West Bengal Panchayat Election 2023

শুনশান রাস্তা, ভয়ে যেন কুঁকড়ে আছে ভাঙড় 

শনিবার ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রের দু’টি ব্লকের (ভাঙড়-১ এবং ২) মধ্যে দু’নম্বর ব্লকেই মূলত লড়াই। ভাঙড়-১ পঞ্চায়েত সমিতির ২৭টি আসনই ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছে তৃণমূল।

Advertisement
নীলোৎপল বিশ্বাস
ভাঙড় শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ ০৫:২৬
An image of road

জনহীন: ভোটের আগে থমথমে এলাকা। শুক্রবার, ভাঙড়ে।  ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

বেলা পৌনে ১২টাতেই প্রায় জনশূন্য বাজার এলাকা। একের পর এক দোকানের শাটার নামানো। বড় রাস্তা ছেড়ে সরু রাস্তায় ঢুকলে শুনশান চেহারাটা আরও যেন বেআব্রু হয়ে ধরা পড়ে। কোথাও কোথাও কয়েক জন একসঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বললেও কোনও গাড়ি সে দিকে আসছে দেখলেই সরে পড়েন তাঁরা। গন্তব্য কোন দিকে, জিজ্ঞাসা করার মতো লোক পাওয়া যায় না বেলা সাড়ে ১২টাতেও! এই থমথমে পরিস্থিতিতে আতঙ্ক যেন কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় রাস্তার ধারে পরপর পড়ে থাকা পোড়া গাড়ির কঙ্কাল, ভাঙা মোটরবাইক, পোড়া টায়ার! ভোটের আগের দিন, শুক্রবার দুপুরে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জবাজারে নিজের দোকানে তালা ঝোলাতে ব্যস্ত সুদীপ নস্কর নামে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘১৫ জুন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে এই বাজারে আগুন জ্বলেছে। তিন জন খুন হয়েছিলেন। এই পোড়া গাড়িগুলো সেই দিনটার সাক্ষী। ২২ দিন কেটে গেলেও ভাঙড়ের মানুষের আতঙ্ক কমেনি। বরং ভোট যত এগিয়ে এসেছে, আতঙ্কও তত চেপে বসেছে।’’ এর পরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সন্ধ্যা হলেই এই গ্রাম, ওই গ্রাম থেকে বোমা পড়ার আওয়াজ আসে। কাল কী হবে, জানি না।’’

Advertisement

আজ, শনিবার ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রের দু’টি ব্লকের (ভাঙড়-১ এবং ২) মধ্যে দু’নম্বর ব্লকেই মূলত লড়াই। ভাঙড়-১ পঞ্চায়েত সমিতির ২৭টি আসনই ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছে তৃণমূল। ভাঙড়-১ ব্লকের মোট ন’টি গ্রাম পঞ্চায়েতেরও সব আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। ভাঙড়-২ ব্লকে রয়েছে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখানে কিছু জায়গায় লড়াই হবে। পঞ্চায়েত সমিতিতে রয়েছে ৩০টি আসন। তার মধ্যে ১৪টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছে তৃণমূল। বাকি ১৬টি আসনে হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’ (আইএসএফ)। এই লড়াই কতটা সুষ্ঠু ভাবে হবে, তা নিয়েই কার্যত প্রমাদ গুনছেন ভাঙড়ের সাধারণ মানুষ।

আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে বিজয়গঞ্জ বাজারে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের কার্যালয়ের চিত্র। সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, সার সার গাড়ি, মোটরবাইক দাঁড়িয়ে। কার্যালয় ঘিরে রয়েছেন অন্তত জনা পঞ্চাশেক লোক। সেই জট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতে গেলেই গেটের সামনে দাঁড় করালেন এক জন। কঠোর গলায় প্রশ্ন এল, ‘‘কোথায় ঢুকছেন? কাকে চাই?’’ উত্তরে নেতার সঙ্গে দেখা করতে আসা হয়েছে বলায় সুর আরও চড়িয়ে পাল্টা নির্দেশ এল, ‘‘ভিতরে কালকের পরিকল্পনা চলছে। এখন ঢোকা নিষেধ। এক ইঞ্চি জমিও দাদা ছাড়তে বারণ করেছেন। এই এত ছেলে এসেছে দাদার সঙ্গে দেখা করতে। দাদা এদের সব বুঝিয়ে ছেড়ে দেওয়ার পরে যদি ডাকেন, যাবেন।’’ অপেক্ষার এই সময়েই কানে এল ‘ভোট করানো’র নানা বন্দোবস্তের কথা। আরাবুল অবশ্য পরে বললেন, ‘‘সব রকম ব্যবস্থা রাখছি। তবে, আমরা সন্ত্রাস করি না। কেউ যদি বাড়াবাড়ি করে, তখন তার পরীক্ষা নিই।’’

আরাবুলের কার্যালয় যতটা জমজমাট, ঠিক ততটাই যেন ফাঁকা ভাঙড়ের বিধায়ক তথা আইএসএফ চেয়ারম্যান নওসাদ সিদ্দিকীর ভাঙড়ের বাড়ি। গত পরশু থেকেই তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। মাঝেরহাইট গ্রামের রাস্তা পেরিয়ে নওসাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেখা গেল, ধু ধু করছে আশপাশ। ওই বাড়ি লাগোয়া চায়ের দোকানি এক্রামুল মোল্লা বললেন, ‘‘গত মঙ্গলবার ভাইজান এসেছিলেন। ভোট মিটিয়ে ফেরার কথা ছিল। যে ভাবে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে, আর ঝামেলা পাকানো হচ্ছে, তাতে এখানে ভাইজানের থাকা নিরাপদ নয়।’’ নওসাদের সহযোগী তথা সানপুর অঞ্চলের আইএসএফ সভাপতি আসাদুল মোল্লা আবার বললেন, ‘‘আমরাও ভাইজানকে ফোনে পাচ্ছি না। তবে, ভোটের দিন ভাইজান ঠিক মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবেন। তার পরে সমানে সমানে হিসাব বুঝে নেওয়া হবে।’’

হিসাব বুঝে নেওয়ার এই রাজনীতি অবশ্য চান না দিনকয়েক আগেই মনোনয়নের দিন ভাঙড়ে মৃত আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিন মোল্লার স্ত্রী নুরবানু খাতুন এবং মৃত তৃণমূলকর্মী রাজু নস্করের স্ত্রী রুমা ঘোষ নস্কর। দু’জনেই বললেন, ‘‘ভোট হোক। কিন্তু কারও মৃত্যুর বদলে নয়।’’ তা কি হবে? উত্তর মিলবে কয়েক ঘণ্টাতেই।

আরও পড়ুন
Advertisement