Tesla

ইলন মাস্কের ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত! দেউলিয়া হওয়া থেকে ফিরে এসে কী ভাবে পথের কাঁটা সরিয়েছিল টেসলা?

বিশাল ব্র্যান্ড, পৃথিবীর সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং, সফল হওয়ার পরিকল্পনা— ইউরোপের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার ধরার জন্য সেই সময় বিএমডব্লিউ-র কাছে সবই ছিল। কিন্তু ইলনের থেকে উপহার নেওয়াই ছিল তাদের মারাত্মক ভুল। কিন্তু কেন?

Advertisement
অভ্র রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৮
Elon Musk

ইলন মাস্ক। —ফাইল চিত্র।

ইলন মাস্ক কেন ‘জিনিয়াস’? শুধুই ভাল ব্যবসা-বুদ্ধি? না কি তিনি এক জন অসাধারণ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ? অথবা এক জন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা! একটা সময় ছিল যখন তালা ঝোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল তাঁর সংস্থা টেসলায়। কিন্তু তা হতে দেননি ইলন। বরং, তিনি যে ভাবে বুদ্ধি খাটিয়ে প্রতিযোগী সংস্থাকে ‘পথের কাঁটা’র মতো সরিয়ে দিয়েছিলেন তাতে তাঁকে ‘জিনিয়াস’ বললে ভুল হবে না। ২০২৪ সালে টেসলার সব ‘গোপন তথ্য’ বিএমডব্লিউ-কে উপহার হিসাবে দিয়ে দেন ইলন মাস্ক। সবাই ভেবেছিলেন, মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে আমেরিকার ধনকুবেরের। কিন্তু এই দান বা সমাজসেবা আসলে ছিল ব্যবসার ইতিহাসে অন্যতম ‘নিষ্ঠুর’ পদক্ষেপ।

Advertisement

বিশাল ব্র্যান্ড, পৃথিবীর সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং, সফল হওয়ার পরিকল্পনা— ইউরোপের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার ধরার জন্য সেই সময় বিএমডব্লিউ-র কাছে সবই ছিল। কিন্তু ইলনের থেকে উপহার নেওয়াই ছিল তাদের মারাত্মক ভুল। কিন্তু কেন? তার আগে জেনে নেওয়া দরকার টেসলার ইতিহাস। টেসলা তাদের যাত্রা শুরু করেছিল ২০০৩ সালে। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যে অর্থাৎ, ২০০৮ সালে টেসলা ঋণখেলাপি হওয়ার দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ায়। টেসলাকে চালু রাখার জন্য ইলনকে সেই সময় নিজের জমানো চার কোটি ডলার সংস্থায় ঢালতে হয়েছিল।

২০০৯ সালে টেসলা আরও ১৮ কোটি ৭০ লক্ষ ডলারের বিনিয়োগ জোগাড় করে। কিন্তু সে বছর মাত্র ১৪৭টি গাড়ি বিক্রি করতে পেরেছিল তারা। পরের বছর টেসলা তাদের আইপিও নিয়ে এলেও ২০১৩ সাল অবধি শেয়ারের দর তেমন বাড়েনি। ২০১৩ সালে জনপ্রিয় এস মডেলের গাড়ি তৈরি করতে সমস্যা হচ্ছিল তাদের। সংস্থার টাকাও ফুরিয়ে এসেছিল। সেই সময় গুগ্‌লকে এক কোটি ১০ লক্ষ ডলারের একটা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইলন। কিন্তু সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়। ২০১৪ সালে অপ্রত্যাশিত ক্ষতির মুখে পড়ে টেসলা। কিন্তু তখনও ইলন জোর গলায় বলেছিলেন, ২০১৫ সালেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এত আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে পাচ্ছিলেন তিনি? তার নেপথ্যেও ছিল ধনকুবেরের পাকা মাথা।

