West Bengal Panchayat Election 2023

আরাবুলের গ্রামেই হারল তৃণমূল, আইএসএফকে সঙ্গী করে বাজিমাত করল ভাঙড়ের জমিরক্ষা কমিটি

ভাঙড় ২ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে স্রেফ দু’টিতেই সব আসনে লড়তে হয়েছিল তৃণমূলকে তার মধ্যেই একটি ছিল আরাবুলের গ্রামে পোলেরহাট২ গ্রাম পঞ্চায়েত।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ ১৪:১৮
ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলাম।

ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলাম। ফাইল ছবি।

ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলামের গ্রামেই গো হারা হেরে গেল তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটে ভাঙড় ২ ব্লকের যে গুটিকয়েক গ্রাম পঞ্চায়েতে লড়াই করার কথা ছিল তৃণমূলের, তার মধ্যে একটি ছিল আরাবুলের গ্রাম পোলেরহাট ২। সেই গ্রামেই মুখ থুবড়ে পড়ল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতে মোট ২৪টি আসন ছিল। সবক’টি আসনেই ফল ঘোষণা হয়ে যায় দুপুর আড়াইটে নাগাদ। দেখা যায় ২৩টিতেই জিতে গিয়েছে শাসকবিরোধী জোট। এলাকার জমি রক্ষা কমিটি এবং আইএসএফ জোট বেঁধে লড়েছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল সেখানে স্রেফ একটিই আসনে জয়ী হয়েছে। আর সেটি আরাবুলের নিজের বুথ।

ভাঙড়ের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা আরাবুল। দল যখন রাজ্যে ক্ষমতায় আসেনি তখন ভাঙড়ে তৃণমূল বিধায়ক ছিলেন তিনি। ভাঙড়ের রাশ এক সময় থাকত এই আরাবুলেরই হাতে। তবে ইদানীং প্রাক্তন বিধায়কের প্রতিপত্তিতে কিছুটা ‘টান’ পড়েছিল বলে মনে করছিলেন স্থানীয় নেতৃত্ব। কারণ যে ভাঙড়ে এক সময় পঞ্চায়েত ভোট একা হাতে সামলেছেন আরাবুল, সেখানে এ বছর পঞ্চায়েত ভোট সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্যানিং ২-এর বিধায়ক শওকত মোল্লাকে। তাঁকে সাহায্য করার দায়িত্বও দেওয়া হয় বিধাননগরের পুরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তকে। আরাবুলকে আলাদা কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি পঞ্চায়েত ভোটে। আরাবুলের প্রতিপত্তি নিয়ে সেই সংশয়েই মঙ্গলবার সিলমোহর দিল পঞ্চায়েত ভোটের ফল। অন্তত এমনই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। তা না হলে আরাবুলের নিজের গ্রামেই তাঁর দল হারবে কেন!

Advertisement

মঙ্গলবার পঞ্চায়েত ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই অবশ্য আরাবুল বুঝে যান, হারতে চলেছেন। পোলেরহাট ২-এ গণনা শেষ হওয়ার আগেই হার স্বীকার করে নেন তিনি। গণনাচলাকালীন পোলেরহাট স্কুলেই উপস্থিত ছিলেন আরাবুল এবং তাঁর সঙ্গীরা। হঠাৎই তাঁদের নিয়ে গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসেন ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা। উপস্থিত সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেন তিনি হঠাৎ চলে যাচ্ছেন তিনি? জবাবে আরাবুল জানান, তাঁর বুথ বাদ দিয়ে বাকি বুথ গুলিতে হেরে গিয়েছে তৃণমূল। আরাবুলের কথায়, ‘‘আমার বুথে জিতেছি। কিন্তু পোলেরহাট ২-এর অন্য বুথগুলোয় হেরেছি। কোথাও ৫ কোথাও ৭ কোথাও ১০ ভোটে হেরেছে আমাদের প্রার্থীরা। আমাদের ৭ জন প্রার্থী শুধুমাত্র ৫-১৫ ভোটে হেরেছে।’’ কিছুটা আক্ষেপের সুরেই আরাবুল এর পর বলেন, ‘‘এই অবস্থা। কী আর করার আছে। হতেই পারে। কিন্তু ১০টা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাকি ৯টাই তৃণমূলের দখলে।’’

পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর থেকেই ভাঙড়ে ক্রমাগত সংঘর্ষ হয়েছে। ভাঙড়ের দু’টি ব্লক— ভাঙড় ১ এবং ভাঙড় ২-এ যথাক্রমে ৯টি এবং ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত। এর মধ্যে ভাঙড় ১-এর সমস্ত ৯টি পঞ্চায়েতে ভোটই হয়নি। সর্বত্রই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে তৃণমূল। অন্য় দিকে, ভাঙড় ২ ব্লকেও ১০টি পঞ্চায়েতের অধিকাংশ আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। ভাঙড় ২-এর প্রতিটি পঞ্চায়েতেরই কোথাও ৮টি কোথাও ১০টি, কোথাও তারও বেশি আসনে বিনা লড়াইয়েই জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। কিন্তু তার পরও কয়েকটি আসনে নজর ছিল। তার মধ্যে একটি ছিল আরাবুলের গ্রাম পোলেরহাট ২ এবং আইএসএফের শক্ত ঘাঁটি চালতাবেড়িয়া। চালতাবেড়িয়ায় তৃণমূল ১৭টি আসনে জিতলেও আরাবুলের গ্রামে একটি মাত্র আসন পায় তৃণমূল।

আরও পড়ুন
Advertisement