West Bengal Panchayat Election 2023

‘ভোট-সন্ত্রাস’ নিয়ে ক্ষমা চাইলেন প্রাক্তন বিধায়ক

শুক্রবার ধীমান নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে বলেন, "ভোট গণনার দিন কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
অশোকনগর শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩ ০৯:১৮
অশোকনগরে গণনা কেন্দ্রে গোলমাল ।ক্ষমা চাইলেন প্রাক্তন বিধায়ক ধীমান রায়।

অশোকনগরে গণনা কেন্দ্রে গোলমাল ।ক্ষমা চাইলেন প্রাক্তন বিধায়ক ধীমান রায়।

ভোটে গোলমালের জেরে হাবড়া ২ ব্লকে গোলমালের ঘটনায় অশোকনগরের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলেন প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার উপ পুরপ্রধান ধীমান রায়। তিনি রাজ্য তৃণমূলের সাংগঠনিক সম্পাদক। অশোকনগরের দু’বারের বিধায়ক।

শুক্রবার ধীমান নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে বলেন, "ভোট গণনার দিন কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। সে জন্য আমরা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অশোকনগরের সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অশোকনগরের একটা কৃষ্টি-সংস্কৃতি আছে। আমরা আলাদা রাজনৈতিক দল করলেও একে অন্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলি। অশোকনগরের ইতিহাসে গণনার দিন এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। আমরা লজ্জিত, দুঃখিত। আনাচে-কানাচে বোমা পড়েছে।"

Advertisement

হাবড়া ২ ব্লকটি অশোকনগর বিধানসভার মধ্যে পড়ে। গণনা কেন্দ্র ছিল অশোকনগর বয়েজ় সেকেন্ডারি স্কুলে। ধীমান বলেন, "গণনার দিন যারা গোলমাল পাকিয়েছে, তারা অশোকনগরের লোক নয়। বাইরে থেকে এসেছিল। তারা কোন রাজনৈতিক দলের লোক জানি না। তবে এর ফলে অশোকনগরের সব মানুষের কাছে আমরা অনেকটাই ছোট হয়ে গেলাম। সকলে মিলে ক্ষত মেরামত করতে হবে।" তাঁর কথায়, "গণনা কেন্দ্রের বাইরে বোমা পড়েছে। মানুষ আতঙ্কে দৌড়ে বেরিয়েছেন। দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে। এটা স্বীকার না করলে অশোকনগরের মানুষ আমাদের ক্ষমা করবেন না।"

পঞ্চায়েত ভোটের দিন হাবড়া ২ ব্লকের একাধিক বুথে গোলমাল, অশান্তি ছড়িয়েছিল। বোমাবাজি, সংঘর্ষ, ব্যালট লুট, ছাপ্পা, রিগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। ব্যালট বাক্স জলে ফেলে দেওয়া হয়। ভোটের দিন বিড়া রাজীবপুর পঞ্চায়েত এলাকায় একটি বুথের কাছে আক্রান্ত হয়েছিলেন অশোকনগর-কল্যাণগড়ের পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা তাঁর গাড়িতে হামলা চালায়। পুরপ্রধান-সহ কয়েক জনকে মারধর করা হয়। গণনার দিন বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, সকাল থেকে কেন্দ্রের মধ্যে থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থী এবং এজেন্টদের তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বের করে দেয়। ব্যালট লুট হয়েছিল। হার ঠেকাতে এক তৃণমূল প্রার্থী ব্যালট চিবিয়ে খেয়ে নেন। তৃণমূলের এক এজেন্ট ব্যালট-সহ পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।

সিপিএম-আইএসএফ প্রতিবাদ করলে পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাঠায় বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়া হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন তিনটি বুথের চারটি আসনে ভোট বাতিল করে। পরবর্তী সময়ে সেখানে ভোট হবে।

কিন্তু ধীমান হঠাৎ ক্ষমা চাইতে গেলেন কেন, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

গত বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব অশোকনগরের প্রার্থী হিসাবে প্রথমে ধীমানের নাম ঘোষণা করেন। তিনি প্রচার শুরু করেন। পরে ধীমানের পরিবর্তে প্রার্থী করা হয় নারায়ণ গোস্বামীকে। তিনি ভোটে জয়লাভ করেন। তখন থেকে নারায়ণ ও প্রবোধের সঙ্গে ধীমানের দূরত্ব বেড়েছে। কর্মী-সমর্থকের দু'দলে বিভক্ত। পুরভোটে জিতলেও ধীমানকে পুরপ্রধান করা হয়নি। এর পিছনে তাঁর অনুগামীরা নারায়ণের ‘কলকাঠি’ আছে বলে মনে করেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ভোটে সন্ত্রাস নিয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত। তখন এই সুযোগে নারায়ণ ও প্রবোধকে সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনে চাপে ফেলতে আসরে নেমেছেন ধীমান।

ধীমানের মন্তব্যের বিষয়ে আইএসএফের রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "উনি (ধীমান) তো সে দিনই লজ্জিত হয়েছিলেন, যে দিন গত বিধানসভা ভোটে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী হিসাবে ওঁর নাম ঘোষণার পরেও এক কুখ্যাত ব্যক্তিকে প্রার্থী করা হয়েছিল। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে ওই কুখ্যাত বিধায়কের নির্দেশে এবং উসকানিতে অবাধে সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। যা অশোকনগরের সংস্কৃতি নষ্ট করেছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে আমরা প্রতিহত করতে নাগরিকদের তৈরি করছি।" অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের সত্যসেবী করের কথায়, "দেরিতে হলেও বোধদয় হয়েছে ধীমানবাবুর। পঞ্চায়েত ভোটের দিন এবং গণনা কেন্দ্রে যা ঘটেছে তাতে ধীমানবাবু একা নন, তৃণমূলের সঙ্গে যোগ আছে, এমন অনেক মানুষই উষ্মা প্রকাশ করেছেন।" বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্রও বলেন, "পঞ্চায়েত ভোটে এ বার অশোকনগর বিধানসভা এলাকায় ছাপ্পা, রিগিং, সন্ত্রাস হয়েছে বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী এবং পুরপ্রধান প্রবোধ সরকারের নেতৃত্ব। এতে অশোকনগরে কৃষ্টি-সংস্কৃতি নষ্ট হয়েছে। ধীমানবাবুর শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। তাঁর মন্তব্যের সঙ্গে আমরা সহমত।"

মন্তব্য করতে চাননি নারায়ণ। প্রবোধ অবশ্য বলেন, "গোটা পঞ্চায়েত ভোট-পর্বে ধীমানকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। দলের হয়ে প্রচার করেননি। হাবড়া ২ ব্লকে ১৭৩টি বুথ। ভোটের দিন ঝামেলা অশান্তি হয়েছে মাত্র দু’টি বুথে। গণনা কেন্দ্রে আমরা দুষ্কৃতী নিয়ে যাইনি। ভোট-পর্ব শান্তিতে মিটেছে। লজ্জিত হওয়ার মতো কোনও বিষয় ঘটেনি।" প্রবোধের কথায়, "দল থেকে ব্রাত্য হয়ে ভোট-পর্ব শেষ হওয়ার পরে ধীমান প্রচারের আলোয় আসতে এ সব কথা বলছেন।"

আরও পড়ুন
Advertisement