অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের পাল্টা কর্মসূচি হিসাবে ‘বঞ্চিত’দের নিয়ে সভা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপির সেই সভার দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও সেখানে গিয়ে বক্তৃতা করার কথা বলে কেন্দ্রের শাসকদলকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে এসে প্রকাশ্য বিতর্কে অংশ নেওয়ার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও। শনিবার রাজভবনের সামনে ধর্নামঞ্চ থেকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকেও ফের কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
শনিবার সন্ধ্যায় বক্তৃতা করতে গিয়ে অভিষেক বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা যে দিন সভা করবেন, কলকাতার যে প্রান্তে করবেন, দু’ঘণ্টার ব্যবধানে বলবেন। আমি সেখানে যাব, তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে মানুষকে বলব, কে সত্য কথা বলছে, আর কে মিথ্যা!” সেই সভায় গিয়ে তিনি ‘বঞ্চনা’র খতিয়ান তুলে ধরতে চান বলেও জানিয়েছেন অভিষেক।
প্রসঙ্গত, শনিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতির পাশে বসেই শুভেন্দু জানান, রাজ্যের বহু মানুষ কেন্দ্রীয় সুবিধা পাওয়ার ‘যোগ্য’ হলেও পাননি। পুজোর পর এ রকমই প্রায় এক লক্ষ মানুষকে কলকাতায় নিয়ে আসবেন তিনি। তাঁরা জানাবেন নিজেদের ক্ষোভ। শুভেন্দু এ-ও জানান যে, তিনি চান, ওই মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সম্মতি দেন জ্যোতিও। এ বার সেই মঞ্চে গিয়ে পরিসংখ্যান তুলে ধরার কথা বললেন অভিষেক।
শনিবার সারা দিনে রাজ্যপালের কর্মসূচি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। দার্জিলিঙে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ছাড়া বোসের আর কোনও কর্মসূচি ছিল না, এমনটা দাবি করে অভিষেক রাজ্যপালের উদ্দেশে বলেন, “আপনার যদি একটাই কর্মসূচি ছিল, তবে আপনি কলকাতায় এলেন না কেন?” তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজ্যপালের বৈঠকের নির্যাস জানিয়ে অভিষেক দাবি করেন যে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে রাখা যে ‘অনৈতিক’ তা রাজ্যপাল স্বীকার করেছেন। শনিবার দার্জিলিঙের রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূলের তিন প্রতিনিধি— রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এবং দুই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র।
রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কল্যাণ বলেন, ‘‘রাজ্যপালের সঙ্গে যা আলোচনা হয়েছে, তা থেকে দু’টি নির্যাস উঠে এসেছে। এক, তিনি খুব তাড়াতাড়ি কলকাতায় ফিরবেন। দুই, তিনি বলেছেন, বাংলার পাওনা নিয়ে তাঁর যা কথা বলার তিনি বলবেন। কিন্তু এর মধ্যে যদি কোনও রাজনৈতিক বাধা থাকে, তা হলে তিনি কিছু করতে পারবেন না।’’ এই ‘রাজনৈতিক বাধা’ নিয়ে রাজ্যের বিজেপি সাংসদ-বিধায়কদের আক্রমণ করেন অভিষেক। অভিযোগ তোলেন যে, বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের জন্যই রাজ্যের মানুষ তাঁদের ‘প্রাপ্য’ টাকা পাচ্ছেন না। রাজ্যপাল না-আসা অবধি যে আন্দোলন চলবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
রাজ্যপাল বোস অভিষেকের ভূয়সী প্রসংশা করেছেন বলেও জানিয়েছেন কল্যাণ। তিনি তরুণ বয়সের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শরদ পওয়ারের রাজনৈতিক মেজাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন অভিষেকের। শ্রীরামপুরের সাংসদের দাবি, রাজ্যপাল বলেছেন, অভিষেক দেশের আগামী দিনের নেতা। এই বিষয়ে অবশ্য ধর্নামঞ্চ থেকে কোনও মন্তব্য করেননি অভিষেক।