R G Kar Hospital Incident

আরজি করের মর্গে রাখা মৃতদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি! ২০০ কোটির দুর্নীতি কি দেহাংশ পাচার করে?

সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের মর্গে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির দেহ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবাধে অস্ত্রোপচার করে বার করে নেওয়া হয় বলে তদন্তে প্রাথমিক সূত্র মিলেছে।

Advertisement
শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:১৮
আরজি কর-কাণ্ডে বিক্ষোভ।

আরজি কর-কাণ্ডে বিক্ষোভ। —ফাইল ছবি।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির কারবার গত কয়েক বছরে ফুলেফেঁপে উঠেছিল বলে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, এই হাসপাতালের দুর্নীতির তদন্তে নেমে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির বেশ কিছু মর্গ কার্যত দুর্নীতির আড়ত হয়ে উঠেছে। এমনকি, তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, গত সাত বছরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে অন্তত ২০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত মিলেছে। কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালকেও এ ক্ষেত্রে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।

সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের মর্গে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির দেহ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবাধে অস্ত্রোপচার করে বার করে নেওয়া হয় বলে তদন্তে প্রাথমিক সূত্র মিলেছে। এক একটি অঙ্গের দর অন্তত ৪ থেকে ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ওঠে। শুধু অন্য রাজ্যেই নয়, একটি পড়শি দেশেও বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের মর্গ থেকে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচার করা হত বলে তদন্তকারীরা কিছু তথ্য পেয়েছেন। তাঁরা জানতে পারছেন, ইদানীংকালে রাজ্যেও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবদেহের হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, কিডনির চাহিদা বেড়েছে। মূলত চিকিৎসা শিক্ষায় এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজে লাগে।

তদন্তকারীদের কথায়, আর জি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় মূল অভিযোগকারী আখতার আলির সঙ্গে কথা বলেও মর্গ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির কারবারের প্রাথমিক কিছু সূত্র মিলেছে। ওই সূত্রের ভিত্তিতে আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়। তদন্তকারীদের দাবি, ওই দু’জনকে তিন দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বেআইনি অঙ্গ-ব্যবসার জোরালো সূত্রই মিলছে।

আর জি কর হাসপাতালের মর্গে গত সাত বছরের ময়না তদন্ত এবং বেওয়ারিশ দেহের নথি সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই। ওই নথিতে কিছু অসঙ্গতিও পাওয়া গিয়েছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। তবে এই গরমিলটুকু তাঁরা এখন ‘হিমশৈলের চূড়া’ বলে দেখছেন।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক কালে দক্ষিণবঙ্গের একটি সরকারি হাসপাতালের মর্গ থেকে মৃতদেহ বেআইনি ভাবে বার করার সময়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে যান কয়েক জন। এই ঘটনায় হাসপাতালের বড় কর্তারাও জড়িয়ে ছিলেন বলে অভিযোগ। যদিও স্থানীয় ডোমের উপরে চটজলদি দায় চাপানো হয়। শেষমেশ ধামাচাপা পড়ে যায় বিষয়টি। তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, রাজ্যের বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকদের একাংশ ওই বেআইনি কাজে জড়িত বলে প্রাথমিক সূত্র পাওয়া যাচ্ছে এবং ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সন্দীপের জড়িত থাকার ইঙ্গিত মিলছে।

অজ্ঞাতপরিচয়ের দেহ সাধারণত সাত দিন পেরোলে পুড়িয়ে দেওয়া নিয়ম। আর আইন অনুযায়ী কোনও অজ্ঞাতপরিচয়ের দেহ থেকে অঙ্গ নিতে হলে স্বাস্থ্য ভবনের ছাড়পত্র প্রয়োজন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ডাক্তারদের সিন্ডিকেটই বেআইনি অঙ্গ-ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত বলেই অভিযোগ।

আরও পড়ুন
Advertisement