Bangladesh border

অশান্ত বাংলাদেশ, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিতে জমি সমস্যা কাটাতে একযোগে পদক্ষেপ কেন্দ্র-রাজ্যের

নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কাঁটাতার দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সুরক্ষিত করার বিষয়টি পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে একাধিক বার আলোচনায় এসেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৪ ১৬:০৪
A coalition of central and state governments to settle land for barbed wire fencing on the Bangladesh border

—প্রতীকী ছবি।

হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অশান্ত পরিমণ্ডল খানিকটা স্তিমিত হলেও চাপ বাড়ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া বাংলাদেশ থেকে ভারতে শরণার্থী ঢুকে পড়ার বিষয়টি নিয়েও চিন্তায় কেন্দ্রীয় সরকার। তাই দ্রুত কাঁটাতার দিয়ে সীমান্ত সুরক্ষিত করতে একযোগে পদক্ষেপ করা শুরু করল কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার। জুলাই মাস থেকে যখন ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হতে শুরু করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র, তখন থেকেই দিল্লির নজর ছিল ঢাকার দিকে। আর অগস্টের গোড়াতেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসার পরও সেই পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের।

Advertisement

বাংলাদেশ অশান্ত হওয়ার পরেই কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশী শরণার্থীরা ভিড় জমিয়েছেন সীমান্তবর্তী এলাকায়। তাই সংশ্লিষ্ট সীমান্তবর্তী এলাকায় টহলদারি বাড়িয়েছে বিএসএফ। কিন্তু, সেই উদ্যোগেও সন্তুষ্ট হতে পারছে না কেন্দ্রীয় সরকার। শরণার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে দ্রুত কাঁটাতারের বেড়া বসিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চায় রাজ্য সরকার।

কেন্দ্র এবং রাজ্য সীমান্তবর্তী এলাকায় কাঁটাতার বসানোর কাজ দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগী হয়েছে। নবান্ন সূত্রের খবর, প্রায় ২২৪ কিমি কাঁটাতার বসানোর কাজ শেষ করার জন্য জমির বন্দোবস্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের আন্তর্জাতিক সীমান্তের দৈর্ঘ্য ২,২১৬.৭০ কিমি। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ভারত ইতিমধ্যে প্রায় ১৬০০ কিমি এলাকায় কাঁটাতার বসানোর কাজ শেষ করেছে। কাঁটাতারবিহীন সীমান্ত এলাকার অনেকাংশই জলপথ পরিবেষ্টিত। তাই সেই সব নদী দ্বারা নির্ধারিত সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে স্থলসীমান্তবর্তী এলাকায় কাঁটাতার বসানোর কাজটি সম্পন্ন করতে একযোগে গতি বাড়িয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য, দু’পক্ষই। কাঁটাতার বসাতে জমি কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কাঁটাতার দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সুরক্ষিত করার বিষয়টি পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে একাধিক বার আলোচনায় এসেছে। কিন্তু অভিযোগ উঠলেও, দ্রুততার সঙ্গে তার সমাধান করা যায়নি। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই কাজ গতি বাড়িয়ে করতে আগ্রহী অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্য সরকারের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা সব রকম সহযোগিতার জন্য তৈরি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কাজটি তাড়াতাড়ি শেষ করলে বাংলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত আরও বেশি সুরক্ষিত হতে পারে। ফলে যে সমস্ত ক্ষেত্রে এখনও কাঁটাতার বসানোর কাজ বাকি রয়েছে, সেখানে জমি ক্রয়ের কাজ শেষ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

নবান্ন সূত্রে খবর, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান আগেই ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ক্ষেত্রে ভারত সরকার যে অবস্থান নেবে, তাতেই পাশে থাকবে রাজ্যও। বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতার দিতে এখনও পর্যন্ত দফায় দফায় ২৬৬.৭১ কিমি জমি নেওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। ৮০ কিমির জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে গত বছর ২৭ ডিসেম্বর মাসে। তার মধ্যে ৪৩ কিমির কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১১২.৩ কিমি কাঁটাতার বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় জমি কিনতে ২২১.৭ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাকি ১৫৪ কিমির জন্য প্রয়োজনীয় জমি কিনতে কত টাকা প্রয়োজন, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে শীঘ্রই জানাবে নবান্ন। বিবিধ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের সংঘাত হলেও, সীমান্তে বেড়া দেওয়া নিয়ে একসঙ্গেই পথ চলতে চায় দু’পক্ষ।

আরও পড়ুন
Advertisement