Underage Marriage

‘তোমরা আমাদের মতো ভুল কোরো না’, বার্তা শিবিরে

অনুষ্ঠানে টেলিফোনে নিজের কথা জানান হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা, বছর উনিশের এক তরুণী। সাড়ে তিন বছরের ছেলে তাঁর।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৪ ০৮:১৫
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

ওঁদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল নাবালিকা বয়সেই। কেউ স্বেচ্ছায় পালিয়ে গিয়েছিল, কারও বিয়ে দিয়েছিল পরিবার। ১৪-১৫ বছর বয়সে সেই নতুন জীবনে প্রথম কয়েক মাস ভাল কাটলেও তারপরেই ওঁদের জীবনে নেমে আসে নানা সমস্যা। তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা স্কুল পড়ুয়াদের সামনে তুলে ধরলেন ওই মেয়েরা।

Advertisement

সম্প্রতি একটি সংগঠনের উদ্যোগে নাবালিকা বিয়ের কুফল ও সমস্যা নিয়ে হাসনাবাদ থানার নেতাজি বিদ্যাপীঠ হাই স্কুলে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানেই ওই মেয়েরা তাঁদের জীবনের কথা ছাত্রীদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে নাবালিকা বিয়ের ঘটনা প্রায়ই সমানে আসে। ওই এলাকার অসহায় মেয়েদের মূল স্রোতে ফেরাতে কাজ করে সংগঠনটি। তাঁদের তরফে সাকিলা খাতুন বলেন, ‘‘ছাত্রীদের সচেতন করে নাবালিকা বিয়ে রুখতেই এই উদ্যোগ।’’

অনুষ্ঠানে টেলিফোনে নিজের কথা জানান হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা, বছর উনিশের এক তরুণী। সাড়ে তিন বছরের ছেলে তাঁর। পনেরো বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন পড়শি এক যুবককে। কিন্তু ছ’মাস পরেই তাঁর স্বামী অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বছর ঘুরতেই সন্তানের মা হন তরুণী। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে অশান্তি বেড়ে চলে। শারীরিক-মানসিক অত্যাচার শুরু হয়। বর্তমানে তিনি বাপের বাড়িতে ফিরে এসেছেন। ওই তরুণীর কথায়, ‘‘বাপের বাড়িতে এসেও ভাল নেই আমি। ডিভোর্সের মামলা চলছে। আত্মীয়, পড়শিদের থেকে নানা কটূক্তি শুনতে হয়। ছেলে ছোট। ওকে কী ভাবে মানুষ করব, সেই চিন্তাও রয়েছে। পড়াশোনা শেষ না করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলাম। এখন কাজ পেতেও সমস্যা হচ্ছে।’’ ছাত্রীদের কাছে তাঁর বার্তা, ‘‘পড়াশোনা শিখে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপরে বিয়ে করা উচিত। তোমরা আমার মতো ভুল কোরো না।’’

নিজের জীবনের এমনই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন হাসনাবাদের মহিষপুকুর গ্রামের বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের তরুণী। স্কুলের এক শিক্ষিকা, আইভি সরকার তাঁর পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অভিজ্ঞতা শোনালেন সকলকে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাসনাবাদ থানার দুই পুলিশ অফিসার নাবালিকা বিয়ে ও মানবপাচার নিয়ে সচেতন করেন ছাত্রীদের।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্রীদের সচেতন করা হয়েছে। আমাদের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় এ বিষয়ে সচেতনতা আরও বাড়ানো গেলে ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement