সরস্বতী পুজোয় বন্ধুরা মিলে কোথায় ঘুরবেন? ছবি: সংগৃহীত।
দুর্গাপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোর ধুমধাম যতই থাকুক, সরস্বতী পুজোর আনন্দ-অনুভূতিটাই আলাদা। এই পুজোয় অল্পবয়সিদেরই রাজত্ব। পাটভাঙা শাড়ি, পুষ্পাঞ্জলি, চোখে চোখে লাজুক হাসি। বাসন্তী পঞ্চমীতে বসন্তের আগমনবার্তা। বাতাসে প্রেম প্রেম গন্ধ।
এ এমন একটি দিন, যে দিন বালিকা বিদ্যালয়ের গেটটিও বয়েজ় স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য উদার হয়ে যায়। উঠতি বয়সের ছেলে এবং মেয়েদেরও একে অপরের প্রতি বাড়তি মনোযোগ পাওয়ার আগ্রহ থাকে। বাগ্দেবীর আরাধনার দিনে স্কুলে স্কুলে ঘোরাঘুরির আলাদা আকর্ষণ। তবে বয়স আরও একটু বাড়লে, প্রেম জমে উঠলে স্কুল-কলেজের বাইরেও কোথাও একটু ঘুরে আসার জায়গা খোঁজেন জুটিরা। শুধু জুটিই বা কেন, সরস্বতী পুজো মানেই পাটভাঙা শাড়ি, নতুন পাঞ্জাবি পরে বন্ধুবান্ধব মিলে হইহই করে বেরিয়ে পড়ার দিন। কিন্তু এমন দিনে যাবেন কোথায়? যুগলে বা বন্ধুবান্ধবে মিলে বেশ কিছুটা সময় ঘুরে আসা যায় এমন পাঁচ জায়গা বেছে নিন।
বর্তির বিল
বর্তি বা বরতির বিল ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছবি: সংগৃহীত।
এই জায়গার নাম বছর পাঁচেক আগেও অনেকে জানতেন না। গ্রামের মধ্যে একটি বিলে পাট শুকোতেন স্থানীয়েরা। কিন্তু গত দু’-তিন বছরে অতি সাধারণ এই জায়গাই হয়ে উঠেছে কলকাতা, শহরতলির কাছেপিঠের জনপ্রিয় গন্তব্য। বর্ষায় বিল থাকে কানায় কানায় পূর্ণ। তখন ডিঙিনৌকায় জলবিহারের সুযোগ মেলে। শীতে সেই রূপ বদলে গেলেও গ্রামীণ পরিবেশ, অনেকটা খোলা আকাশ আর প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে হলে বন্ধুবান্ধব বা যুগলে ঘুরে আসতে পারেন বর্তির বিলে। প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের জন্যও এই জায়গা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পড়ন্ত বিকেল এখানে কাটালে ভালই লাগবে। ট্রেনে গেলে ব্যারাকপুর স্টেশনে নেমে অটোয় নীলগঞ্জ বাজার হয়ে বারবেরিয়া গ্রাম। সেখানেই বর্তির বিল।
সোনার কেল্লা পার্ক
নিউ টাউনে রয়েছে ফেলুদাকে নিয়ে থিম পার্ক। ছবি: সংগৃহীত।
ইকো পার্কেও ঘুরে আসা যায়। তবে যদি বেশি ভিড়ভাট্টা এড়াতে চান তা হলে ঢুঁ মারতে পারেন নিউ টাউনের সোনার কেল্লা পার্কেও। ফেলুদা-ভক্ত হলে এ স্থান মনে ধরবেই। অনেকটা উন্মুক্ত এলাকা, সাজানো-গোছানো উদ্যান। সত্যজিৎ রায়ের জনপ্রিয় সিনেমা ‘সোনার কেল্লা’র থিমেই তৈরি হয়েছে পার্কটি। সেখানেই রয়েছে ‘সোনার কেল্লা’র বৈগ্রহিক একটি দৃশ্যের মডেল। উটের পিঠে ফেলুদা, তোপসে এবং জটায়ু।
প্রিন্সেপ ঘাট: কলকাতার গঙ্গার ঘাটগুলির মধ্যে প্রিন্সেপ ঘাট ভীষণ জনপ্রিয়। ঘাটের পাশে যে সাদা স্মৃতিসৌধটি দেখা যায়, সেটি ১৮৪১ সালে ব্রিটিশ শাসনকালে পণ্ডিত জেমস প্রিন্সেপের স্মরণে নির্মিত হয়েছিল। সাদা সৌধটির সামনে অসংখ্য বাংলা-হিন্দি ছবির শুটিং হয়েছে। পড়ন্ত বিকেলে নৌকায় ভেসে বিদ্যাসাগর সেতু, গঙ্গার বুকে সূর্যাস্তের শোভা দেখতে চাইলে প্রিন্সেপ ঘাট বেছে নেওয়া যায়। ভিড়ভাট্টা যতই থাক, গঙ্গার পারে বন্ধুবান্ধব মিলে আড্ডা দিতে মন্দ লাগবে না।
বেলুড় মঠ: ঘুরে আসা যায় বেলুড় মঠ থেকেও। সরস্বতী পুজোয় বেলুড় মঠের অধীন বিদ্যায়তনগুলির দরজা সকলের জন্যই খোলা থাকে। নির্দিষ্ট সময় খুলে যায় মঠের দরজা। হইহল্লা নয়, বরং খানিক নিরিবিলি পরিবেশ উপভোগ করতে, সাজানো ফুলের বাগান, গঙ্গার শোভা দেখতে আসতে পারেন এখানে। মঠের ভিতরে রয়েছে মিউজ়িয়াম। এখানে এলে সেটি দেখতে ভুলবেন না।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল: ঔপনিবেশিক ভারতের ইতিহাস আগলে রাখা কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলও হতে পারে গন্তব্য। মাঠে বসে গল্প-আড্ডার যেমন সুযোগ রয়েছে তেমনই যদি ইতিহাসের পাতায় ডুব দিতে চান, ঘুরে নিতে পারেন মিউজ়িয়ামটিও। সন্ধ্যায় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড-এর ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। কলকাতার অতীত জীবন্ত হয়ে ওঠে আলো, শব্দের সুচারু ব্যবহারে।