Karanjali Railway Station

জমিদারি গন্ধমাখা করঞ্জলী

গত রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার করঞ্জলী এসে পৌঁছেছি। কলকাতা থেকে গাড়িতে ডায়মন্ড হারবারকে পিছনে ফেলে ন্যাশনাল হাইওয়ে ১১৭ ধরে কাকদ্বীপের দিকে মিনিট চল্লিশ যেতেই করঞ্জলী গ্রাম।

Advertisement
ঈপ্সিতা বসু
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:৩৪
দৃশ্যমান: করঞ্জলীর নদীর পার

দৃশ্যমান: করঞ্জলীর নদীর পার

কাকভোরের মৃদু আদর গায়ে মেখে অসংখ্য নৌকা ভাসছে গঙ্গার জলে। নদী অনেকটাই প্রশস্ত এখানে। ভোঁ বাজিয়ে চলাচল করছে অতিকায় মালবাহী জাহাজ। তার ঢেউয়ের ধাক্কায় দূরে সরে যাচ্ছে জেলে নৌকাগুলি। চলতে চলতে হঠাৎই পাড় ভেঙে ছোট্ট একটা বাঁকের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে নদীর জল। ছোট খাঁড়িটা থেকে নৌকা বের করছিলেন মাঝি। তাঁর নৌকার গলুইয়ে উঠে পড়েছে স্তূপীকৃত মাছ। নরম রোদে চকচক করছে রুপোলি আঁশ। সব মিলিয়ে জমজমাট গঙ্গাপারের করঞ্জলী গ্রামের ট্যাংরার চর।

গত রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার করঞ্জলী এসে পৌঁছেছি। কলকাতা থেকে গাড়িতে ডায়মন্ড হারবারকে পিছনে ফেলে ন্যাশনাল হাইওয়ে ১১৭ ধরে কাকদ্বীপের দিকে মিনিট চল্লিশ যেতেই করঞ্জলী গ্রাম। জাতীয় সড়ক ছেড়ে বাঁ দিকে করঞ্জলী রেল স্টেশনের লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে হাঁটা পথে ঘোষেদের জমিদার বাড়ি। আদি জমিদারবাড়ির মাত্র দু’-এক শতাংশ এখনও রয়েছে। তবে এই চত্বরের মন্দির আর মূর্তির সঙ্গে জড়িয়ে ইতিহাস। কষ্টিপাথরে নির্মিত শ্যাম ও অষ্টধাতুর রাধা মূর্তিটির দিক থেকে চোখ ফেরানো দায়।

Advertisement

পর দিন করঞ্জলী দেখতে বেরিয়ে পড়লাম। সকালেই পৌঁছে গেলাম ট্যাংরার চরে। পারের অস্থায়ী দোকানের টাটকা খেজুর রসের লোভ ছাড়া মুশকিল। ঘুগনির সঙ্গে নরম তুলতুলে পেটাই পরোটার স্বাদও ছাড়া যাবে না। এখানে থাকার জায়গা বলতে সরকারের পথের সাথী আর হোমস্টে। শুধু মনোরম সৌন্দর্যই নয়, করঞ্জলীর ইতিহাসও বর্ণময়। খনন করে পাওয়া জৈন পার্শ্বনাথের নিখুঁত মূর্তিই এখানে পঞ্চানন বা বাসুদেব রূপে পূজিত হয়। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এখানে বসে গোষ্ঠমেলা। কৃষ্ণ ও বলরাম গোচারণে গোষ্ঠে গিয়েছিলেন মেনে নিয়েই আশপাশের মন্দির থেকে রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ শোভাযাত্রা সহকারে মেলা প্রাঙ্গণে আনা হয়। শোভাযাত্রা ও ৫০-৬০টি থালায় ভোগ সাজানো দেখতে ভিড় জমে।

গ্রামীণ: করঞ্জলীর সাদামাঠা জীবন

কিছু দূরেই আর এক অচেনা গ্রাম কাঁটাবেনিয়া। এখানকার বিশালাক্ষীতলায় মন্দিরের দ্বারফলক ও বিশাল প্রস্তরখণ্ডগুলো ফেলে আসা অতীতের স্মৃতি। বিষ্ণু ও বাসুদেবের মূর্তি খুবই সুন্দর। স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনলাম, বিশালক্ষীদেবীকে কোনও মাঝি নদীর পার থেকে খুঁজে পান। সময় নেই তাই কাঁটাবেনিয়ায় মায়া কাটিয়ে গাড়িতে বসলাম।

ফিরতি পথে চোখে পড়ল ভাঙা রাসমেলা। মেলার আনাচকানাচ ঘুরে অজান্তেই সওদার বোঝাটা বেশ ভারী হয়ে উঠল। সূর্য তখন পশ্চিমে ঢলছে।

বেড়ানোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চান? ছবি ও লেখা পাঠান অনধিক ৬০০ শব্দে। ইউনিকোড বাঞ্ছনীয়। পিডিএফ নয়, ওয়ার্ড ফাইলে পাঠান। ঠিকানা ও ফোন নাম্বার থাকা জরুরি। ই-মেল: tour@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement