Dattapukur Blast

নারায়ণপুরে নজর পড়বে কি পুলিশের, উঠছে প্রশ্ন 

পুলিশের পাশাপাশি রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা জানতে উত্তর ২৪ পরগনা ডিস্ট্রিক্ট ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর আধিকারিক শালিনী ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল।

Advertisement
ঋষি চক্রবর্তী
দত্তপুকুর শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৪
মোচপোল পশ্চিমপাড়ার বাগানে এ ভাবেই তৈরি হত বাজি।

মোচপোল পশ্চিমপাড়ার বাগানে এ ভাবেই তৈরি হত বাজি। —নিজস্ব চিত্র।

মোচপোল পশ্চিমপাড়ায় বিস্ফোরণের পরে সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ বাজি ও বাজির মশলা। তবে পাশের এলাকা নারায়ণপুরে এখনও নজর পড়েনি পুলিশের। বাজি তৈরির ইতিহাস এখানে মোচপোলের থেকে ঢের বেশি পুরনো।

Advertisement

দত্তপুকুর থানার ইছাপুর নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের নারায়ণপুরে প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে চলছে বাজি তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা। এ জন্য গোটা জেলায় নামডাক আছে নারায়ণপুরের। গত রবিবার বিস্ফোরণস্থল হয়েছিল যেখানে, সেই মোচপোল থেকে এক-দেড় কিলোমিটার দূরে একটি চার মাথার মোড়। কাছেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে নীলগঞ্জের দিকে চলে গিয়েছে পিচ রাস্তা। সে রাস্তার মুখ থেকেই শুরু নারায়ণপুর এলাকা। ইউনিভার্সিটির একশো মিটারের মধ্যেই এই অঞ্চল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁ দিকে নারায়ণপুর, ডান দিকে বেরুনানপুকুরিয়া গ্রাম।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই দুই গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে চলে বাজির কারবার। বেরুনানপুকুরিয়ায় কম হলেও নারায়ণপুরে বাজি এক রকম কুটির শিল্প! ছোটো ছোটো ঘরে তৈরি হয় বাজি। রাস্তার মোড়ে আছে পাহারা। খবর দিলেই পালাবে কারখানা থেকে। এলাকার কেউ মুখ খুলতে রাজি নয়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেরুনানপুকুরিয়ার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ভয়ে ভয়ে থাকি। মাঝে মাঝেই আশেপাশের বাড়িতে মাল দিয়ে যায় কিছু লোক। কখন‌ কী ঘটে যাবে, জানে না কেউ। বড় নেতারা আছেন এর পিছনে।’’

দু'টি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় এলাকায় ঘন ঘন ছাত্রাবাস গড়ে উঠেছে। ছাত্রাবাসের মালিকেরাও বাজির কারবার নিয়ে মুখ খোলেন না। নারায়ণপুরে ঢুকতেই কিছু যুবক জানতে চাইল, কোথা থেকে আসা হচ্ছে? কী দরকার এখানে। তাদের কোনও রকমে আশ্বস্ত করা গেল। কাঠুরিয়ার এক চায়ের দোকানদার বলেন, ‘‘বাজি কারবারিদের বলা হয়েছে, কিছু দিনের জন্য সাইড হয়ে যেতে!’’

সেই মতো 'বাজি কারবারিরা আপাতত আড়ালে। সামনে বিশ্বকর্মা পুজো। বাজারে চাহিদা আছে। তবু আপাতত সবই রেখেঢেকে। এক কারবারির কথায়, ‘‘এখন হাওয়া গরম। ক’দিন চুপচাপ থাকা ছাড়া উপায় নেই। এখানে এখনও পুলিশের আনাগোনা শুরু হয়নি। তবে সাবধানের মার নেই। উপর থেকে নির্দেশ আছে, ক’দিন একটু সামলে চলতে হবে।’’ ‘উপর’ থেকে বলতে কাকে বা কাদের বোঝানো হল, তা নিয়ে মুখে তালা ওই কারবারির।

পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর, এখানকার বাজি কারখানাগুলি বেআইনি। সবুজ মঞ্চ সংগঠনের নব দত্তের কথায়, ‘‘সারা রাজ্যে সবুজ বাজির লাইসেন্স পেয়েছে মাত্র সাতটি কারখানা। সেগুলির মধ্যে ছ’টি দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আর একটি দার্জিলিংয়ে‌। এর বাইরে সব বেআইনি। নারায়ণপুর হোক বা নীলগঞ্জ— সবই বেআইনি কারখানা। ৫ অগস্ট মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে হাজারখানেক বেআইনি বাজি কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছিল। এগুলির সব ক’টিতেই কমবেশি কাজ চলে।’’

পুলিশের পাশাপাশি রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা জানতে উত্তর ২৪ পরগনা ডিস্ট্রিক্ট ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর আধিকারিক শালিনী ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। ‘মোচপোল’ শব্দটি শুনেই‌ আর কথা বাড়াতে চাইলেন না। বারাসতের এসডিপিও অনিমেষ রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বচাঁদ ঠাকুর, সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের ফোন বেজে গিয়েছে। নারায়ণপুরে তল্লাশি চলবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করে মেসেজ করা হয়েছিল পুলিশ আধিকারিকদের। উত্তর মেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বেআইনি বাজির কারখানা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তপনকুমার দত্তও।

কী বলছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ? তিনি বলেন, "নারায়ণপুরে বাজি ব্যবসার কথা জানি। মোচপোল পশ্চিমপাড়ায় যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেটার তথ্য কেউ দেয়নি বলে জানতাম না আগে। রাজ্য সরকার কড়া হওয়ার পরে নারায়ণপুরের বাজি কারখানা বন্ধ আছে বলেই শুনেছি। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং কড়া ব্যবস্থা পুলিশ নিক, সেটা আমিও চাই।"

আরও পড়ুন
Advertisement