(বাঁ দিক থেকে) সোমনাথ শ্যাম, অর্জুন সিংহ এবং পার্থ ভৌমিক। —ফাইল ছবি।
ভবানী ভবনে সিআইডি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ‘রাশিয়ান রাসায়নিক’ প্রয়োগ করে থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে দিন কয়েক আগেই বাংলার রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ। এ বার সেই অর্জুনের বিরুদ্ধেই খুনের ‘ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ তুললেন ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক। তাঁর অভিযোগ, বিহার থেকে লোক ভাড়া করে এনে জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যামকে খুনের চেষ্টা করছেন অর্জুন! পাল্টা বিজেপি নেতা অর্জুন বলেছেন, সোমনাথকে মারতে তাঁর দরকার হবে না। সময় এলে জগদ্দলের মানুষই ওঁকে মারবেন।
ভাটপাড়া পুরসভার টেন্ডার দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার অর্জুনকে ভবানী ভবনে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিআইডি। ভবানী ভবন থেকে বেরিয়ে অর্জুন অভিযোগ করেছিলেন, সিআইডি তদন্তের নামে ডেকে রাসায়নিক ‘স্প্রে’ করে দেয়। তাতে দু’-তিন মাস পর মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর হয়ে কেউ মারা যেতে পারেন। কলকাতার বাইপাসের ধারের এক হাসপাতালে ‘এ টু জ়েড’ সব টেস্টও করান। বিজেপি নেতাদের দাবি, শুধু একা অর্জুনকে নয়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও খুন করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
সেই অভিযোগের মাঝেই এ বার পাল্টা অভিযোগ তুললেন পার্থ। মঙ্গলবার মৃত ব্যারাকপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এসে তৃণমূল সাংসদ অভিযোগ করেন, ‘‘আমার কাছে খবর আছে সোমনাথ শ্যামকে মারার জন্য বিহার থেকে একটা বড় গ্রুপ ভাড়া করা হয়েছে।’’ তিনি সরাসরি অর্জুনের দিকেই আঙুল তোলেন। পার্থের কথায়, ‘‘অর্জুন সিংহ খুন করতে চান সোমনাথকে।’’ এ ব্যাপারে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ করেছেন বলে জানান পার্থ। তবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না সোমনাথ। তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি না। কিছু মানুষ আমাকে তাঁদের পথ থেকে সরিয়ে দিতে চাইছেন।’’ তিনিও সরাসরি অর্জুনকেই নিশানা করেন। সোমনাথের দাবি, বর্তমানে তাঁর একমাত্র ‘শত্রু’ অর্জুনই।
ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন বলেছেন, ‘‘তৃণমূল বলেছে, যেখানে তারা লোকসভায় হেরেছে, সেখানে চেয়ারম্যান বদল করবে। গত লোকসভায় ভাটপাড়া পুর এলাকায় তৃণমূল হেরেছিল। কিন্তু সোমনাথ শ্যাম তাঁর মাকে পুরসভার চেয়ারম্যান রেখে দিতে চান। সেই জন্য পার্থ ভৌমিককে দিয়ে এসব বলাচ্ছেন।’’ পাশাপাশি অর্জুনের এ-ও প্রশ্ন, ‘‘ওদের কাছে এত খবর আছে, তা হলে পুলিশকে জানাচ্ছে না কেন? এফআইর করছে না কেন?’’
বছর চারেক আগে ব্যারাকপুরের নেতা অর্জুনের ঘনিষ্ঠ মণীশ শুক্ল খুনে উঠে এসেছিল বিহার যোগের কথা। অভিযোগ, বিহারের জেলে বসেই নাকি সুবোধ সিংহ নামে এক ব্যক্তি মণীশকে খুনের ছক কষেছিলেন। তার পর বার বার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে নানা অশান্তির ঘটনার সঙ্গে জড়িয়েছে বিহারের নাম। কখনও অর্জুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। কখনও অর্জুন পাল্টা অভিযোগ করেন। সম্প্রতি কসবার তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে গুলি করে খুনের চেষ্টার ঘটনাতেও বিহার-যোগের প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। অভিযোগ, বিহার থেকে ‘শুটার’ ভাড়া করে এনেই হামলার ছক হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, পড়শি রাজ্য থেকেই আনা হয়েছিল অস্ত্রও।
বাংলার রাজনীতিতে অর্জুন-সোমনাথের ‘দ্বন্দ্বে’র কথা অজানা নয় কারও। অর্জুন যখন তৃণমূলে ছিলেন, তখনও দুই নেতার ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’ বার বার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ব্যারাকপুর। এ বার সেই শিল্পাঞ্চলে লড়াই শুরু ‘রাশিয়ার রাসয়নিক’ বনাম ‘বিহার গ্যাং’।