে ধরেছেন তিনি। কর্পোরেট অফিসে এলজিবিটিকিউদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সক্রিয় সুদীপ্তের মতে, ‘‘তিন বছর আগের সুপ্রিম কোর্টের রায় আমাদের হাত শক্ত করেছে।’’
ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ-সহ দক্ষিণ এশিয়ার সমকামী-রূপান্তরকামীদের একটি মঞ্চ ‘সায়ন’ এ দিনই অনলাইন আসরে নিজেদের কষ্ট, যন্ত্রণা ভাগ করে নিতে এসেছিল। এখনও কাজের জায়গায় বৈষম্যের ভয়ে সমকামীরা অনেকে পরিচয় গোপন রাখেন। উত্তরবঙ্গের দুই যুবক রবি-বিনন্দন বলছিলেন, সমকামী বলেই পরিবার থেকে তাঁরা বিচ্ছিন্ন। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির পরিস্থিতি আরও সমস্যার। মুলতানের রূপান্তরকামী নারী সারো আলি হতাশায় প্রায়ই দেশ ছাড়ার কথা ভাবেন। বাংলাদেশের তনভির রউফ এবং জুবের ব্রিটিশ আমলের আইন ৩৭৭ ধারায় অপরাধী সাব্যস্ত হতে পারেন। তাই দেশ ছেড়ে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে গিয়েছেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক, সমাজকর্মী বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘৩৭৭ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় মাইলফলক। কিন্তু উপমহাদেশে সমপ্রেমীদের সমানাধিকারের লড়াই চলছেই।’’