SSC Recruitment Case Victims

ছেলে যখন বলে ‘স্কুলে যাও’, কী বলবেন বুঝে পান না! সন্তানকোলে উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতার মিছিলে

আলিপুরদুয়ারের এক স্কুলে সংস্কৃত পড়াতেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার চাকরিহারার তালিকায় রয়েছেন প্রতিমাও। চাকরিহারাদের আন্দোলনে শামিল হতে আলিপুরদুয়ার থেকে সন্তানকে কোলে নিয়ে কলকাতায় এসেছেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৫৬
বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় সন্তান কোলে নিয়ে চাকরিহারাদের ভিড়ে আলিপুরদুয়ারের প্রতিমা রায়।

বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় সন্তান কোলে নিয়ে চাকরিহারাদের ভিড়ে আলিপুরদুয়ারের প্রতিমা রায়। —নিজস্ব চিত্র।

কোলে আড়াই বছরের সন্তান। মুখে একরাশ হতাশা, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ। কাঁধে একটা ছোট ব্যাগ। বৃহস্পতিবার ধর্মতলা চত্বরে চাকরিহারাদের মিছিলের ভিড়ে মিশে ছিলেন মাঝবয়সি ওই মহিলা। পরিচয় জানতে চাওয়ায় প্রথম উত্তরটিই এল, ‘‘আমি স্কুল শিক্ষক ছিলাম।’’ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে পেশাগত পরিচয়ের সঙ্গে ‘ছিলাম’ যোগ করতে হচ্ছে তাঁকে।

Advertisement

নাম প্রতিমা রায়। স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর ২০১৬ সালে প্যানেলে চাকরি পান তিনি। বাড়ি আলিপুরদুয়ার জেলায়। সেখানে মাঝেরডাবরি হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ছিলেন সংস্কৃতের শিক্ষিকা। আড়াই বছরের সন্তানকে নিয়ে আলিপুরদুয়ার থেকে চলে এসেছেন কলকাতায়। পদাতিক এক্সপ্রেসে চেপে আজ সকালেই পৌঁছেছেন শহরে। শামিল হয়েছেন চাকরিহারাদের আন্দোলনে। ধর্মতলায় কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, প্রতিমার স্বামীও সরকারি কর্মচারী। কলকাতায় থাকেন তিনি। শ্বশুরবাড়ির বাকি সদস্যদের থেকে দূরে প্রতিমা থাকেন আলিপুরদুয়ারে।

সন্তানকে এখনও স্কুলে ভর্তি করাননি। দৃশ্যত কিছুটা হতাশ প্রতিমা বললেন, “এই দু’দিনে বাচ্চাটাও বুঝে গিয়েছে আমি স্কুলে যাচ্ছি না।” প্রতিমার স্কুল শুরু হয় বেলা ১১টা থেকে। এত দিন স্কুলে যাওয়ার সময় তাঁর মনে হত, ঘরে ছোট সন্তান রয়েছে। বাড়িতে থাকতে পারলে হয়ত একটু সুবিধাই হবে। গত কয়েক দিনেই সেই ধারণা বদলে গিয়েছে তাঁর। স্কুলে যাওয়ার সময় এত দিন ছেলেকে বলে যেতেন, “স্কুলে যাচ্ছি, ভাল ভাবে থাকবে।” গত কয়েক দিন ধরে ছেলেকে আর সে কথা বলার দরকার পড়ে না তাঁর। বাড়িতেই থাকছেন। এখন ওই সন্তানতেও তাঁকে বলছে, “স্কুলে যাও, স্কুলে যাও।” আড়াই বছরের ওই শিশু আইন-আদালত বোঝে না। বোঝার কথাও নয়। সকাল বেলা মা স্কুলে যাচ্ছে, এটা দেখাই তার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। মা দিনের বেলা বাড়িতে থাকছেন, এই দৃশ্য দেখার অভ্যাস নেই তার। ছেলে যখন স্কুলে যেতে বলে, তখন কী উত্তর দেবেন ভেবে পান না প্রতিমা।

চাকরিহারাদের মিছিলে হাঁটার সময় কাঁধের ব্যাগে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিলেন প্রতিমা। সেখান থেকেই ছেলেকে মাঝে মাঝে খাওয়াচ্ছিলেন। প্রতিমার বক্তব্য, “আমরা তো অযোগ্য নই। আমাদের যখন চাকরি গিয়েছে, তা হলে প্রমাণ করে দিক আমরা অযোগ্য।” প্রতিমা একা নন, প্রায় ২৬০০০ চাকরিহারার মধ্যে এমন আরও অনেকেই রয়েছেন। তাঁদের অন্যতম প্রতিনিধি হয়ে বৃহস্পতিবারের মিছিলে থেকে গেলেন প্রতিমা।

Advertisement
আরও পড়ুন