Lok Sabha Election 2024

সন্দেশখালিতে আক্রান্ত পুলিশ কর্মী, ছেলেকে হারানোর স্মৃতি প্রতিমার

এখনও বসিরহাট আদালতে সেই মামলার শুনানি চলছে। মার্চ মাসের ১১ তারিখে বসিরহাট আদালতে শুনানি ছিল। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আদালতে সাক্ষ্য দেন মিনাখাঁ থানার ওসি।

Advertisement
নবেন্দু ঘোষ 
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:১৩
বিশ্বজিৎ মাইতির ছবি নিয়ে বসে আছেন মা। খুলনার ঢোলখালি গ্রামের বাড়িতে।

বিশ্বজিৎ মাইতির ছবি নিয়ে বসে আছেন মা। খুলনার ঢোলখালি গ্রামের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র।

সন্দেশখালি থানার শীতলিয়া পুলিশ ক্যাম্পে ঘুমন্ত অবস্থায় দুষ্কৃতীদের মারে জখম হয়েছেন পুলিশকর্মী সন্দীপ সাহা। সোমবার রাতের এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে, ২০১৯ সালে পয়লা নভেম্বর রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে খুলনা এলাকার ভিলেজ পুলিশ বিশ্বজিৎ মাইতির প্রাণহানির কথা। দুষ্কৃতীদের গুলিতে সে দিন গুরুতর জখম হয়েছিলেন সন্দেশখালি থানার তৎকালীন সাব ইন্সপেক্টর অরিন্দম হালদার। ন’দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে সুস্থ হন তিনি। বর্তমানে মিনাখাঁ থানার ওসির পদ সামলাচ্ছেন। পুলিশের ফেলে যাওয়া দু’টি মোটরবাইকও সে দিন জ্বালিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সরকারি কাজে বাধা, অগ্নিসংযোগ, খুন, অস্ত্র আইন-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। গ্রেফতার হয় কেদার সর্দার, বিধান সর্দার-সহ পাঁচ জন। তারা তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী বলে বিরোধীরা অভিযোগ তোলে। ধৃতেরা বর্তমানে জেল হেফাজতে আছে।

Advertisement

এখনও বসিরহাট আদালতে সেই মামলার শুনানি চলছে। মার্চ মাসের ১১ তারিখে বসিরহাট আদালতে শুনানি ছিল। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আদালতে সাক্ষ্য দেন মিনাখাঁ থানার ওসি। ওই পুলিশ আধিকারিক এ দিন বলেন, ‘‘সন্দেশখালি শুনলেই ওই ভয়ঙ্কর দিন মনে পড়ে যায়। আজও শরীরে ছররার ২৯টি টুকরো ঢুকে আছে। চারটি বের করতে পেরেছিলেন চিকিৎসকেরা। সহকর্মী বিশ্বজিতের প্রাণ রক্ষা হল না ভাবলে খুব কষ্ট হয়। দুষ্কৃতীদের কঠোর সাজা হবে— আইন-আদালতের উপরে সম্পূর্ণ ভরসা আছে।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের পয়লা নভেম্বর সন্ধ্যায় সন্দেশখালি থানায় খবর আসে, খুলনা পঞ্চায়েতের বৌঠাকুরানি গ্রামের একটি মেলায় খুলনা পোলপাড়ার বাসিন্দা কেদার সর্দার ও বিধান সর্দার বিনন্দ হাউলি নামে এক ব্যক্তির পেটে কাচের বোতল ভেঙে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এরপর দুই অভিযুক্ত সহ তাদের সঙ্গীদের খোঁজে সন্দেশখালি থানার সাব ইন্সপেক্টর অরিন্দম হালদারের নেতৃত্বে পাঁচটি বাইকে পুলিশ কর্মীরা খুলনা পোলপাড়ায় যান। তল্লাশি চালানোর সময়ে রজনী ঘাটের কাছে কেদার-বিধান সহ দুষ্কৃতীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়, বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ।

গুলি লাগে বিশ্বজিৎ ও অরিন্দমের গায়ে। পুলিশের দু’টি বাইক পুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। পালিয়ে যান অন্য পুলিশ কর্মীরা। সন্দেশখালির তৎকালীন ওসি সিদ্ধার্থ ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশ গিয়ে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বিশ্বজিৎকে বাঁচানো যায়নি।

বিশ্বজিতের বাড়ি খুলনার ঢোলখালি গ্রামে। বাবা গৌর ভ্যান চালান। ছোট ভাই অভিজিৎ দাদার মৃত্যুর পরে হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছেন। তাঁর রোজগারেই সংসার চলছে কোনও রকমে।

শীতলিয়ায় পুলিশের উপরে হামলার কথা শুনে মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিশ্বজিতের মা প্রতিমা। ছেলেকে হারানোর প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মাত্র আঠাশ বছর বয়সে মারা গেল তরতাজা ছেলেটা। আমার মতো আর কোনও মায়ের কোল যেন এ ভাবে খালি না হয়। তা-ও আমার ছেলে দুষ্কৃতীদের ধরতে গিয়েছিল। আর এখানে তো শুনছি পুলিশ কর্মী শুয়েছিলেন ক্যাম্পে। তা-ও হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। পুলিশের নিরাপত্তা কই!’’

আরও পড়ুন
Advertisement