সাক্ষী মালিক। — ফাইল চিত্র।
সাক্ষী মালিক কুস্তিতে ইতিহাস তৈরি করেছেন। ভারতের প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র মহিলা কুস্তিগির হিসাবে অলিম্পিক্সে পদক জিতেছেন। মাঠের বাইরেও তাঁর লড়াই কোনও অংশে কম নয়। দেশের এক শক্তিশালী রাজনীতিবিদ তথা একটি ‘সিস্টেম’-এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন তিনি। কুস্তির ম্যাটের মতো ছ’মিনিটে সেই লড়াই শেষ হয়নি। আজও তা চলছে। তবে সাক্ষী জয় পেয়েছেন অনেক কিছুতে। তাঁর বা তাঁদের আন্দোলনের জেরেই সরতে হয়েছে ‘বাহুবলী’ ব্রিজভূষণ শরন সিংহকে। একটু হলেও বদল এসেছে কুস্তিতে। তবে সাক্ষী নিজেই জানিয়েছেন, লড়াই চলবে যত দিন না শাস্তি হবে।
‘উইটনেস’। বাংলা করলে দাঁড়ায় সাক্ষী। সুকৌশলে নিজের নামটিকেই ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে আত্মজীবনী লিখেছেন সাক্ষী। শুধু নামে নয়, ৩২ বছরের জীবনে অনেক ঘটনারই ‘সাক্ষী’ থেকেছেন তিনি। এতটাই যে, আত্মজীবনী লেখার জন্য কোনও সময় শব্দ কম পড়েনি। বরং পুরোটা পড়লেও মনে হয় অনেকটাই বাকি রয়ে গেল।
আন্দ্রে আগাসি, ফিল নাইট, রাজকুমার হ্যারির আত্মজীবনী লেখা লেখক তথা পুলিৎজ়ার পুরস্কার জয়ী সাংবাদিক জেআর মোয়েরিঙ্গার গত বছর জানিয়েছিলেন, তিনি হ্যারির আত্মজীবনী লিখতে অস্বীকার করেছিলেন। তাঁর মতে, এখনকার আত্মজীবনী মানেই সেই পুরনো গল্প। যাঁর জীবনী তিনি কী করেছেন, কত ভাল ছিলেন, কী কী সাফল্য অর্জন করেছেন, কতটা কঠিন ছিল সে সব— এ সবই বস্তাপচা কাহিনি। মোয়েরিঙ্গার আত্মজীবনীর সংজ্ঞা ছয় শব্দে দিয়েছিলেন, ‘আ স্টোরি, কার্ভড ফ্রম আ লাইফ’। একটা গল্প, যা জীবন থেকে তৈরি হয়।
ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের আত্মজীবনী এখনও সেই ধারা থেকে বেরোতে পারেনি। এখন সেখানে সেই কথাগুলোই লেখা হয়, যা তিনি প্রকাশ্যে বহু বার বলেছেন। বেশির ভাগই আত্মকেন্দ্রিক। আমিত্বে ভরা। ব্যতিক্রমও রয়েছে। অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী অভিনব বিন্দ্রার আত্মজীবনী ‘আ শট অ্যাট হিস্ট্রি’ বা রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ‘আই হ্যাভ দ্য স্ট্রিটস’ উল্লেখ্য। সেই তালিকায় সংযোজিত হতেই পারে সাক্ষী মালিকের ‘উইটনেস’।
সাক্ষীর কুস্তিজীবন নিয়ে এখন সাধারণ মানুষের খুব একটা আগ্রহ থাকার কথা নয়। নেইও। তিনি কুস্তির ম্যাট থেকে অনেকটাই দূরে। বরং সাক্ষী মনে রয়েছেন রাজধানীর বুকে সতীর্থ কুস্তিগিরদের সঙ্গে তাঁর প্রতিবাদের জন্য। দিল্লির পথে পুলিশের তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য এখনও অনেকের চোখের সামনে ভাসে। সাক্ষী যাঁদের সঙ্গে লড়েছিলেন তাঁদের মধ্যে বিনেশ ফোগাট প্যারিস অলিম্পিক্স থেকে লড়াই করে খালি হাতে ফিরে ভোটে জিতে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছেন। বজরং পুনিয়া কুস্তি এবং রাজনীতির মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করছেন। সাক্ষী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নীরবে।
সাক্ষী শুধু কুস্তির জন্য নয়, লড়াই চালাচ্ছেন মহিলাদের জন্যও। সেই মহিলাদের কুস্তিগির হতেই হবে এমন ব্যাপার নেই। রোজকার খেটে খাওয়া মহিলা বা নামীদামি কর্পোরেটে চাকরি করা মহিলারাও যদি অত্যাচারিত হন, সাক্ষী তাঁদেরও পাশে। সাক্ষীর আত্মজীবনী সাহসের এক প্রতিভূ, যা লেখা সহজ নয়। যা বলা সহজ নয়। বিশেষ করে আপনি যদি ভারতীয় ক্রীড়াবিদ হন। কারণ যে কোনও বিষয়ের মতো খেলাধুলোর জগতেও এমন অন্ধকার সত্য লুকিয়ে রয়েছে, যা সামনে আসলে নিজের বিপদই বাড়বে। সাক্ষী সাহস করে সেটাই তুলে এনেছেন। নিজের বিপদের পরোয়া না করেই।
বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে পারতেন সাক্ষী। অনায়াসে নিজের ঐতিহাসিক পদক, কুস্তিজীবন, মহিলা কুস্তির জন্য নিজের কাজের কথা লিখতে পারতেন। সেগুলো আছেও। তবে একই সঙ্গে কুস্তিগিরদের প্রতিবাদ, ব্রিজভূষণের যৌন নির্যাতনের ইতিহাস, মেয়েদের শরীর নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য, প্রিয় বন্ধু (এখন স্বামী) সত্যবর্তকে বিয়ে করার জন্য পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াই, বার বার লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হওয়ার কথাও গুরুত্ব দিয়ে লেখা হয়েছে।
ব্রিজভূষণকে নিয়ে বইয়ে গোটা একটি অধ্যায় রয়েছে। সাক্ষী জানিয়েছেন, ২০১২ সালে ব্রিজভূষণ কুস্তি সংস্থার প্রধান হওয়ার সময় তিনি জানতেনই না কী ভাবে এই সংস্থা পরিচালিত হয়। শুধু জানতেন চার বছর অন্তর নির্বাচনের কথা। পরে বুঝতে পারেন কী ভাবে রাজনৈতিক শক্তি কাজে লাগিয়ে ব্রিজভূষণ ক্ষমতা বাগিয়েছেন। তাঁকে সাহায্য করেছেন আর এক রাজনৈতিক নেতা। ব্রিজভূষণ যে ভারতের কুস্তিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতেই এসেছেন সেটা বুঝে যান সাক্ষী। তবে যত ক্ষণ না তাঁর আঁচ নিজের উপরে পড়ছিল তত ক্ষণ সাক্ষীর চিন্তা হয়নি।
সাক্ষী লিখেছেন, “ভারতে কুস্তির প্রতিযোগিতাগুলোর অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশের নন্দিনী নগরে কেন জুনিয়র জাতীয় প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হচ্ছিল বুঝিনি। পিছিয়ে পড়া এলাকার একটা ছোট্ট গ্রাম। কোনও গুরুত্বও নেই। লখনউ থেকে অযোধ্যা যাওয়ার হাইওয়েতে সেই গ্রাম। স্থানীয় রেলস্টেশনও ৪০ কিলোমিটার দূরে। পরে বুঝি, সেখানে প্রতিযোগিতা আয়োজন করার আসল কারণ ব্রিজভূষণ, যিনি ওই এলাকার লোকসভার সাংসদ এবং উত্তরপ্রদেশ কুস্তি সংস্থার সভাপতি।”
সেই প্রতিযোগিতায় সোনা জেতার পরেই সাক্ষী ‘নজরে’ পড়েন ব্রিজভূষণের। তত দিনে তাঁর ‘বাহুবলী’ ছদ্মনাম এবং মাফিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ কানে এসেছিল সাক্ষীর। সাক্ষী লিখেছেন, “আমি নিজেকে এ সব থেকে দূরে রাখতাম। শুধু ম্যাটে ফোকাস ছিল... এক বার দেখলাম উনি জাতীয় শিবিরে নিয়মিত আসা শুরু করলেন। তখন একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য ট্রায়াল চলছিল। তবে ব্রিজভূষণের নজর যাঁর উপরে পড়ত তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক বা আলোচনা স্রেফ কুস্তিতে সীমাবদ্ধ থাকত না। ম্যাচ দেখে যাঁকে পছন্দ হত উনি তাঁর ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতেন। কিছু কিছু মেয়ের ব্যাপারে সব জানায় আগ্রহ ছিল। সেখানে একজন ফিজিয়োথেরাপিস্ট ছিল যার কাজই ছিল মেয়েদের ব্যাপারে খবর এনে ব্রিজভূষণকে দেওয়া... কেউ কেউ সেই আগ্রহ উপভোগ করত। অনায়াসে ব্রিজভূষণের কাছে গিয়ে কথা বলত। কারও কারও সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়েছিল বলে জানি। তারাই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ পেত এবং বিদেশে যেত।”
