Jadavpur University Student Death

কেন ওই রাতে জয়দীপকে ফোন করেছিলেন, জানালেন যাদবপুরের দ্বিতীয় বর্ষের সেই পড়ুয়া

ঘটনার রাত পৌনে ১২টায় যাদবপুরের মেন হস্টেলের এক আবাসিকের কাছে থেকে ফোন পান জয়দীপ ঘোষ। কিন্তু তাঁকে ঘটনার কথা জানাল কে? কেনই বা তাঁকে সেই ঘটনার কথা জানানো হল? বললেন সেই পড়ুয়া।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৩ ১৪:১০
জয়দীপ ঘোষ (বাঁ দিকে)। যাদবপুরের প্রধান ছাত্রাবাস (ডান দিকে)।

জয়দীপ ঘোষ (বাঁ দিকে)। যাদবপুরের প্রধান ছাত্রাবাস (ডান দিকে)। — ফাইল ছবি।

পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র জয়দীপ ঘোষকে। তিনি দাবি করেছেন, ফোন পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ছাত্রাবাসে প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর রাতে কে জয়দীপকে ফোন করেছিলেন? কেনই বা তাঁকে ফোন করা হয়েছিল? জয়দীপকে ফোন করা সেই পড়ুয়ারই সন্ধান পেল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি জানিয়েছেন, কেন ওই রাতে জয়দীপকে ফোন করা হয়েছিল। অন্য দিকে, পুলিশ সূত্রে খবর, ওই রাতে হস্টেলে ছিলেন, এমন কয়েক জন আবাসিক পড়ুয়াকে যাদবপুর থানায় তলব করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মৃত ছাত্র হস্টেলের যে ফ্লোরে থাকতেন, সেই ফ্লোরের আবাসিকও রয়েছেন। তাঁদের কয়েক জনের দাবি, ওই সময় মেস কমিটির বৈঠকে তাঁরা হাজির ছিলেন। এক পড়ুয়া বারান্দা থেকে নীচে পড়ে গিয়েছে শুনে তাঁরা অকুস্থলে যান।

Advertisement

গত ৯ অগস্ট মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের তিন তলার বারান্দা থেকে নীচে পড়ে মৃত্যু হয় এক প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার। পুলিশের দাবি, র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন মৃত ছাত্র। তারই তদন্তে নেমে একের পর এক গ্রেফতারির ঘটনা চলছে। ওই রাতে হস্টেলে ঢুকতে পুলিশকে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র জয়দীপকে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দিন রাত পৌনে ১২টা নাগাদ জয়দীপকে ফোন করেছিলেন মেন হস্টেলের এক আবাসিক। কিন্তু কেন? আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করে সেই আবাসিকের সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক জন পড়ুয়া। তাঁর দাবি, হস্টেলের বারান্দা থেকে কেউ পড়ে গিয়েছে, এটা জানার পর নিজের ঘরে এসে তিনি ‘জয়দীপদা’কে ফোন করেছিলেন অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য। সম্প্রতি ওই পড়ুয়ার চোখে সংক্রমণ হয়েছিল। তখন জয়দীপ অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে দিয়েছিলেন। সেই ধারণা থেকেই ঘটনার রাতে পড়ুয়ার মোবাইল থেকে ফোন গিয়েছিল জয়দীপের কাছে। অন্তত এমনটাই দাবি ওই পড়ুয়ার।

পড়ুয়া জানিয়েছেন, ঘটনার দিন রাতে তিনি মেস কমিটির বৈঠকে ছিলেন। হইচইয়ের আওয়াজ শুনে বাইরে আসেন। উপর থেকে কেউ একজন জানান, বারান্দা দিয়ে কোনও পড়ুয়া পড়ে গিয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে ওই পড়ুয়ার দাবি, ঘটনাস্থল থেকে নিজের রুমে ফিরে যান। সেখান থেকে জয়দীপকে ফোন করে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে দেওয়ার কথা বলেন।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে তো অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকে। পড়ুয়ার দাবি, তাঁর সে কথা জানা ছিল না। যে হেতু জয়দীপ আগেও এক বার তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে দিয়েছিলেন, তাই ওই রাতে আবার অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে তাঁর ফোন গিয়েছিল জয়দীপের কাছেই। জানা গিয়েছে, অ্যাম্বুল্যান্স যখন হস্টেলে পৌঁছয়, তত ক্ষণে পড়ুয়াকে ট্যাক্সিতে কেপিসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই পড়ুয়ার আরও দাবি, পড়ে যাওয়ার ঘটনার পর হস্টেলে প্রথম বর্ষের ছাত্রেরা উদ্বেগে ভুগতে শুরু করে। তাই তিনি হাসপাতাল না গিয়ে ওই পড়ুয়াদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু জয়দীপ সেই সময় কী করছিলেন, তা তিনি জানেন না।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, ঘটনার দিন রাত ১২টা নাগাদ দু’জন যাদবপুর থানায় আসেন। তাঁরা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং হস্টেলের আবাসিক বলে পরিচয় দিয়ে জানান, কিছু ক্ষণ আগে এক জন বারান্দা থেকে নীচে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। হস্টেলের গেটের কাছে গিয়ে পুলিশকর্মীরা জানতে পারেন, এক জনকে জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর পরে পুলিশ হস্টেলে ঢুকতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই রাতে যাঁরা পুলিশকে হস্টেলে ঢুকতে বাধা দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জয়দীপ।

আনন্দবাজার অনলাইনকে ওই দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া নিজের অভিজ্ঞতাও জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, প্রথম বর্ষে পড়াকালীন তিনি যখন প্রথম বার হস্টেলে থাকতে এসেছিলেন, তাঁকেও সিনিয়রদের খারাপ ব্যবহারের মুখে পড়তে হয়েছিল। পরিস্থিতি এমনই হয়েছিল যে, নবাগত পড়ুয়া এমনই ভাবছিলেন, কী করে এখানে থাকবেন তিনি! পরে অবশ্য সকলের সঙ্গেই সম্পর্ক স্বাভাবিক হয় তাঁর। বর্তমানে যাদবপুরের মেন হস্টেলেই থাকছেন তিনি।

আরও পড়ুন
Advertisement