২০১৩ সাল নাগাদ বিএমডব্লিউ-সহ অন্য গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার ধরার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাজারে অনেক টাকা বিনিয়োগও করে সংস্থাগুলি, ঠিক যেমনটা ইলন চেয়েছিলেন। একই সঙ্গে অন্য এক মোক্ষম চাল চালেন টেসলাকর্তা। পকেটে কম টাকা থাকা সত্ত্বেও ২০১৩ সালেই টেসলা তাদের প্রথম ‘গিগা ফ্যাক্টরি’ তৈরির ঘোষণা করে। ‘গিগা ফ্যাক্টরি’ ছিল টেসলার ব্যাটারি তৈরির কারখানা। প্রচুর পরিমাণে ব্যাটারি উৎপাদন করতে সক্ষম ছিল সেই সংস্থা।

এর পর ২০১৪ সালে আরও এক অভাবনীয় কাণ্ড ঘটান ইলন। ২০১৪-র ১২ জুন ইলন একটা ব্লগ পোস্ট করেন যার শিরোনাম ছিল, ‘আমাদের সব পেটেন্টের মালিক আপনিও’। তিনি জানান, সব পেটেন্ট বিনামূল্যে বিলি করবে টেসলা। সেই ঘোষণা শুনে অনেকেই ভেবেছিলেন, ইলন পাগলামো করছেন। কিন্তু ব্যবসার আটঘাট বোঝেন এমন অনেকেরই মতে, সেই পাগলামির নেপথ্যে ছিল ইলনের তুখোড় বুদ্ধি। যখন টেসলার প্রতিযোগীরা টেসলার পেটেন্ট ব্যবহার করে বাজার ধরতে ব্যস্ত, তখন ইলন তাঁর সাম্রাজ্য সাজিয়ে ফেলেছেন। অন্য দিকে, ব্যাটারি তৈরির কারখানাও তৈরি। টেসলার থেকে কম দামে ব্যাটারি উৎপাদন করা অন্য কারও পক্ষে তখন সম্ভব ছিল না। সেই সময়ই এই পেটেন্ট ‘উপহার’ দেয় টেসলা। ‘উপহার’ নেয় বিএমডব্লিউ।

ইলন দেখেছিলেন টেসলার কাছে অর্থের থেকেও বড় সমস্যা দু’টি—

১) বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার তখনও খুব ছোট।

২) কোনও সংস্থাই বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য চার্জিং স্টেশন বানাচ্ছে না।

ইলন উপলব্ধি করেছিলেন, বৈদ্যুতিক গাড়ির লড়াই একা জেতা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারের ভিত আরও শক্ত করতে হবে। তার জন্য নিতে হবে সাহসী সিদ্ধান্ত। এর পরেই টেসলার পেটেন্ট বিনামূল্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইলন। পেটেন্ট বিনামূল্যে দেওয়ার সিদ্ধান্তে এক ঢিলে তিন পাখি মেরেছিল টেসলা—

১) অন্য কোম্পানিকে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে উৎসাহিত করা।

২) গাড়ি চার্জ করার পরিকাঠামো বাড়ানো।

৩) টেসলার তথ্যপ্রযুক্তিকে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারের মানদণ্ড হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া।

টেসলার পেটেন্ট হাতে পেয়েই প্রতিযোগী সংস্থাগুলি বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে বিনিয়োগ কয়েকশো কোটি ডলার বিনিয়োগ করে। কিন্তু টেসলার উৎপাদন ক্ষমতা, ব্যাটারির দামের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা তাদের ছিল না। যেখানে টেসলার ব্যাটারির দাম প্রতি ঘণ্টায় প্রতি কিলোমিটারের জন্য ১৮৭ ডলার, সেখানে বিএমডব্লিউয়ের ব্যাটারির উৎপাদন খরচ ছিল ২৮০। ফলে এক এক করে অনেকগুলি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির সংস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে।

২০১৬ থেকে টেসলার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। আস্তে আস্তে দেখা যায় টেসলা তাদের প্রতিযোগীদের থেকে ৬০ শতাংশ কম দামে ব্যাটারি তৈরি করতে পারছে। ফলে টেসলার গ্রাহকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারের অপরিহার্য হয়ে ওঠে ইলনের সংস্থা।

আরও পড়ুন
Advertisement