এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
কেন এমন তফাৎ, বুঝে উঠতে পারছেন না বয়স্ক মানুষটি।
তাঁর সতেরো বছরের মেয়ে যখন গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল, তারপর থেকে কেটে গিয়েছে প্রায় দশটা বছর। এখনও অভিযুক্তেরা সাজা পেল না। মামলা বিচারাধীন। অথচ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় দু’মাসের মাথায় সাজার আদেশ দিলেন বিচারক।
মাস দু’য়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনায় বছর সতেরোর এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। থানা-পুলিশ হওয়ার পরে ধরা পড়েছে অভিযুক্ত যুবক। সেই মামলাও আদালতে বিচারাধীন।
একই গ্রামের সতেরোর বছরের আর এক কিশোরীর উপরে একই রকম অত্যাচারে ঘটনা ঘটেছিল ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি। ধর্ষণকারীরা আজও সাজা পায়নি বলে জানালেন মেয়ের বাবা। আইনি লড়াই চলছে। বাবার বিশ্বাস, দোষীরা এক দিন না এক দিন সাজা পাবেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘটনায় এত দ্রুত ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়েছে শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা গরিব মানুষ। ভাল আইনজীবী রাখতে পারি না। আমাদের পিছনে কারও সমর্থন নেই। তাই হয় তো প্রশাসনও গুরুত্ব দেয় না!’’
ইতিমধ্যে তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়েছে। শান্তিতে ঘরসংসার সামলাচ্ছেন অধুনা বছর সাতাশের তরুণী। পরিবার সূত্রে জানা গেল, ২০১৪ সালে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ফোন করে বই কিনে দেবেন বলে মেয়েকে স্থানীয় বাজারে ডেকেছিলেন বাবা। বই কিনে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় দুই যুবক নির্জন রাস্তায় মেয়েটির মুখ চেপে ধরে বাইরে করে নির্জন জায়গায় তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। সেখানে আগে থেকেই আরও এক যুবক উপস্থিত ছিল। সে-ও ধর্ষণ করে। মেয়েটির নগ্ন ছবি মোবাইলে তোলা হয়। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
রাতে অভিযুক্তেরাই মেয়েটিতে বাড়ির কাছে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পর দিন থানায় অভিযোগ হয়। পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতারও করে। পরে সকলে জামিন পেয়ে যায়। মেয়েটির বাবার অভিযোগ, ‘‘অনেক দিন মামলার শুনানি হয় না। প্রয়োজনে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হব। লড়াই থেকে সরে আসব না।’’
মামলাটির শুরুতে যে সরকারি আইনজীবী ছিলেন, তিনি বলেন, ‘‘ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে মেয়েটির পোশাক সহ যে জিনিসপত্র পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল, তার রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ায় মামলার শুনানি ধীর গতিতে হচ্ছে।’’
ঘটনার পরে কার্যত গৃহবন্দি হয়েই অনেক দিন কাটছিল ছাত্রীটির। তার মা বাবা ও ভাইও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোতেন না। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ। বাড়িতে দীর্ঘ দিন সর্বক্ষণের পুলিশি পাহারা ছিল। তবে গণধর্ষণের শিকার হয়েও ভেঙে পড়েননি। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। তরুণীর কথায়, ‘‘মামলা কী অবস্থায় আছে জানি না। বাবা লড়াই করছেন। বিচার এক দিন পাবই।’’
ঘটনার পরে জনপ্রতিনিধিরা বাড়িতে গিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাঁরা অনেক দিন কোনও খোঁজ-খবর নেন না বলে জানাল পরিবার। মেয়েটির বাবা ভাগচাষি। আর্থিক অবস্থা খুব ভাল নয়। সেই প্রতিবন্ধকতা মধ্যেও চোয়াল শক্ত করে মেয়ের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি যে মেয়েটি নির্যাতিতা হয়েছে গ্রামের, তার এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘আমাদের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ধরা পড়েছে ঠিকই, কিন্তু মামলা কত দিন চলবে, কবে সাজা হবে কে জানে! ওই পরিবারটি এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। জানি না, আমরা কত দিন ধৈর্য রাখতে পারব। আমাদের মেয়ের ভবিষ্যৎ পড়ে আছে সামনে, তাকেও সুস্থ, সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে হবে নিজের জীবন।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘটনায় রায় ঘোষণায় ভরসা পাচ্ছে পরিবারটি। হয় তো মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে, সাজা পাবে দোষী— এমনই আশা তাঁদের।