Durga Puja Permission

পুজোর অনুমতি দেবে কে, ধন্দে ভাঙড়ের উদ্যোক্তারা

ভাঙড় পুজো সমন্বয় কমিটির এক কর্তা কৌশিক সর্দার বলেন, ‘‘ভাঙড়, কাশীপুর থানাকে কলকাতা পুলিশের অধীনে নিয়ে আসার ফলে পুজোর অনুমতি এ বার কারা দেবে, তার তথ্য কারও কাছে নেই।

Advertisement
সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৯
বর্তমানে ভাঙড় কলকাতা পুলিশের শাসনে রয়েছে।

বর্তমানে ভাঙড় কলকাতা পুলিশের শাসনে রয়েছে। —ফাইল চিত্র।

পুজোর অনুমতি দেবে কে, এ বার তাই নিয়ে ধন্দে পড়েছেন ভাঙড়ের পুজো উদ্যোক্তারা। এক মাসও বাকি নেই দুর্গা পুজোর। ইতিমধ্যেই পুজো কমিটিগুলির মণ্ডপ সজ্জা থেকে শুরু করে প্রতিমা তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু পুজোর অনুমতি কী ভাবে তাঁরা পাবেন, তা নিয়ে চিন্তায় সকলে।

Advertisement

কিন্তু কেন?

ভাঙড় কলকাতা পুলিশ না বারুইপুর জেলা পুলিশের অন্তর্ভুক্ত, তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। সাধারণত, পুজোর অনুমতি দিয়ে থাকে পুলিশ-প্রশাসন। এই অনুমতি না পেলে রাজ্য সরকারের ঘোষিত পুজো কমিটিকে দেওয়া ৭০ হাজার টাকা পাবেন না উদ্যোক্তারা। বিভিন্ন ছোট ছোট পুজো কমিটি তাকিয়ে থাকে সরকারের এই অনুদানের দিকে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাঙড় ও কাশীপুর থানাকে কলকাতা পুলিশের অধীনে নিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেছেন। ভাঙড়কে কলকাতা পুলিশের আলাদা ডিভিশন করার কথা বলা হয়েছে।

এই ঘোষণার পরে প্রায় সমস্ত প্রক্রিয়ার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্য পুলিশের হাত থেকে কলকাতা পুলিশের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া বাকি। এই পরিস্থিতিতে ভাঙড়ের পুজোর অনুমতি কলকাতা পুলিশ না রাজ্য পুলিশ দেবে, তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

ভাঙড় পুজো সমন্বয় কমিটির এক কর্তা কৌশিক সর্দার বলেন, ‘‘ভাঙড়, কাশীপুর থানাকে কলকাতা পুলিশের অধীনে নিয়ে আসার ফলে পুজোর অনুমতি এ বার কারা দেবে, তার তথ্য কারও কাছে নেই। এই নিয়েই তৈরি হয়েছে জটিলতা। প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছেন, পুজোর অনুমতি দেবে কলকাতা পুলিশ। তাদের আসান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ওই ওয়েবসাইটে ভাঙড় ও কাশীপুর থানার কোনও উল্লেখ নেই। যার ফলে সেখানে আবেদন করা যাচ্ছে না। এ বার জেলা প্রশাসন এখনও পর্যন্ত পুজোর অনুমতির জন্য কোনও ওয়েবসাইট চালু করেনি। ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’

ইতিমধ্যে কাশীপুর থানার পক্ষ থেকে একটি সমন্বয় বৈঠক করা হয়েছে। সেই বৈঠকে পুলিশের পাশাপাশি ব্লক প্রশাসন এবং পুজো সমন্বয় কমিটির লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সেই মিটিং থেকে পুজো কমিটিগুলিকে বলা হয়েছে,
পুজো অনুমোদনের জন্য মণ্ডপের স্কেচ, যে জমিতে পুজো হয় সেই
জমির নো অবজেকশন শংসাপত্র, দমকল, বিদ্যুৎ দফতরের ছাড়পত্র-সহ বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি রাখতে। অনলাইনে পুজোর আবেদন
প্রক্রিয়া শুরু হলেই যাতে দ্রুত অনুমতি পাওয়া যায়, তাই এই বার্তা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জেলা প্রশাসন অনলাইনে আবেদনের জন্য কোনও পোর্টাল চালু না করায়
চাপে পড়েছেন পুজো কমিটির লোকজন। পুজোর অনুমতির জন্য কবে অনলাইনে করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তাদের।

