আথিরাপল্লি জলপ্রপাতের অপূর্ব রূপ। ছবি: সংগৃহীত।
“ও ঝর ঝর ঝর্না…”
পাহাড় থেকে প্রবল বেগে ঝাঁপিয়ে পড়া জলপ্রপাত নিয়ে কত গান, কত কবিতা। সেই কোন সময় থেকে সিক্ত বসনে জলপ্রপাতের জলে নায়িকার নাচের দৃশ্য জনপ্রিয় বহু চলচ্চিত্রে। দুধ সাদা জলরাশি, পাথরে ধাক্কা খেয়ে বাষ্পীভূত হয়ে চারপাশ ঢেকে দেওয়া সেই রূপের টান এড়াতে পারেন এমন ভ্রমণপিপাসু পাওয়া কঠিন।
ঝর্না বা জলপ্রপাতের এই রূপ উপভোগ করার সেরা সময় কিন্তু বর্ষাই। বৃষ্টির জলে চারপাশ ঘন সবুজ হয়ে, এই সময় প্রকৃতি যে শুধু মোহময়ী হয়ে ওঠে তাই নয়, ভরা বর্ষায় জলপ্রপাতের রূপেও যেন ঝড়ে পড়ে যৌবন। সেই রূপ উপভোগ করতে ঘুরে নিতে পারেন এ দেশের তিন জলপ্রপাত।
আথিরাপল্লি-
“বর্ষোরে মেঘা মেঘা…” ঐশ্বর্যা রাইয়ের নাচের দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল দুধ সাদা এই জলপ্রপাতের অংশ। মেঘলা দিনে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে নাচছেন রাই সুন্দরী। পিছনে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসছে প্রবল জলধারা। বর্ষায় কেরলের আথিরাপল্লি জলপ্রপাতের রূপ দেখতে না পারলে জীবনটাই বৃথা, এমনটাই মনে করেন অনেকে। বর্ষাসিক্ত কেরল ঘন সবুজ। মেঘলা আকাশে সেই সবুজ রঙের পাহাড়ের বুক চিরে যেন আসছে সাদা জলধারা, পাথরে ধাক্কা খেয়ে বাষ্পে ভরিয়ে দিচ্ছে আশপাশ। এমন সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে হলে, ভরা বর্ষাতেই নয়েতো ঠিক বর্ষা শেষে পাড়ি দিতে হবে কেরলে।
ত্রিসূর জেলার চালাকুডি পঞ্চায়েত এলাকায় রয়েছে এই জলপ্রপাত। চালাকুডি নদীর জলই ঝরে পড়ছে জলপ্রপাত হয়ে।
যাওয়ার উপযুক্ত সময়- জলপ্রপাতের রূপ সবচেয়ে বেশি উপভোগ করতে গেলে অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের শুরুর দিকে যাওয়াই ভাল। গরম ছাড়া সারা বছরই যাওয়া যায়। তবে বর্ষা ছাড়া জল খুব বেশি থাকে না। সকাল আটটা থেকে সন্ধে ৬ টা পর্যন্ত ঘোরার অনুমতি থাকে।
কীভাবে যাবেন- কোচি বিমানবন্দর থেকে আথিরাপল্লির দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। রেলপথে এর্নাকুলাম এসে সড়কপথেও আথিরাপল্লি যাওয়া যায়। সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন চালাকুডি।
ধুঁয়াধর জলপ্রপাত-মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের এক আকর্ষণ যদি হয় মার্বেল রক তাহলে অবশ্যই আর এক আকর্ষণ ধুঁয়াধর জলপ্রপাত। নর্মদা নদী থেকেই এই জলপ্রপাতের জন্ম। এর নামের আড়ালেই রয়েছে রূপের পরিচয়। ৩০ মিটার উঁচু থেকে প্রবল জলরাশি যখন পাথুরে জমিতে আছড়ে পড়ে, তৈরি হয় প্রবল বাষ্প। চারপাশ যেন মনে হয় ধোঁয়ায় ভরে উঠেছে। সেই থেকেই এর নাম ‘ধুঁয়াধর’। ‘ধুঁয়া’ হল বাষ্প আর ‘ধর’ হল প্রবাহ।
বর্ষার বৃষ্টিতে জলস্তর বাড়ে নদীতে। সেই প্রবল জলরাশি সশব্দে ঝরে পড়ে নীচে। সেই শব্দ প্রতিধ্বনিত হয় দূর-দূরান্ত পর্যন্ত। জলপ্রপাতের প্রবল স্রোত বয়ে যায় নীচের গিরিখাত দিয়ে। সেই রূপ উপভোগের জন্য জলপ্রপাতের ওপর দিয়েই ‘রোপওয়ে’-র ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপযুক্ত সময়- জুলাই থেকে অক্টোবর। বর্ষাতেই সবচেয়ে সুন্দর লাগে এই জলপ্রপাত। শীতেও ঘোরা যায়।
কীভাবে যাবেন-ট্রেন ও বিমান দু’ভাবেই যাওয়া যায়। জব্বলপুর শহর থেকে মোটমুটি ৩২ কিলোমিটার দূরে এই জলপ্রপাত।
যোগ জলপ্রপাত-সবুজ ঘেরা উঁচু পাহাড়ের ওপর থেকে নেমে আসছে জল। কর্ণাটকের সিমোগা জেলায় যোগ প্রপাতের বর্ষার রূপ দেখলে মনে হতে পারে চোখের সামনে যেন কোনও ক্যালেন্ডারের পাতা রয়েছে। এই জলপ্রপাত ধাপে ধাপে নয়, একেবারে পাহাড়ের ওপর থেকে নেমে আসছে। যোগ ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাতগুলির মধ্যে একটি।য
যোগ জলপ্রপাত দেখার দু’টি জায়গা বা ‘ভিউ পয়েন্ট’ আছে। একটি মূল প্রবেশদ্বারের কাছেই। আর একটি ‘ভিউ পয়েন্টে’ যেতে হলে পর্যটকদের ১,৪০০টি সিঁড়ি নীচে নামতে হয়। সেখান থেকে জলপ্রপাতের দৃশ্য একদম আলাদা।
পর্যটক আকর্ষণ- হেঁটে চারপাশ ঘুরে দেখার পাশাপাশি পক্ষী পর্যবেক্ষণ, কায়াকিং-সহ এই জায়গা উপভোগের একাধিক উপায় আছে।
বেড়ানোর উপযুক্ত সময়-অগস্ট থেকে ডিসেম্বর।
কীভাবে আসবেন? কাছের বিমানবন্দর ম্যাঙ্গালোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। রেল স্টেশন তালাগুপ্পা থেকে এই জলপ্রপাতের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। বেঙ্গালুরু থেকে সড়কপথেও আসা যায়। দূরত্ব মোটামুটি ৪১১ কিলোমিটার।