ভালবাসার কাহিনি জড়িয়ে দেশের নানা প্রান্তের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে। তেমনই তিন জায়গা ঘুরে নিতে পারেন সময় করে। ছবি: সংগৃহীত।
তাজমহল: ভালবাসার স্মারক হিসাবেই বিশ্ব চেনে তাজমহলকে। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি আগরার তাজমহলের সঙ্গে জড়িয়ে শাহজাহান এবং মুমতাজের প্রেমকথা। প্রচলিত রয়েছে, মোগল সম্রাট প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতিতে মার্বেল পাথরের সৌধটি তৈরি করিয়েছিলেন যমুনার তীরে।
‘তাজ’ শব্দের অর্থ মুকুট। স্থাপত্যশৈলী ও সৌন্দর্যের জন্য এই স্থান পৃথিবীর কাছেই এক বিস্ময়। ইন্দো-ইসলামিক এবং মোগল ঘরানার স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি তাজমহলকে ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো ‘বিশ্ব হেরিটেজ সাইট’ হিসাবে ঘোষণা করে। পূর্ণিমা রাতে তাজমহলের সৌন্দর্য উপভোগ অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে যে কোনও পর্যটকের কাছেই।
তাজমহলের মূল স্থাপত্যটি মার্বেল পাথরের। কোথাও কোথাও তাতে নকশা তোলা হয়েছে রঙিন পাথরেও। ভিতরে রয়েছে সৌধ। তাজমহলের ঠিক সামনেই রয়েছে সুদৃশ্য বাগান, ফোয়ারা। পশ্চিমে রয়েছে একটি মসজিদ। তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে পশ্চিম, পূর্ব এবং দক্ষিণে।
সময়: সূর্যোদয়ের আধ ঘণ্টা আগে থেকে সূর্যাস্তের আধ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত তাজমহল খোলা থাকে। জ্যোৎস্না রাতে তাজমহল দেখার সুযোগ মেলে রাত ৮টা থেকে ১১টা বেজে ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। তবে সীমিত পর্যটকই সেই সুযোগ পান। তাজমহলের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে টিকিট কাটা যায়।
কী ভাবে যাবেন: আগরা শহরটি দেশের যে কোনও বড় জায়গার সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত। কলকাতা থেকে যেতে হলে হাওড়া অথবা শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ধরতে পারেন। বিমানে দিল্লি পৌঁছে সেখান থেকে বাস বা গাড়িতেও আগরা পৌঁছনো যায়। সরাসরি কলকাতা থেকে গাড়িতেও যেতে পারেন।
রূপমতী মহল
মধ্য প্রদেশের মান্ডুতে গিয়ে দেখে নিতে পারেন রূপমতী মহল। ছবি: সংগৃহীত।
মধ্যপ্রদেশের মান্ডুতে গেলে এখনও শোনা যায় রূপমতী এবং রাজা বাজ বাহাদুরের প্রেমকাহিনি। সত্য-মিথ্যা নিয়ে তর্কবিতর্ক থাকতে পারে। তবে রূপমতী মহলকে প্রেমের স্মারক হিসাবেই মেনে নিয়েছেন অনেকে। শোনা যায়, রানি রূপমতী ছিলেন রূপকথার রাজকন্যার মতোই। যেমন রূপ, তেমনই তাঁর গানের গলা। গুণী সেই কন্যার প্রেমে পড়েছিলেন মালওয়ার সুলতান বাজ বাহাদুর। তিনিও ছিলেন সুরসাধক। সুরই মিলিয়ে দিয়েছিল দু’জনকে। তবে সেই প্রেমময় জীবনে খলনায়ক হয়ে আসেন সম্রাট আকবর প্রেরিত আধম খান। শোনা যায়, তিনিও রূপমতীর রূপে মজেছিলেন। এ দিকে, সামান্য ক্ষমতায় বাজ বাহাদুরের পক্ষেও অধম খানের বিশাল সেনাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। সুলতান পরাস্ত হওয়ার পরে আধমের কাছে নিজেকে সঁপে দিতে না চাওয়ায় রূপমতী বিষ খান।