কাশীপুর শতধারা প্রমিলা সঙ্ঘের সম্পাদক রিনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘করোনা পরবর্তী সময়ে গত তিন বছর আমরা অনলাইনেই পুজোর আবেদন করেছি এবং সব কিছু সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। অনুমোদনের টাকাও পেয়েছি। কিন্তু এ বার যত গন্ডগোল।’’ ভাঙড়ের মায়ের আশ্রম পুজো কমিটির এক কর্তা পূর্ণেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘পুজোর আর এক মাসও বাকি নেই। অন্যান্য জেলা ও কলকাতা পুলিশের অধীন পুজো কমিটিগুলি অনুমতির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু ভাঙড়ে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে আমরা আবেদন করতে পারছি না। আমরা এখন বারুইপুর পুলিশ জেলা না কলকাতা পুলিশের অধীন, সেটাই পরিষ্কার নয়।’’

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙড় ১ ব্লকে ৭২টি দুর্গা পুজো হয়। ভাঙড় ২ ব্লকের কাশীপুর থানা এলাকায় ৪৫টি ও কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকায় ৪২টি দুর্গাপূজা হয়। সরকার অনুমোদিত সব ক’টি পুজো কমিটি সরকারি অনুমোদন পায়। যদিও পুজো উদ্যোক্তাদের সংশয় দূর করতে ভাঙড় ১ ব্লক প্রশাসন ২৬ সেপ্টেম্বর একটি অফলাইন পুজোর অনুমতির জন্য বিশেষ ক্যাম্পের আয়োজন করেছে। জানা গিয়েছে, ওই দিন ভাঙড় ১ ব্লকের সমস্ত পুজোর উদ্যোক্তারা আবেদন জমা করতে পারেন। গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা পুলিশের অধীন সমস্ত পুজো কমিটিগুলিকে পুজোর অনুমতির জন্য কলকাতা পুলিশের 'আসান' ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হত। অন্য দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পুজো কমিটিগুলিকে 'দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুজো পারমিশন' ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হত। কিন্তু ভাঙড় ও কাশীপুর থানাকে কলকাতা পুলিশের অধীনে নিয়ে আসার ফলেই তৈরি হয়েছে জটিলতা।

এ বিষয়ে ভাঙড় ১ বিডিও দীপ্যমান মজুমদার বলেন, ‘‘যেহেতু কলকাতা পুলিশের হাতে এখনও দায়িত্ব হস্তান্তর হয়নি, সে কারণে আপাতত যা নির্দেশ রয়েছে, তাতে এই ব্লক এলাকায় সমস্ত পুজোর অনুমোদন ভাঙড় থানা ও বিডিও ভাঙড় ১ ব্লক দেবে।’’ ভাঙড় ২ বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘আপাতত সরকারি যে নির্দেশনামা রয়েছে, সেই অনুযায়ী এই ব্লকের মধ্যে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকার সমস্ত পুজো কমিটি কলকাতা পুলিশের আসান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করবে। কাশীপুর থানা এলাকার পুজো কমিটিগুলিকে জেলার পুজোর অনুমতির জন্য যে পুরানো ওয়েবসাইট রয়েছে, তা অনুসরণ করার কথা বলা হচ্ছে। পরবর্তী ক্ষেত্রে যদি কোনও নতুন নির্দেশ এলে তখন সেই মতো ব্যবস্থা হবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement