Rain Water Harvesting

বৃষ্টির জল ধরে রেখে ব্যবহার, ফেরানো হচ্ছে ভূগর্ভেও

প্রথম জলাধারটি ভরে যাওয়ার পরে অতিরিক্ত জল গিয়ে পড়ছে ১০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় জলাধারে। সেই জল পুরোটাই কয়েক দফায় শোধন করে নলকূপের সাহায্যে ভূগর্ভে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

Advertisement
সমীরণ দাস 
সোনারপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩ ০৮:৪২
An image of Rainwater harvest

এই জলাধারেই ধরে রাখা হচ্ছে বৃষ্টির জল। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

এলাকার শৌচালয়গুলিতে ব্যবহার করা হবে সঞ্চয় করে রাখা বৃষ্টির জল। বাগান পরিচর্যা-সহ অন্য কাজও হবে সেই জলে। জলসঙ্কটের মোকাবিলায় এমনই পরিকল্পনা করেছে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা। পুরসভার উদ্যোগে বৃষ্টির জল ধরে রাখতে তৈরি হয়েছে প্রকল্প। বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও সঞ্চিত জলের একটা বড় অংশ পরিশুদ্ধ করে মাটির নীচে ফেরত পাঠানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে।

গড়িয়ার মহামায়াতলায় পুরসভার প্রেক্ষাগৃহ চত্বরে মাস দুয়েক আগে শুরু হয়েছে এই প্রকল্পের কাজ। পাশাপাশি, বর্ষায় জল ধরে রাখার কাজও চলছে। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই প্রেক্ষাগৃহের ছাদের আয়তন প্রায় ১১ হাজার বর্গফুট। বৃষ্টির সময়ে বিশাল ওই ছাদের সব জল পাইপের সাহায্যে এক জায়গায় জমা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার জন্য তৈরি হয়েছে পাশাপাশি দু’টি জলাধার। প্রাথমিক ভাবে বৃষ্টির জল এসেপড়ছে প্রথম জলাধারে। প্রাথমিক শোধন করে সেই জল বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আপাতত ওই প্রেক্ষাগৃহের বিভিন্ন শৌচালয়েই সেই জল ব্যবহৃত হচ্ছে। আগামী দিনে পুরসভা পরিচালিত এলাকার অন্য শৌচালয়েও বৃষ্টির জল ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।

Advertisement

প্রথম জলাধারটি ভরে যাওয়ার পরে অতিরিক্ত জল গিয়ে পড়ছে ১০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় জলাধারে। সেই জল পুরোটাই কয়েক দফায় শোধন করে নলকূপের সাহায্যে ভূগর্ভে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার লিটার জল এ ভাবে ভূগর্ভে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ারদের। তাঁরা জানান, প্রকল্পের একটি ‘ইউনিট’ থেকে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য জল রেখেও ভরা বর্ষায় প্রতিদিন কয়েক হাজার লিটার জল মাটির নীচে পাঠানো সম্ভব।

রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের কাউন্সিলর-ইন-চার্জ নজরুল আলি মণ্ডল বলেন, “অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশ কমছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তা কিছুটা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে জলসঙ্কটেরও মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।”

পুরসভা সূত্রের খবর, আপাতত একটি ইউনিটে এই কাজ শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ওই প্রেক্ষাগৃহ চত্বরে দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু করা হবে। পুরো প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ‘টায়েড’ তহবিলের টাকায় এই কাজ হচ্ছে (সাধারণত জল সরবরাহ, বর্জ্য অপসারণের মতো কাজের জন্য এই তহবিলের টাকা আসে)। ভবিষ্যতে হরিনাভি ও বোড়ালে পুরসভার কার্যালয়েও একই ভাবে বৃষ্টির জল সঞ্চয় প্রকল্প শুরু হবে।

রাজ্যের পুরসভাগুলির মধ্যে তাঁরাই প্রথম এই প্রকল্প করছেন বলে দাবি রাজপুর-সোনারপুর পুর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু জল বাঁচানোর এই উদ্যোগে কেন শামিল হচ্ছে না অন্য পুরসভাগুলি? জেলার অন্য পুরসভাগুলির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পরিকল্পনা থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অর্থের জোগান। এই প্রকল্পের জন্য আলাদা কোনও রকম বরাদ্দ নেই। ‘টায়েড’ তহবিলের টাকা জল সরবরাহ ও বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন খাতে খরচ হয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে বৃষ্টির জল ধরে রাখার প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ কোনও মতেই বাঁচানো যাচ্ছে না। অন্য তহবিল থেকেও এই বিপুল বরাদ্দের সংস্থান হচ্ছে না। তবে অনেকেই জানান, আগামী দিনে প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে।

রাজপুর-সোনারপুরের পুরপ্রধান পল্লবকান্তি দাসের কথায়, “জলের সমস্যা কিন্তু ভবিষ্যতে বড়সড় আকার নিতে চলেছে। ঠিক সেই জায়গা থেকেই এই প্রকল্প তৈরির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি আমরা। আগামী দিনে এলাকার সমস্ত আবাসন, ফ্ল্যাটে বৃষ্টির জল ধরে রেখে কাজে লাগানো হবে।”

আরও পড়ুন
Advertisement