সাক্ষী আরও লিখেছেন, “আমি কোনও দিন সে কাজ করিনি। নিজের বুদ্ধি আর ওঁর অতীত ইতিহাস জেনেই। ২০১২ সালে ট্রায়ালের সময় আমার বয়স ছিল ১৯। ট্রায়ালে জেতার পরেই উনি আমাকে বাঁদর বলে ডাকা শুরু করেন। যেখানেই দেখতেন বলতেন, ‘এ দিকে আয়, আমার বাঁদর’। কুস্তিগির থেকে বাঁদর হয়ে গিয়েছিলাম আমি! কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই নিয়মিত ওর ফোন আসত। জিজ্ঞাসা করতে আমার কিছু দরকার কি না। প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়ার চেষ্টা করতেন। আমি উপেক্ষা করলে নির্দেশ দিতেন কথা বলার জন্য। বলতেন আমাকে এমন উচ্চতায় পৌঁছে দেবেন যেখানে কেউ যায়নি। প্রথমে মাঝেমাঝে ফোন আসত। একসময় নিয়মিত ফোন আসত। আমাকে না পেলে ফিজিয়োথেরাপিস্ট ধীরেন্দ্র প্রতাপ সিংহকে ফোন করতেন। তিনি নিজের ফোনে ব্রিজভূষণের সঙ্গে আমার কথা বলাতেন। জাতীয় শিবির থেকে ফেরার পরেও একই কাণ্ড হতে থাকে। পরে আমার মায়ের ফোনেও ফোন করতে থাকেন। আমার মা এক দিন রাগে ফোন ছুড়ে ভেঙে দিয়েছিলেন। নির্দেশ দিয়েছিলেন শুধু ম্যাটে ফোকাস করতে।”
সাক্ষীর দাবি, কুস্তি সংস্থায় ব্রিজভূষণের ক্ষমতা এতটাই বেশি ছিল যে সব সময় একটা ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়ে থাকত। কুস্তিজীবন শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল। তিনি কতটা শক্তিশালী ছিলেন সেটা বুঝে গিয়েছিলেন বলে সেই মুহূর্তে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যাননি সাক্ষী।
মাঝের কয়েকটি বছরে ঘটে গিয়েছে অনেক জিনিসই। কিন্তু প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ওঠে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে। এখানেও মানুষ চিনতে ভুল হয়েছিল সাক্ষীর। যে মানুষটিকে চিনতে তিনি ভুল করেছিলেন তিনি আর কেউ নন, বিনেশের ভাইঝি তথা বিজেপি বিধায়ক ববিতা ফোগাট। জানুয়ারির শুরুতে দিল্লিতে রেলের কোয়ার্টারে এসে থাকতে শুরু করার পর এক দিন ববিতার ফোন পেয়েছিলেন সাক্ষী। ববিতা জানান, ব্রিজভূষণকে সরানোর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সোনেপতের একটি ধাবায় বজরং পুনিয়া, বিনেশ, তাঁর স্বামী সোমবীরও হাজির ছিলেন। সেখানে ব্রিজভূষণকে সরানোর পরিকল্পনা করা হয়। ঠিক হয় যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসে প্রতিবাদ করা হবে। ববিতা আশ্বাস দেন, তাঁর সঙ্গে নিয়মিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কথা হয়। প্রতিবাদ শুরু করলে তিনি ঠিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাজি করিয়ে ব্রিজভূষণকে সরানোর ব্যবস্থা করে দেবেন।
সেই মতো ১৮ জানুয়ারি প্রতিবাদে বসেন সাক্ষীরা। কিন্তু ববিতার আচরণ সন্দেহজনক লাগতে শুরু করে অনেকেরই। ধর্নার অনুমতি ববিতা আদায় করলেও তিনি ধর্নাস্থলে ছিলেন না। সাক্ষী লিখেছেন, “ব্রিজভূষণকে সরানোর স্বপ্নে আমরা তখন অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বুঝতে পারিনি সামনে কী আসতে চলেছে। তা হলে আরও একটু ভাল করে তৈরি হতে পারতাম.. ববিতা আমাদের বলেছিল, নিজের দলের সাংসদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ধর্নায় ও থাকলে অস্বস্তিতে পড়বে। তবে আমাদের সব রকম সাহায্য করতে ও তৈরি ছিল বলে আশ্বাস দিয়েছিল। আমার সন্দেহ হলেও ওর কথায় বিশ্বাস করেছিলাম। আমরা সবাই চাইছিলাম ব্রিজভূষণকে কুস্তি সংস্থা থেকে সরাতে। ববিতাও সেটাই চাইছিল। ববিতা জানত ভারতীর সেরা কুস্তিগিরেরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সরকার জবাব দেবেই। আমাদের দ্রুত যন্তর মন্তর থেকে সরানোর চেষ্টা করবে। সেই সময় নায়ক হিসাবে ববিতা এসে মধ্যস্থতাকারীর কাজ করে সুনাম কুড়োবে। যদি সমস্যা মিটিতে দিতে পারে এবং আমাদের সঙ্গে অমিত শাহের কথা বলিয়ে দিতে পারে তা হলেই ওর প্রাপ্তি। আমাদের প্রতিবাদ শেষ করে দিতে পারলে সরকারের থেকে সেরা পুরস্কার আর কী হতে পারে? ববিতা শুধু ব্রিজভূষণকে সরাতেই চায়নি, ওর জায়গায় নিজে বসতে চেয়েছিল।”