মধ্যপ্রদেশের ধার জেলায় মান্ডুতে গেলে অনেক কিছুই দেখতে পাবেন। তবে রূপমতী মহল নিয়ে পর্যটকদের আগ্রহ একটু বেশি। শোনা যায়, রূপমতীর জন্যই বাজ বাহাদুর পাহাড়ের মাথায় বানিয়ে দিয়েছিলেন একটি মহল। সেখান থেকেই চারপাশের দৃশ্যাবলি দেখতেন তিনি। তারই অদূরে রয়েছে রেওয়া কুণ্ড। সেখান থেকে জল এনে তিনি পূজার্চনা করতেন। রূপমতী মহল থেকে খানিক দূরেই রয়েছে বাজ বাহাদুরের মহল। মান্ডুর আর একটি আকর্ষণ হল জাহাজ মহল। দু’টি কৃত্রিম জলাশয়ের মাঝে তার অবস্থান। তাপমাত্রার বিচারে শীতকাল ঘোরার জন্য আদর্শ তবে বর্ষাতেও এখানকার সৌন্দর্য কম থাকে না।
সময়: সকাল ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রূপমতী মহল ঘোরা যায়। পাহাড়ের উপরের এই মহল থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য মনোরম।
কী ভাবে যাবেন: ট্রেনে করে চলে যেতে পারেন ইনদওর। সেখান থেকে সড়কপথে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে মান্ডু বিমানে সরাসরি ইনদওর পৌঁছেও সড়কপথে যাওয়া যায়।
শনিওয়ার ওয়াড়া
এই দুর্গের সঙ্গে জড়িয়ে বাজি রাও এবং মস্তানির প্রেমকাহিনি।
পুণের এই দুর্গের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে মরাঠা পেশোয়া বাজি রাও এবং মস্তানির প্রেমের গল্প। ২০১৫ সালে সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘বাজিরাও মস্তানি’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর এ নিয়ে চর্চা, সমালোচনা দুই-ই হয়। এই দুর্গেও ছবির কিছু অংশের শুটিং হয়েছিল। কেউ কেউ বলেন, বাজি রাও এবং মস্তানির প্রেমকাহিনি একেবারেই কাল্পনিক। তবে পুণের শনিওয়ার ওয়াড়ায় একটি প্রবেশ তোরণ রয়েছে মস্তানি দরওয়াজ়া নামে। অনেকে বলেন, মস্তানি বাজি রাওয়ের স্ত্রী ছিলেন। শনিওয়ার ওয়াড়া মরাঠা সাম্রাজ্যের স্মৃতিচিহ্ন বহন করে চলেছে। সাত তলার এই মহল ঐতিহাসিক স্থান হিসাবে পর্যটকদের কাছে পরিচিত।
শনিওয়ার ওয়াড়ার পাঁচটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল দিল্লি দরওয়াজ়া। দিল্লির দিকে মুখ করে এই দরজা তৈরি হয়েছে বলে এমন নামকরণ। বিশাল কাঠের দরজা প্রথমেই চোখ টানে। গড় বা দুর্গ সুরক্ষিত রাখতে মূল প্রবেশদ্বার অত্যন্ত মজবুত করে বানানো হত। দিল্লির দরওয়াজা লোহা দিয়ে তৈরি, হাতি এনেও যাতে তা ভাঙা না যায় সে জন্য এর মধ্যে গেঁথে দেওয়া হয়েছিল ধারালো ফলা। শনিবার ওয়াড়ার উত্তরে রয়েছে মস্তানি দরওয়াজা। কেউ বলেন এর নাম আলিবাহাদুর দরওয়াজ়া। কেউ কেউ বলেন, বাজি রাওয়ের স্ত্রী ছিলেন মস্তানি। তাঁর নামে মহলও রয়েছে। এ ছাড়াও, পূর্ব দিকে রয়েছে খিড়কি, দক্ষিণ পূর্বে গণেশ এবং দক্ষিণে রয়েছে জাম্বুল দরওয়াজ়া। শনিবারওয়াড়ার ভিতরের রয়েছে কাচের তৈরি ঘর, নৃত্য পরিবেশনের জন্য বিশাল মহল-সহ অনেক কিছুই। স্থানটি ঘেরা রয়েছে সুবিশাল বাগিচায়।
সময়: শনিওয়ার ওয়াড়ায় যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে হয়। ভিতরে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডেরও ব্যবস্থা রয়েছে। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এই জায়গা ঘোরার সুযোগ থাকে।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা বা যে কোনও বড় শহর থেকে বিমানে পুণে পৌঁছে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে শনিওয়ার ওয়াড়া যেতে পারেন। হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে পুণে জংশন স্টেশনে পৌঁছে সেখান থেকেও সড়কপথে এই জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। স্টেশন থেকে শনিওয়ার ওয়াড়ার দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার।