গাড়ি চলে না যে শহরগুলিতে। ছবি: সংগৃহীত।
বিশ্ব জুড়েই বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। যে কোনও জনবহুল দেশেরই বড় বড় শহরগুলিতে যানজট বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। ২০২৪-এর একটি সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, পৃথিবীতে গাড়ির সংখ্যা ১৪ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে ১৮২ জনের গাড়ি রয়েছে। গাড়ি বেশি মানেই দূষণও বেশি। আমেরিকার পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা বলছে, একটি যাত্রীবাহী গাড়ি থেকে প্রতি বছর কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ ৪.৬ মেট্রিক টন। এর সঙ্গে যদি কোটি কোটি গাড়ি যুক্ত হয়, তা হলে সেই নির্গমনের মাত্রা কতটা হতে পারে, তা বোধ হয় অনুমানের বাইরে।
বিশ্বকে বাঁচাতে তাই পরিবেশ বান্ধব গাড়ির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, বহু দেশেই এমন কিছু পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে গাড়ি চলে না বা চললেও তা হাতেগোনা। চাইলে এক বার গিয়ে দেখতে পারেন সেই সব শহরের জীবনযাপন পদ্ধতি।
জ়ারম্যাট, সুইৎজ়ারল্যান্ড
সুইৎজ়ারল্যান্ড বললেই দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে ছবির মতো সুন্দর পার্বত্য এলাকা। গ্রীষ্মে যা ঘন সবুজ, আর শীতে বরফের চাদরে ঢাকা। ইউরোপের এই দেশেই রয়েছে জ়ারম্যাট নামের এক শহর। ম্যাটারহর্ন পর্বতের পাদদেশে এই শৈলশহর। আল্পসের বুকে অবস্থিত ভ্রমণপিপাসুদের স্বর্গরাজ্য জ়ারম্যাটে কিন্তু মোটর গাড়ি চলে না। এখান থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ট্যাস্ক নামে একটি জায়গা। গাড়ি চলে সেই পর্যন্তই। জ়ারম্যাট যাওয়ার জন্য এখান থেকেই ট্রেন পাওয়া যায়। ২০ মিনিট অন্তর ট্রেন মেলে। পর্যটনকেন্দ্রটি ঘুর দেখার ভাল উপায় হাঁটা। এ ছাড়া ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। পাহাড়ে ওঠার জন্য পাওয়া যায় ‘মাউন্টেন বাইক’। এ ছাড়া ই-ট্যাক্সি ও ই-বাইক মেলে কোথাও কোথাও। পাহাড়ে চড়ার জন্য ই-বাস চলে দু’টি পথে।
ভেনিস, ইটালি
মনে পড়ে সেই গান, ‘দো লাফজ়ো কি হ্যায়…’। ইটালির ভেনিস। এই শহরের সঙ্গে ভারতবাসীর যোগ অমিতাভ-জিনাত আমন অভিনীত 'দ্য গ্রেট গ্যাম্বলার' ছবির গানের মাধ্যমে। পরবর্তী কালে একাধিক বলিউডি ছবিতেই ভেনিসের দৃশ্যায়ন চোখে পড়েছে। ভেনিসের অন্যতম জনপ্রিয় দ্বীপ-শহর হল সেন্ট্রো স্টোরিকো। ১২৬টি দ্বীপ নিয়ে তৈরি ভেনিসে বেশির ভাগ মানুষ পায়ে হেঁটে ঘোরাঘুরি করেন। এখানে গাড়ির ব্যবহার বেশ কম। তবে সাইকেল চলে এখানে। এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাওয়ার জন্য রয়েছে জলপথ। নৌকা বা গন্ডোলা করে যাতায়াত করেন এখানকার বাসিন্দা ও পর্যটকেরা। এখানকার অসংখ্য ক্যানাল বা জলপথ পেরোনোর জন্য ৪০০টি সেতু রয়েছে। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরটেজ় সাইটের তথ্য বলছে, প্রতি বছর ভেনিসে ২ কোটি পর্যটক আসেন।
লামু, কেনিয়া
কেনিয়ার খুব পুরনো একটি শহর লামু। স্থানীয় মানুষ সোয়াহিলিতে কথা বলেন। এই শহরেও গাড়ি নিষিদ্ধ। শবাসিন্দারা গাধার পিঠে চেপে যাতায়াত করেন। মালপত্র পরিবহণেও গাধা ব্যবহার করা হয়। যাতায়াতের জন্য রয়েছে এক ধরনের জলযান, যাকে বলা হয় ‘ধাও’। শহর জুড়ে রয়েছে অসংখ্য গলিপথ। ১৯৬০ সাল থেকে এই স্থানটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ় সাইটের মর্যাদা পেয়েছে।