দীর্ঘ প্রতিবাদ এবং সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজেদের দাবিদাওয়া রাখার পর ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাতের বন্দোবস্ত হয়। সাক্ষী হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। ভেবেছিলেন, এ বার হয়তো সুরাহা পাওয়া যাবে। বড় ধাক্কা খেতে হয় সেখানেও। সাক্ষী লিখেছেন, “ওঁর মুখে কোনও আবেগ দেখতে পাইনি। আমাদের কথা শুনে যে উনি অবাক হয়েছেন, তা বোঝাই যায়নি। বাকিদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল ওঁর প্রতিক্রিয়া..একজন কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলল। সে সময় অনুরাগ কারও সঙ্গে আবহাওয়া নিয়ে কথা বলছিলেন। যেন আমাদের কথা শুনতে শুনতে উনি বিরক্ত এবং বৈঠক শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছেন। খুব রূঢ় লেগেছিল ওঁর ব্যবহার।”
বৈঠক শেষ হওয়ার পরে বজরংকে ফোন করেন অমিত শাহ। জানান, সব দাবি মেনে নেওয়া হবে। উনি কুস্তিগিরদের প্রতিবাদ শেষ করে দিতে বলেন। প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের সঙ্গে অনুরাগের বাড়িতে এসেছিলেন ববিতাও। তিনিও বার বার অনুরোধ করেন অমিত শাহের কথায় বিশ্বাস রাখার জন্য। এ-ও বলেন, অমিত শাহ একবার কোনও কথা বললে সেটা থেকে পিছু হটেন না। বাকিরা সেই মন্তব্যে প্রভাবিত হওয়ায় সেই সময় একলা হয়ে যান সাক্ষী। বজরং সাক্ষীকে জানান তিনি আদালতে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে মামলা করতে চান কি না। মামলার ভয়ে আরও পিছিয়ে যান সাক্ষী। প্রতিবাদ শেষ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না।
রাত একটার সময় সাংবাদিক বৈঠক করে অনুরাগ জানান, সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। ব্রিজভূষণকে আর কুস্তি সংস্থার দৈনন্দিন কার্যকলাপ দেখতে দেওয়া হবে না। একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি দায়িত্বে থাকবে। তখনই সাক্ষী বুঝতে পেরেছিলেন বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। তাঁদের নিয়ে অন্য ধরনের ‘খেলা’ হয়েছে। মাসের পর মাস, সপ্তাহের পর সপ্তাহ যেতেও পর্যবেক্ষণ কমিটি কিছুই করেনি। সেই কমিটির মেরি কমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সাক্ষী বর্ণনা দিয়েছেন, কী ভাবে যোগেশ্বর দত্ত তাঁর চোখে ‘বিগ্রহ’ থেকে স্রেফ সাধারণ মানুষ হয়ে গিয়েছেন।
এই মুহূর্তে ব্রিজভূষণ আর ক্ষমতায় নেই। কিন্তু নির্বাচনে জিতেছেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিংহ। সংস্থা চালাচ্ছেন তিনিই। তাই লড়াই এখনও থামেনি সাক্ষীর। বিনেশ নিজের মতো করে রাজনীতির ময়দানে লড়লেও সাক্ষী কুস্তির ম্যাটের মতোই এই ‘আখড়া’ থেকে পিছু হটতে চান না। তিনি বজরং এবং বিনেশকেও রেয়াত করেননি বইয়ে। লিখেছেন, স্রেফ লোভের কারণে এই আন্দোলন থেকে সরে গিয়েছেন দুই কুস্তিগির। শেষে সাক্ষীই লিখেছেন, “কুস্তিতে দুটো ভাগ হয়। প্রথম পর্বে আমি পিছিয়ে রয়েছি। স্কোর আমার বিপরীতে। ঘড়ির কাঁটা ঘুরে চলেছে। কিন্তু আমি শেষ হয়ে যাইনি। কুস্তির ম্যাটে এই পরিস্থিতি থেকে আগেও জিতেছি। আবার জিতব। দ্বিতীয় পর্ব এখনও বাকি।”