এই ভাবেই জবরদখল করা হচ্ছে ভাঙড় হাই স্কুল মাঠের জমি। নিজস্ব চিত্র।
প্রতি দিনই একটু একটু করে বেআইনি ভাবে জবরদখল হয়ে যাচ্ছে ভাঙড় হাই স্কুলের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল মাঠের জমি। অভিযোগ, এর জেরে বন্ধ হতে বসেছে খেলাধুলা। ক্ষোভ জন্মেছে স্থানীয় মানুষ এবং এলাকার ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে।
ভাঙড় হাই স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙড় ১ ব্লকের প্রাণগঞ্জ পঞ্চায়েতের কালিকাপুর মৌজায় ১০০ জেএল নম্বরের ১৪৫, ১২৪, ১২৫, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১২৯, ১৩০ ও ১৩১ দাগে দু’একর ১৮ শতক জমি রয়েছে, যা ভাঙড় হাই স্কুলের নামে নথিভুক্ত। ওই জমি ভাঙড় হাই স্কুলের পিছনে স্কুলের মাঠ হিসেবে পরিচিত। ভাঙড় হাই স্কুলের নিজস্ব মাঠ হলেও অতীতে এই মাঠেই স্কুলের ছেলেদের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাব ও স্থানীয় ছেলেরা খেলাধুলা করত। এক সময়ে এই মাঠে দাপিয়ে খেলেছেন কলকাতার সুপার ডিভিশনের খেলোয়াড়দের পাশাপাশি মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের তারকা ফুটবলার জামশেদ নাসির, মজিদ বাস্কার, চিমা ওকেরি, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী, শ্যাম থাপারা। ঐতিহ্যবাহী জাগ্রত সঙ্ঘ, বিএসসি ও আমরা সবাই সহ বিভিন্ন ক্লাবের উদ্যোগে নানা ধরনের ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হত। বিএসসি ক্লাবের উদ্যোগে এক সময়ে এই মাঠেই নিধিভূষণ মেমোরিয়াল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হত। ওই টুর্নামেন্টে কলকাতা তথা বাংলার বিখ্যাত ক্রিকেটাররা খেলতেন।সে সব এখন অতীত।
এখন মাঠের চারপাশে গড়ে উঠেছে জনবসতি। এর মধ্যে অনেকেই আবার মেঠো জমি কিনে সেখানে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেছেন। ওই সমস্ত বাসিন্দারা মূলত স্কুল মাঠের মধ্যেই গাড়ি রাখছেন। যাতায়াতের রাস্তা হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে মাঠ, আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনেকে আবার স্কুল মাঠের পাঁচিল ভেঙে বাড়ির গেট বানিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বাড়ির সামনে স্কুল মাঠের জমিতে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়েছেন। সারা দিনই মাঠের উপর দিয়ে সাইকেল, বাইক, টোটো সহ মালবাহী গাড়ি যাতায়াত করছে। খেলাধুলা কার্যত বন্ধ হতে বসেছে বলে স্থানীয় অনেকের অভিযোগ। ভাঙড় হাই স্কুল ও আমার বালিকা বিদ্যালয়ের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও বন্ধ হওয়ার জোগাড় বলে জানালেন অনেকে।স্থানীয় মানুষের আরও বক্তব্য, এ সবই হচ্ছে শাসকদলের এক শ্রেণির নেতার মদতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘যে ভাবে স্কুল মাঠের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে, তা কোনও ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আসলে শাসকদল নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে এই সমস্ত অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সন্ধ্যা হলেই ওখানে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে যায়। মদ-গাঁজার আসর বসে।’’এ বিষয়ে ভাঙড় হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র, প্রাক্তন শিক্ষক এবং পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সভাপতি শেখ সাইদার রহমান বলেন, ‘‘ছেলেবেলায় ভাঙড় হাই স্কুলের ওই মাঠে খেলাধুলা করতাম। চোখের সামনে স্কুলের ঐতিহ্যবাহী এত বড় মাঠ যে ভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে, তা মেনে নিতে পারছি না। বহু চেষ্টা করেছি, কোনও স্তর থেকে সহযোগিতা পাইনি।’’ ভাঙড় হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র তথা বিএসসি ক্লাবের প্রাক্তন সদস্য মুন্সি আনসারুজ্জামান ওরফে মধু বলেন, ‘‘ভাঙড়ের এই মাঠে কলকাতার সুপার ডিভিশনের বহু তারকা খেলোয়াড় খেলে গিয়েছেন। তাঁদের স্মৃতি বিজড়িত এই মাঠ যে ভাবে দখল হচ্ছে, তা দুর্ভাগ্যজনক।’’ভাঙড় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ সরকারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা ঠিক যে মাঠ নিয়ে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। মাঠ কী ভাবে সংস্কার করা যায় এবং পুরো মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা যায়, তার চেষ্টা চলছে।’’তৃণমূলের জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বাহারুল ইসলাম নিজেও ওই স্কুলের ছাত্র। মাঠে অবস্থা দেখে তিনি ব্যথিত। বললেন, ‘‘মাঠের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আমি ইতিমধ্যে আমার দফতরের জেলা পরিষদের তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছি, মাঠে পাঁচিল ও গেট করার জন্য। পর্যায়ক্রমে মাঠ সংস্কার করা থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্ত কাজকর্ম করা হবে।’’