Kulpi

মৃত শিশুর দেহ সমাধি থেকে তুলে ঝাড়ফুঁক করে বাঁচানোর চেষ্টা

বুধবার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে শিশুর দেহ সমাধি দেওয়া হয়। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওঝার পরামর্শে বৃহস্পতিবার রাতে দেহ মাটি থেকে তুলে আনা হয় বাড়িতে।

Advertisement
দিলীপ নস্কর
কুলপি শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২৩
এখান থেকেই তোলা হয়েছিল শিশু দেহ।

এখান থেকেই তোলা হয়েছিল শিশু দেহ। —নিজস্ব চিত্র।

মৃত শিশুকে সমাধি থেকে তুলে ওঝা ডেকে ঝাড়ফুঁক করে বাঁচানোর চেষ্টা চলছিল। পুলিশ খবর পেয়ে শিশুর দেহ উদ্ধার করেছে। পুলিশ দেখে ধানখেত ভেঙে পালায় ওঝারা।

Advertisement

ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে, কুলপির উদয়রামপুর পাইকপাড়ায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের বিকাশ নস্করের ছেলে বছর দু’য়েকের সায়ন সর্পদষ্ট হয় মঙ্গলবার রাতে। তাকে কুলপি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান পরিজনেরা। সেখান থেকে ‘রেফার’ করা হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। সেখান থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায় শিশুটি। ময়না তদন্ত না করে দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন পরিবারের লোকজন।

পর দিন, বুধবার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে শিশুর দেহ সমাধি দেওয়া হয়। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওঝার পরামর্শে বৃহস্পতিবার রাতে দেহ মাটি থেকে তুলে আনা হয় বাড়িতে। সামনের দরজা বন্ধ করে কয়েক জনকে পাহারায় রেখে শুরু হয় ঝাড়ফুঁক।

পাশেই মধুসূদনপুর গ্রামের কয়েক জন যুবক কার্তিক পুজোর অনুষ্ঠান সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। অত রাতে অপরিচিত তিন জনকে বাড়ির সামনে চাদরমুড়ি দিয়ে বসে থাকতে দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। গ্রামের লোকজনকে ডাকাডাকি করে তোলেন তাঁরা। খবর যায় কুলপি ও মন্দিরবাজার থানায়। দুই থানার পুলিশ আসে। কুলপি থানার পুলিশ শিশুর দেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

এলাকার বাসিন্দা নিবাস মণ্ডল বলেন, ‘‘রাত সাড়ে ১১ নাগাদ বিকাশের বাড়ির সামনে তিন জন চাদর ঢাকা দিয়ে বসেছিল। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, শিশুটিকে সমাধি থেকে তুলে আনা হয়েছে। এরপরেই আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে খবর দিই। আমরা চাই পুলিশ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।’’

এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির পাশে একটি গাছের নীচে পড়ে আছে কলাপাতা, সিঁদুর ও নানা সরঞ্জাম। সেখান থেকে কিছুটা দূরে শ্মশানে প্রায় সদ্য খোঁড়া গর্তা। সেখান থেকেই দেহ তোলা হয়েছিল বলে অভিযোগ। পাশে পড়ে শিশুর জামা-কাপড়, চাদর।

পুলিশ জানিয়েছে, শিশুর দেহ উদ্ধার করে আনা হয়েছে। কোন লিখিত অভিযোগে হয়নি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। যে ওঝারা এই ঘটনায় যুক্ত, তাদের খোঁজ চলছে। বাড়ির লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এক পুলিশ কর্তার বক্তব্য, ‘‘ওঝার ঝাড়ফুঁক বন্ধ করতে গ্রামের মানুষকে মাঝে মধ্যে সচেতন করা হয়। এই কাজ আরও বেশি করে করা দরকার গ্রামাঞ্চলে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement